ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সন্তান প্রসব করে হাসপাতালেই পরীক্ষা দিলেন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন ঈশা আলম (১৯)। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও কোনোদিন পড়ালেখা থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। বিয়ের পর গর্ভাবস্থায়ও নিয়েছেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। আর সন্তান জন্মদানের পরও পরিবার ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এই অদম্য শিক্ষার্থী। তাঁর এমন সাহসিকতায় বিস্মিত শিক্ষকরাও, কামনা করছেন ঈশার সর্বাঙ্গীণ সফলতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার পশ্চিম কাশাভোগ এলাকার মাহবুবুর রহমান তুষারের স্ত্রী ঈশা আলম পড়াশোনা করছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজে। তিনি চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ।

গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর শুক্রবার রাত ১১টার দিকে প্রসব বেদনা ওঠে। ওই রাতে তাঁকে শহরের বেসরকারি নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

তবে রোববার ছিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। সন্তান জন্মের মাত্র একদিন পর এমন অবস্থায় কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবেন—এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান ঈশা ও তাঁর পরিবার। পরে বিষয়টি লিখিতভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে, হাসপাতালের শয্যাতেই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়ম মেনে ক্লিনিকের একটি কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেন ঈশা। এ সময় সদ্যজাত কন্যাটি ছিল তার দাদির কোলে।

ঈশা আলম বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে বড় কিছু হব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, পরিবারকে সাহায্য করব। বিয়ের পর গর্ভধারণ করি আর তখনই পরীক্ষার সময় আসে। আমি মনোবল হারাইনি। একটি পরীক্ষা দেওয়ার পরই কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এরপরও আমি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পরিবারের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় তা সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল না হারালে প্রত্যেকটি মেয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

ঈশার স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার বলেন, ও বিয়ের পর থেকেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চেয়েছে। আমরাও সেটা গুরুত্ব দিয়েছি। গর্ভাবস্থায়ও ও পরীক্ষা দিয়েছে, সন্তান জন্মের একদিন পরেও পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। আমরা শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চাই ঈশা তার স্বপ্নে পৌঁছাক।

সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াজেদ কামাল বলেন, মানবিক বিবেচনায় তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি। আবেদনের পর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে করে মেয়েটি স্বাচ্ছন্দ্যে পরীক্ষা দিতে পারে, এজন্য হাসপাতালে একজন শিক্ষিকা ও একজন নারী পুলিশ সদস্যের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী মা হওয়ার পরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়—এটাই তার বড় শক্তি। আমরা চাই সে যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সন্তান প্রসব করে হাসপাতালেই পরীক্ষা দিলেন

আপডেট সময় : ১০:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন ঈশা আলম (১৯)। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও কোনোদিন পড়ালেখা থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। বিয়ের পর গর্ভাবস্থায়ও নিয়েছেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। আর সন্তান জন্মদানের পরও পরিবার ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এই অদম্য শিক্ষার্থী। তাঁর এমন সাহসিকতায় বিস্মিত শিক্ষকরাও, কামনা করছেন ঈশার সর্বাঙ্গীণ সফলতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার পশ্চিম কাশাভোগ এলাকার মাহবুবুর রহমান তুষারের স্ত্রী ঈশা আলম পড়াশোনা করছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজে। তিনি চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ।

গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর শুক্রবার রাত ১১টার দিকে প্রসব বেদনা ওঠে। ওই রাতে তাঁকে শহরের বেসরকারি নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

তবে রোববার ছিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। সন্তান জন্মের মাত্র একদিন পর এমন অবস্থায় কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবেন—এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান ঈশা ও তাঁর পরিবার। পরে বিষয়টি লিখিতভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে, হাসপাতালের শয্যাতেই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়ম মেনে ক্লিনিকের একটি কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেন ঈশা। এ সময় সদ্যজাত কন্যাটি ছিল তার দাদির কোলে।

ঈশা আলম বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে বড় কিছু হব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, পরিবারকে সাহায্য করব। বিয়ের পর গর্ভধারণ করি আর তখনই পরীক্ষার সময় আসে। আমি মনোবল হারাইনি। একটি পরীক্ষা দেওয়ার পরই কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এরপরও আমি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পরিবারের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় তা সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল না হারালে প্রত্যেকটি মেয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

ঈশার স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার বলেন, ও বিয়ের পর থেকেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চেয়েছে। আমরাও সেটা গুরুত্ব দিয়েছি। গর্ভাবস্থায়ও ও পরীক্ষা দিয়েছে, সন্তান জন্মের একদিন পরেও পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। আমরা শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চাই ঈশা তার স্বপ্নে পৌঁছাক।

সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াজেদ কামাল বলেন, মানবিক বিবেচনায় তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি। আবেদনের পর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে করে মেয়েটি স্বাচ্ছন্দ্যে পরীক্ষা দিতে পারে, এজন্য হাসপাতালে একজন শিক্ষিকা ও একজন নারী পুলিশ সদস্যের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী মা হওয়ার পরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়—এটাই তার বড় শক্তি। আমরা চাই সে যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।