যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইল। উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে আইডিএফ। গতকাল (রোববার, ২৯ জুন) একদিনে প্রাণ গেছে ক্ষুধার্ত গাজাবাসী ও শিশুসহ ৭২ জনের। যদিও মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর বলছে, অন্তত ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যুদ্ধবিরতি সবার জন্যই সর্বোত্তম বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার।
যতদিন যাচ্ছে, গাজায় আরও নৃশংসতা বাড়িয়েই চলেছে ইসরাইলি বাহিনী। হত্যা করছে খাবারের জন্য লাইনে অপেক্ষায় থাকা ক্ষুধার্ত গাজাবাসী ও শিশুদেরও। আহাজারিতে ভারি হচ্ছে উঠে পুরো ভূখণ্ড। আর কত নির্মমতার শিকার হতে হবে তাদের- প্রশ্ন ক্লান্ত ফিলিস্তিনিদের।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তারা মানুষ হত্যা কিছুতেই থামাচ্ছে না। আমার বাচ্চাদের কী দোষ? কী ভুলে তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হলো?’
অন্য একজন বলেন, ‘দখলদাররা এ বর্বরতা কবে থামাবে। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যেন তারা সরে যান এবং এই দখলদারিত্ব ও আমাদের বিরুদ্ধে চলমান অবিচার বন্ধ করেন।’
বর্তমানে আগ্রাসনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি গাজার উত্তরাঞ্চলে। আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। উত্তর গাজা এবং জাবালিয়া ছেড়ে শেখ রাদওয়ান এলাকার দিকে ছুটছেন অসহায় বাসিন্দারা। এর মধ্যে খাবার ও চিকিৎসা সংকটে তীব্র হচ্ছে বেঁচে থাকার লড়াই।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বৃষ্টির মতো গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। যুদ্ধবিমান, ট্যাংক এবং ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করছে। এরমধ্যে খাবার নেই, পানি নেই। বসতভিটাও ছাড়তে হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমাদের রক্ষার কেউ নেই।’
অন্য একজন বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে যুদ্ধের অবসান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের শিশুরা ক্ষুধার্ত। আর কত পালিয়ে বাঁচবো।’
এ অবস্থায় অররুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে ভয়াবহ মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার মন্তব্য করে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি সকলের জন্য সর্বোত্তম। গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি।
ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষ অনাহারে আছে, তারা অসুস্থ। অনেক খাদ্যসামগ্রী এবং বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। কিন্তু এটি মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এর ভূমিকা নয়। আমরা চিকিৎসা সরবরাহের জন্য সেখানে আছি। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি আর শান্তিই হতে পারে সকলের জন্য সর্বোত্তম ঔষধ।’
হামাসের হাতে আটক অন্তত ৫০ জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করে ২০ মাস ধরে চলমান এই আগ্রাসন অন্তত ৬০ দিনের জন্য বন্ধে যখন মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে; তখন বর্বরতা আরও বাড়িয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানকেও উপেক্ষা করছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্য একটি তাৎক্ষণিক হুমকি দূর করছি। প্রথমত হলো জিম্মিদের উদ্ধার করা। আরেকটি হলো, অবশ্যই হামাসকে পরাজিত করে গাজার সমস্যা সমাধান করা। আমি বিশ্বাস করি আমরা উভয় লক্ষ্য অর্জন করব ‘
এদিকে ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৭৮৫ জন ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে নিহতদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করতে না পারায়, সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণহানি ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে।