তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক নেতার পদকে বলা হয় দালাই লামা। পুরনো প্রথা মেনেই ১৫তম দালাই লামা নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন ১৪তম দালাই লামা- তেনজিং গ্যাতসো। তবে বর্তমান দালাই লামার ঘোষণা অনুযায়ী, চীনের বাইরে খুঁজতে হবে তার উত্তরসূরি। এতে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না চীনা সরকার। নতুন দালাই লামা বাছাই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত থাকছে আজকের এ প্রতিবেদনে।
৬ জুলাই বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার ৯০ তম জন্মদিন। যা উদযাপনে ৩০ জুন থেকে ভারতের ধর্মশালা ও তিব্বতের বৌদ্ধ মন্দিরসহ বিভিন্ন দেশে চলছে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ১৪তম দালাই লামা- তেনজিং গ্যাতসো’র মৃত্যুর পর, ১৫তম দালাই লামা কে নির্বাচিত হবেন তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। চীনা সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে ভক্তদের মাঝে শঙ্কাও বাড়ছে। কারণ ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সীমান্ত পেরিয়ে আজও ভারতেই রয়ে গেছেন দালাই লামা। এরমধ্যে শি-জিনপিং প্রশাসনও জানিয়েছে, তারাই যথাযথ প্রক্রিয়ায় বেছে নেবে নতুন দালাই লামা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘চীনা সরকার ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতি বাস্তবায়ন করে। ধর্মীয় বিষয় এবং তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে জীবন্ত বুদ্ধদের পুনর্জন্ম ব্যবস্থাপনার উপর বিধি জারি করেছে। ধর্মীয় আচার, ঐতিহাসিক রীতিনীতি এবং জাতীয় আইন ও বিধি অনুসারে নতুন দালাই লামা নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে।’
নতুন দালাই লামা বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে চীনের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারতে নির্বাসিত তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামা। জানান, তিনি পুনর্জন্ম নেবেন এবং তার উত্তরসূরি শনাক্ত করবে একমাত্র গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্ট। এর মধ্য দিয়ে ৬০০ বছরের পুরোনো প্রথা জারি থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বলেন, ‘আমি আবারও বলছি যে, গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্ট-ই পুনর্জন্মকে স্বীকৃতি দেয়ার বৈধতা রাখে। অন্য কারও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।’
তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের পরবর্তী আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা নির্বাচন করা প্রাচীন ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি প্রক্রিয়া। ঐতিহ্য অনুসারে, প্রতিটি দালাই লামাকে পুনর্জন্মের ধারাবাহিকতায় উত্তরসূরি হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। সেটি শুরু হয় মৃত্যুর পর। এর জন্য গঠিত হয় অনুসন্ধান কমিটি।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করার পর, তাদের নিশ্চিত করার জন্য একাধিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রার্থীরা সাধারণত পূর্ববর্তী দালাই লামার মৃত্যুর সময় জন্মগ্রহণকারী অল্পবয়সী ছেলে। একজন প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর, শিশুটিকে বৌদ্ধ দর্শন, ধর্মগ্রন্থ এবং নেতৃত্বের দায়িত্ব সম্পর্কে কঠোর শিক্ষা দেয়া শুরু হয়। যা তাদেরকে তিব্বতি জনগণের আধ্যাত্মিক এবং ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
ভিক্ষু থুপ্টেন এনজিওডুপ বলেন, ‘সাধারণত একজন দালাই লামা জীবিত থাকাকালীন তার পুনর্জন্ম নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। সেই আলোচনা কেবল তখনই আসে যখন তিনি মারা যান। কিন্তু চীনা সরকার দালাই লামার পুনর্জন্মে হস্তক্ষেপ করছে। সেই কারণেই বর্তমানে আলোচনা হচ্ছে।’
বর্তমান দালাই লামা- তেনজিং গ্যাতসো ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই তিব্বতের কিংহাই প্রদেশের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর বয়সে ১৩তম দালাই লামাদের পুনর্জন্ম হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪তম দালাই লামা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল তেনজিং গ্যাতসোকে। ২০২৫ সালের মার্চে প্রকাশিত ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’ বইতে দালাই লামা বলেছিলেন, চীনের বাইরে জন্মগ্রহণ করবেন তার উত্তরসূরি বা ১৫তম দালাই লামা।