সীমান্ত সড়কে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০৪:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে

তিন পার্বত্য জেলায় এক সড়কই পাল্টে দিচ্ছে ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার সীমান্ত জনপদের চেহারা। পাহাড়ের যোগাযোগ, কৃষি, বাণিজ্য আর শিক্ষায় তৈরি করেছে নতুন সম্ভাবনার আলো। সেনাবাহিনী বলছে, এ সড়ক ধরে সামনে এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে, বাড়াতে হবে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
তিন পার্বত্য জেলার উঁচু নিচু পাহাড় বেয়ে সীমান্তরেখা ধরে ছুটে চলেছে পিচ ঢালা এক সড়ক। যার একপাশে তাকালে ভারত-মিয়ানমার, অপর পাশে বাংলাদেশ।
সড়ক ধরে আগালে হাজার ফুট উচ্চতায় দেখা মিলে চাকমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, ম্রো-সহ নানা জনগোষ্ঠীর । ছোট পাড়াগুলো দেখতে যতটা সুন্দর, বসবাস ঠিক ততটাই কঠিন। এসব পাড়ার ৩০-৪০ কিলোমিটারে নেই কোনো বাজার, স্কুল কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক বদলে দিচ্ছে পার্বত্য জনপদের ভাগ্য আর ভবিষ্যৎ। সীমান্তের পাড়াগুলোতে প্রাণ এনে দিয়েছে এ সড়ক। বাসিন্দারা বলছে, আগে নৌপথ দিয়ে পাহাড় পেরিয়ে পায়ে হেঁটে কাছের বাজারে যেতে সময় লাগতো দুই থেকে তিনদিন। এখন লাগছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। জুমে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা, বিক্রি আর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাস্তা হওয়ার পর জায়গা জমির দাম বেড়ে গেছে। আগে কম ছিল। জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে।’
পাহাড় পেরিয়ে পাশের দেশে গিয়ে বাজার সদাই, ফসল বিক্রি ছিল এখানকার নৈমিত্তিক ঘটনা। সীমান্তের খুব কাছেই বাজারগুলোতে চোখে পড়ে ভিন দেশের লবণ, চিনি, চা-পাতাসহ নানা পণ্য। তবে সীমান্ত সড়কে পাল্টেছে সে চিত্র, এখানকার মানুষ পরিচিত হচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের সাথে।
পাহাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘একবার বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে তিনদিন চারদিন লেগে যেত। এক দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে আসা যাওয়া করতে পারছি।’
সড়কের কারণে পাহাড়ি ভূমির মূল্য বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ কেউ খুঁজছেন বিনিয়োগের সুযোগ। এক সময়কার পরিত্যক্ত ভূমি এখন বসতি। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তরুণরা গড়ছেন ফল-ফসলের বাগান।
পাহাড়ের তরুণদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আম বাগান, লিচু বাগান, কাঁঠাল বাগান, মানে করার মতো অনেক বাগান আছে। মানুষ এগুলো করে এখন এগিয়ে চলছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘আমরা এখন জুম চাষ করে ভালো ফসল উন্নতি করি। তারপর এখন এগুলো বিক্রিও করতে পারছি।’
বিশাল এ সীমান্তে কলেজ বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখনও স্বপ্নের মতো। তবে এবারই প্রথমবারের মতো চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছে সেনাবাহিনী। নতুন বই হাতে, এখানকার প্রজন্ম নিচ্ছে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পানি পাড় হয়ে তারপর আসতে হতো। এখন তো সীমান্ত সড়ক, ব্রিজ হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘আগি শহরে আত্মীয়স্বজনের কাছে গিয়ে পড়াশোনা করতাম। অনেক কষ্ট হতো।’
সেনাবাহিনী বলছে, পাহাড়ের কৃষি, অর্থনীতি আর বাণিজ্যে শক্ত ভিত গড়ে দিচ্ছে সীমান্ত সড়ক। আছে পর্যটনে নতুন নতুন স্পট তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশের এ ভূমিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান সেনাবাহিনীর।
৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামসুল আলম বলেন, ‘বিজিবিসহ অন্যান্য যারা আনপ্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে, তারা সেই জায়গায় সীমান্ত বরাবর এখন টহল দিচ্ছে। উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসার রয়েছে। যারা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে তারাও এখন মাঠে যাবে।’
২০ ইসিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসিফ তানজিল বলেন, ‘যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্টাবলিশ হওয়ার কারণে পর্যটনের বিভিন্ন স্পট আস্তে আস্তে উন্মোচিত হবে। আর সেটা আমাদের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করবে।’
পাহাড় এখন এগিয়ে চলার ধ্বনি। সীমান্ত সড়ক শুধু উন্নয়নের গল্প নয়, পাহাড়ি জাতির আত্মবিশ্বাসে পথচলার বাতিঘর।