অবশেষে আলোর মুখ দেখলো ‘বিগ বিউটিফুল বিল’

- আপডেট সময় : ০৩:৪৯:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে

নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে চূড়ান্ত বাধা পার করলো আলোচিত ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখলো রিপাবলিকানদের কর ছাড় ও ব্যয় বিল। আজ (শুক্রবার, ৪ জুন) ট্রাম্পের স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হচ্ছে। এটিকে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা হাকিম জেফ্রিসের রেকর্ড টানা প্রায় নয় ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতায় বিলটি পাসে বিলম্বিত হয়।
আলোচিত-সমালোচিত যুক্তরাষ্ট্রের কর হ্রাস ও সরকারি ব্যয়ের বিশাল প্যাকেজটি অবশেষে চূড়ান্ত বাধা পেরিয়েছে। এর আগে উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি নিয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা বিতর্কের পর সমান ভোট পড়ে। টাইব্রেকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের ভোটে সেই বাধা অতিক্রম করে। বিলটি সংশোধনের সুযোগ রেখে পরবর্তী ধাপে পাঠানো হয় নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে।
রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের বিলটি পাসে বেগ পেতে হয়। প্রায় ২৯ ঘণ্টা বিতর্কের পর ২১৮ ও ২১৪ ভোটের ব্যবধানে পাস হয় ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিল। যার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় একটি এজেন্ডা বাস্তবায়ন হলো। পরিষদের ২১২ জন ডেমোক্র্যাটিক সদস্য বিলটির বিরোধিতা করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন রিপাবলিকান দুই সদস্য। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, বিলটি নিয়ে অতিরঞ্জিত ও নেতিবাচক কথা ছড়িয়েছে। তার মতে, এতে লাভবান হবে মার্কিন জনগণ।
বিলটি আইনে পরিণত হতে এখন শুধু ট্রাম্পের স্বাক্ষর প্রয়োজন। শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে এতে সই করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। বিলটিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউজে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের সব সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন জনগণ আগের চেয়ে আরও ধনী, নিরাপদ ও গর্বিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ট্রাম্প প্রশাসন অসাধারণ কাজ করছে। যদিও অবৈধ অভিবাসীদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের মাত্রা বেড়েছিল। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। এখন এই বিল পাসের মাধ্যমে সবাই গর্ব বোধ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ঘিরে হোয়াইট হাউজের ওপর দিয়ে যখন বিমান বহর উড়ে যাবে তখন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে এই বিলে স্বাক্ষর করা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট বিলে খাদ্য সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে ভর্তুকি। এতে স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে চলে যাবে কোটি কোটি মানুষ। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তাসহ উচ্চ আয়ের মার্কিন নাগরিকরা করছাড়ের সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে অভিবাসন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়বে। বিলটি মূলত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের কর ছাড়ের সম্প্রসারিত একটি রূপ।
বিলটি আইনের পরিণত হলে ফেডারেল সরকার ৫ লাখ কোটি ডলার ঋণ নিতে হবে। যা আগামী ১০ বছরে মার্কিন জাতীয় ঋণে আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার যুক্ত হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশটির জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩৬ লাখ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলটি রিপাবলিকানদের জন্য বড় জয়। এর মধ্য দিয়ে কর ছাড়ের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় মেয়াদের ট্রাম্পের একটি বড় মাইলফলক এটি।
এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে টানা ৮ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট বক্তব্য রেখে দীর্ঘ ভাষণের রেকর্ড গড়েছেন শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য হাকিম জেফরিস। ভোর ৪টা ৫৩ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে শেষ করেন দুপুর ১টার ৩৮ মিনিটে। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই চূড়ান্ত ভোট দেন রিপাবলিকান সদস্যা। দীর্ঘ বক্তৃতায় জেফরিস বিলের তীব্র সমালোচনা করেন।
ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিলটিকে চূড়ান্ত করতে মাসব্যাপী দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে রিপাবলিকানদের। মে মাসে প্রথম দফায় পরিষদে বিলটি মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে উত্থাপিত হয়। পরে সেটি সিনেটে আরেক দফায় কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। অবশেষে প্রতিনিধি পরিষদে চার ভোটের ব্যবধানে চূড়ান্ত বাধা উতরে গেলো ট্রাম্পের বহুল প্রত্যাশিত বাজেট বিল।