২৪ এর রক্তাক্ত জুলাই, দেশে তখন তীব্র গণজাগরণ। ছাত্রজনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ। সেসময় দূরে থেকেও থেমে থাকেননি বাংলাদেশি প্রবাসীরা। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিরা একজোট হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এনে দেন নতুন মাত্রা। রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করাসহ নানা কার্যক্রম স্বৈরাচারী শাসককে আরো দুর্বল করে ফেলে। মালয়েশিয়ার লাখো প্রবাসী কণ্ঠ মেলান দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে।
২০২৪ সালের জুলাই। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ যখন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে তখন দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয় স্বৈরাচারী শাসক। বাড়তে থাকে রক্তপাত আর হতাহতের সংখ্যা। যার ছায়া পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির হৃদয়ে। দেশে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ, তখন বিশ্বের বড় বড় শহরেও প্রবাসীরা ছিলেন সোচ্চার, সক্রিয় এবং প্রতিবাদী ।
আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার প্রবাসীরা নেমে আসেন রাস্তায়। মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের জন্য বিক্ষোভ করা আইনগতভাবে সীমাবদ্ধ, তারপরও প্রবাসীরা নিঃশব্দ প্রতিবাদের পথ বেছে নেন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে যান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। আর এতে যোগ দেন অন্যান্য প্রবাসীরাও ।
তারা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকার তার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেয়। এতে করে প্রবাসীদের মাঝে এক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একজন জানান, এ আন্দোলনে যখন দেখলাম সরকার নির্বিচারে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা শুরু করলো তখন আমরা আসলে এটা মেনে নিতে পারিনি। আমাদের অনেক হুমকি এসেছে। কিন্তু যতই হুমকি আসুক আমরা তো আমাদের ভাই বোনদের মুখ দেখে আসলে চুপ থাকতে পারিনি।’
ঝুঁকি নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সভা-সেমিনারসহ নানা ভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা । ইন্টারনেট শাট ডাউন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবাসীদের আরো ক্ষুব্ধ করে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে এক বিরল কৌশল গ্রহণ করেন তারা, দেওয়া হয় রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা। যা সরাসরি পতিত সরকারের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে । এ কারণে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স যায় দেশে ।
প্রবাসীরা জানান, আমরা রেমিট্যান্স শাট ডাউনের মাধ্যমে যে অবদান রেখেছি বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে তার মূল্যায়ন আমরা পাচ্ছি না। শাট ডাউনে সাড়া দিয়ে সকল প্রবাসী বাংলাদেশে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতা যে যুদ্ধে নেমেছিল তাদের ঐকমত্য পোষণ করে প্রবাসীরাও শাট ডাউনের ডাক দিয়েছিল।
মহান স্বাধীনতা থেকে ২৪ এর অভ্যুত্থান, প্রবাসীরা প্রমাণ করেছেন তারা কেবল রেমিট্যান্স যোদ্ধা নন ইতিহাস পাল্টে দেওয়ারও নায়ক । প্রবাসীরা বলছেন, জুলাই কেবল ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান নয় বরং নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নও ।