ঢাকা ০১:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জুলাই সৈনিকদের বাংলাদেশ নিয়ে আশার বাস্তবায়ন কতটা?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:০১:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পুরান ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা একাকার হয়ে জনতা যখন নামলো তখন প্রাণ ঝরলো ঠিকই, মুক্তি পেল নতুন এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ। কিন্তু কেমন আছেন এসব এলাকার জুলাই যোদ্ধারা? বাংলাদেশ নিয়ে আশার বাস্তবায়নই-বা কতটা?

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাজিদের বোন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ওর ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি। তুই এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলি। আর কয়টা দিন থাকতি।’ যে অশ্রু কান্না হয়ে ঝরে সাজিদের বোনের, তার সান্ত্বনা কিসে?

সাজিদের বোন বলেন, ‘আম্মুর কাছে বলতো, আম্মু আজকে পোলাও রান্না করো। বা আজকে পোলাও রান্না করছো একটু বেশি করে রান্না করো। মাংস রান্না করছো, একটু বেশি করে রান্না করো। আম্মু এখন আর এগুলো রান্নার সাহসই পায় না। কেউ তো বলে না আম্মু ভাতটা এট বেশি করে রান্না করো।’

মায়ের কাছে আবদার যে সাজিদের, হার মানলো কি মৃত্যুর কাছে। জুলাই আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদের বোন এভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন একমাত্র ভাইকে হারিয়ে। যে ভাইকে কেড়ে নিয়েছে জুলাই, বছরান্তে মনে পড়ে কতটা?

সাজিদের বোন বলেন, ‘ও সাহসী, আমরা তো এত সাহসী নই। আমরা ভীতু মানুষ। যখন দেখলাম ওর এই অবস্থা, তখন পরের দিনই উঠে আম্মুকে বললাম যে, আম্মু এই ছেলেকে আটকায়া রাখতে পারবা না।’

২০২৪ এর জুলাইয়ে হওয়া গণঅভ্যুত্থান যেমন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকায়, তেমনি পুরান ঢাকাও হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আর বেশ কয়েকটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ নেমে আসেন প্রধান সড়ক আর অলিগলিতে। এক কাতারে শামিল হয়ে বুলেটে আহত হয়েছেন নাম না জানা বহু মানুষ, শহীদ অন্তত ১৭ জনের বেশি।

শিক্ষার্থী নুরুন্নবী যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ছিলেন। যাকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়। স্মরণ করছিলেন তাদের সঙ্গে থাকা সহযাত্রীদের।

নুরুন্নবী বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে জুমার নামাজের পরবর্তী সময়ই পুরান ঢাকার এই জায়গাটা একদম ভরে গিয়েছিল। বলা যায় যে, ওইদিন পুরান ঢাকা স্বাধীন হয়ে গেছিলো।’

তবে যে জুলাই আহত করেছে অনেককে। বছর পেরিয়ে এখনও ব্যথা নিয়ে ঘুরতে হয়, তাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হলো? জুলাই ঘোষণা না হওয়াসহ তার কৃতিত্ব নিয়ে যখন অন্যদলগুলো টানাটানি করছে তা নিয়ে হতাশ তরুণরা।

তৌহিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যেমন ছাত্রলীগ এককভাবে সবকিছু দখল করেছিল। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এটা সম্ভব হবে না।’

মাসুদ নামের এক তরুণ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের যেমন গণতান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগানো দরকার ছিল এবং সবচেয়ে বড় কথা যেটা, তার যে যে বিষয়গুলোতে আসলে ফোকাস করা উচিত ছিল সে বিষয়গুলোতে আসলে করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিশোধ ব্যক্তিগতভাবে ভাগ করে নিচ্ছে। কিন্তু জুলাইয়ের ক্রেডিট কোনো একক দলের ছিল না।’

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক স্বর্ণা আক্তার চোখের সামনে যাদের লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন, তাদের বিচার আর সংস্কার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে জানান, কোনো স্বার্থের জন্য তারা আন্দোলনে যোগ দেননি। যদিও এখন দেখছেন স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনকারী হিসেবে, চোখের সামনে ভাইয়ের মৃত্যু দেখা একজন বোন হিসেবে আমি তেমন কিছু দেখিনি এখনও।’

কিন্তু এই যে জুলাই তাতে অন্যতম দাবি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বৈরতন্ত্র থাকবে না। সেটা করা গেল কতটা প্রশ্ন ছিল ছাত্রনেতার কাছে?

ছাত্রনেতা রিয়াজুল বলেন, ‘সুন্দর কোড অব কন্ডাক্ট যদি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয় যে, যেন এই নিয়মগুলো মেনে একজন শিক্ষার্থীকে রাজনীতি করতে হবে তাহলে মনে করি নতুন করে কোনো দল ওইভাবে স্বৈরাতান্ত্রিকভাবে ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে সাহস পাবে না।’

পুরান ঢাকার মধ্যে কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়। ইকরাম, জিহাদ, উমর ও তাহিদুল ইসলাম নামে চার শিক্ষার্থী শহীদ হন। এর মধ্যে উমর ও ইকরাম শহীদ হন লক্ষ্মীবাজার মোড়ে। তার বন্ধুরা জানাচ্ছিলেন, ১৯ জুলাই একসঙ্গেই ছিলেন লক্ষ্মীবাজার মোড়ে। মুহূর্তেই একটি বুলেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেড়িয়ে যায় উমরের শরীর। আরেকটি বুলেট এসে মাথা ভেদ কর ইকরামের।

জিহাদ বলেন, ‘আমি যখন ওর মরদেহটা পাই তখন ওর বুকে কাপড় দিয়ে বাঁধা। বুকে তিনটা ছিদ্র ছিল। ওর যে বুলেটটা লাগে, সেটা দুইজনকে আহত করার পর ওর বুকে লাগে। বুকে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়।’

তাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরে যেমন একের উপর এক মরদেহ পড়েছিল, সেরকম মরদেহের স্তূপ আমরা নিজের চোখে দেখলাম।’

কবি নজরুলের মতোই পাশে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা সেদিন লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেছিলেন। এতে এ প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষার্থী শহীদ হন।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মৃত্যুকে একদম কাছে থেকে দেখা। ওই জায়গা থেকে আরও সামনে এগিয়ে যাই তারপর পুলিশ ধাওয়া করে। পরে আমরা দৌড় দেয়ার কারণে আমার পায়ে এবং পিঠে গুলি লাগে।’

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠন একীভূত হয়ে অংশ নেন গণঅভ্যুত্থানের এ আন্দোলনে। দলীয় সিদ্ধান্তে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা বলছিলেন- গত ১৭ বছরের তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথা।

ছাত্রসংগঠনের একজন নেতা বলে, ‘আমাদের প্রায় ১০ জনের উপর গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে।’

৫ আগস্টের পর কি আড়ালেই রয়ে গেল এসব প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তি। প্রশ্ন ছিল নাহিদ ইসলামের কাছে। জানান, দ্রুত প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ সম্ভব হয়নি । তবে তাদের দাবি পূরণে কিছু কাজ হয়েছে বলে জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে এত প্রেক্ষাপট যেভাবে পরিবর্তন হয়েছে সরকারে থাকা আমাদের। সে জায়গায় আসলে সবার সঙ্গে সেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আমাদের তো কোনো সাংগঠনিক কাঠামো আসলে ছিল না। পুরান ঢাকায় কিন্তু আমাদের এনসিপির কার্যক্রম চলমান আছে। আমি সরকারে থাকা অবস্থায় কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি দাওয়ার সঙ্গে এনগেজ হয়েছি।’

যে আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে একীভূত ছিল পুরান ঢাকাও। যার ফলেই পাওয়া গেল ৫ আগস্ট, এক নতুন বাংলাদেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই সৈনিকদের বাংলাদেশ নিয়ে আশার বাস্তবায়ন কতটা?

আপডেট সময় : ০৪:০১:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

পুরান ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা একাকার হয়ে জনতা যখন নামলো তখন প্রাণ ঝরলো ঠিকই, মুক্তি পেল নতুন এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ। কিন্তু কেমন আছেন এসব এলাকার জুলাই যোদ্ধারা? বাংলাদেশ নিয়ে আশার বাস্তবায়নই-বা কতটা?

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাজিদের বোন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ওর ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি। তুই এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলি। আর কয়টা দিন থাকতি।’ যে অশ্রু কান্না হয়ে ঝরে সাজিদের বোনের, তার সান্ত্বনা কিসে?

সাজিদের বোন বলেন, ‘আম্মুর কাছে বলতো, আম্মু আজকে পোলাও রান্না করো। বা আজকে পোলাও রান্না করছো একটু বেশি করে রান্না করো। মাংস রান্না করছো, একটু বেশি করে রান্না করো। আম্মু এখন আর এগুলো রান্নার সাহসই পায় না। কেউ তো বলে না আম্মু ভাতটা এট বেশি করে রান্না করো।’

মায়ের কাছে আবদার যে সাজিদের, হার মানলো কি মৃত্যুর কাছে। জুলাই আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদের বোন এভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন একমাত্র ভাইকে হারিয়ে। যে ভাইকে কেড়ে নিয়েছে জুলাই, বছরান্তে মনে পড়ে কতটা?

সাজিদের বোন বলেন, ‘ও সাহসী, আমরা তো এত সাহসী নই। আমরা ভীতু মানুষ। যখন দেখলাম ওর এই অবস্থা, তখন পরের দিনই উঠে আম্মুকে বললাম যে, আম্মু এই ছেলেকে আটকায়া রাখতে পারবা না।’

২০২৪ এর জুলাইয়ে হওয়া গণঅভ্যুত্থান যেমন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকায়, তেমনি পুরান ঢাকাও হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আর বেশ কয়েকটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ নেমে আসেন প্রধান সড়ক আর অলিগলিতে। এক কাতারে শামিল হয়ে বুলেটে আহত হয়েছেন নাম না জানা বহু মানুষ, শহীদ অন্তত ১৭ জনের বেশি।

শিক্ষার্থী নুরুন্নবী যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ছিলেন। যাকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়। স্মরণ করছিলেন তাদের সঙ্গে থাকা সহযাত্রীদের।

নুরুন্নবী বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে জুমার নামাজের পরবর্তী সময়ই পুরান ঢাকার এই জায়গাটা একদম ভরে গিয়েছিল। বলা যায় যে, ওইদিন পুরান ঢাকা স্বাধীন হয়ে গেছিলো।’

তবে যে জুলাই আহত করেছে অনেককে। বছর পেরিয়ে এখনও ব্যথা নিয়ে ঘুরতে হয়, তাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হলো? জুলাই ঘোষণা না হওয়াসহ তার কৃতিত্ব নিয়ে যখন অন্যদলগুলো টানাটানি করছে তা নিয়ে হতাশ তরুণরা।

তৌহিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যেমন ছাত্রলীগ এককভাবে সবকিছু দখল করেছিল। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এটা সম্ভব হবে না।’

মাসুদ নামের এক তরুণ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের যেমন গণতান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগানো দরকার ছিল এবং সবচেয়ে বড় কথা যেটা, তার যে যে বিষয়গুলোতে আসলে ফোকাস করা উচিত ছিল সে বিষয়গুলোতে আসলে করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিশোধ ব্যক্তিগতভাবে ভাগ করে নিচ্ছে। কিন্তু জুলাইয়ের ক্রেডিট কোনো একক দলের ছিল না।’

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক স্বর্ণা আক্তার চোখের সামনে যাদের লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন, তাদের বিচার আর সংস্কার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে জানান, কোনো স্বার্থের জন্য তারা আন্দোলনে যোগ দেননি। যদিও এখন দেখছেন স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনকারী হিসেবে, চোখের সামনে ভাইয়ের মৃত্যু দেখা একজন বোন হিসেবে আমি তেমন কিছু দেখিনি এখনও।’

কিন্তু এই যে জুলাই তাতে অন্যতম দাবি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বৈরতন্ত্র থাকবে না। সেটা করা গেল কতটা প্রশ্ন ছিল ছাত্রনেতার কাছে?

ছাত্রনেতা রিয়াজুল বলেন, ‘সুন্দর কোড অব কন্ডাক্ট যদি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয় যে, যেন এই নিয়মগুলো মেনে একজন শিক্ষার্থীকে রাজনীতি করতে হবে তাহলে মনে করি নতুন করে কোনো দল ওইভাবে স্বৈরাতান্ত্রিকভাবে ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে সাহস পাবে না।’

পুরান ঢাকার মধ্যে কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়। ইকরাম, জিহাদ, উমর ও তাহিদুল ইসলাম নামে চার শিক্ষার্থী শহীদ হন। এর মধ্যে উমর ও ইকরাম শহীদ হন লক্ষ্মীবাজার মোড়ে। তার বন্ধুরা জানাচ্ছিলেন, ১৯ জুলাই একসঙ্গেই ছিলেন লক্ষ্মীবাজার মোড়ে। মুহূর্তেই একটি বুলেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেড়িয়ে যায় উমরের শরীর। আরেকটি বুলেট এসে মাথা ভেদ কর ইকরামের।

জিহাদ বলেন, ‘আমি যখন ওর মরদেহটা পাই তখন ওর বুকে কাপড় দিয়ে বাঁধা। বুকে তিনটা ছিদ্র ছিল। ওর যে বুলেটটা লাগে, সেটা দুইজনকে আহত করার পর ওর বুকে লাগে। বুকে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়।’

তাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরে যেমন একের উপর এক মরদেহ পড়েছিল, সেরকম মরদেহের স্তূপ আমরা নিজের চোখে দেখলাম।’

কবি নজরুলের মতোই পাশে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা সেদিন লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেছিলেন। এতে এ প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষার্থী শহীদ হন।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মৃত্যুকে একদম কাছে থেকে দেখা। ওই জায়গা থেকে আরও সামনে এগিয়ে যাই তারপর পুলিশ ধাওয়া করে। পরে আমরা দৌড় দেয়ার কারণে আমার পায়ে এবং পিঠে গুলি লাগে।’

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠন একীভূত হয়ে অংশ নেন গণঅভ্যুত্থানের এ আন্দোলনে। দলীয় সিদ্ধান্তে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা বলছিলেন- গত ১৭ বছরের তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথা।

ছাত্রসংগঠনের একজন নেতা বলে, ‘আমাদের প্রায় ১০ জনের উপর গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে।’

৫ আগস্টের পর কি আড়ালেই রয়ে গেল এসব প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তি। প্রশ্ন ছিল নাহিদ ইসলামের কাছে। জানান, দ্রুত প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ সম্ভব হয়নি । তবে তাদের দাবি পূরণে কিছু কাজ হয়েছে বলে জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে এত প্রেক্ষাপট যেভাবে পরিবর্তন হয়েছে সরকারে থাকা আমাদের। সে জায়গায় আসলে সবার সঙ্গে সেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আমাদের তো কোনো সাংগঠনিক কাঠামো আসলে ছিল না। পুরান ঢাকায় কিন্তু আমাদের এনসিপির কার্যক্রম চলমান আছে। আমি সরকারে থাকা অবস্থায় কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি দাওয়ার সঙ্গে এনগেজ হয়েছি।’

যে আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে একীভূত ছিল পুরান ঢাকাও। যার ফলেই পাওয়া গেল ৫ আগস্ট, এক নতুন বাংলাদেশ।