ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যুদ্ধ থামালে সরকার ভাঙার আশঙ্কায় নেতানিয়াহু

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জোট সরকার ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় নেতানিয়াহু পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হলে নেতানিয়াহু প্রশাসনের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়বে, এমনকি ক্ষমতাচ্যুতও হতে পারেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। বিপরীতে মুখে পর্যালোচনার কথা বললেও হামাস মনে করে, যুদ্ধ বন্ধের কোনো আগ্রহই নেই নেতানিয়াহুর।

ইরান-ইসরাইল অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সাময়িক নয়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি হামাসের।

অন্যদিকে পর্যালোচনার দোহাই দিয়ে বারবার অস্ত্রবিরতির শর্ত নিয়ে জলঘোলা করছে ইসরাইল। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলছে গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা আসলে কতটা?

ব্রিটিশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা অস্কফার্ম গ্লোবালের প্রতিবেদনের বরাতে আলজাজিরা বলছে, গেল মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে এসে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেছে সাড়ে ৬শ’ ফিলিস্তিনির। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজার। এছাড়াও এই নির্দিষ্ট সময়ে গাজার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা।

গেল দুই দিনে অধিকৃত পশ্চিমতীরে ৩৯ শিশুসহ আটক করা হয়েছে ৬৬০ ফিলিস্তিনিকে। একই সময়ের ব্যবধানে ইসরাইলের হামলায় প্রাণ গেছে ৩০০ এর বেশি মানুষের। ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত গেল সাত দিনে প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছেন উপত্যকাটির বাসিন্দারা। এমন পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ২৪ জুন ইরান-ইসরাইল অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর নেতানিয়াহুর ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে গাজা যুদ্ধ।

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব থেকে বারবার পিছিয়ে আসছে ইসরাইল-হামাস উভয়পক্ষই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরের জন্য প্রস্তত নন। বিশেষ করে দেশটিতে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের নেতারাও চান না পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ক্ষমতাচ্যুত হলে, জোট আর মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে নিয়েই ডুববেন নেতানিয়াহু।

ইসরাইলে কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত জন এলেন বলেন, ‘এর আগে যখন ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতির শর্তে দুপক্ষ সম্মত হয়েছিল, বিবিই প্রথম তা ভঙ্গ করেন। এ থেকে স্পষ্ট, তিনি এই সমঝোতার জন্য প্রস্তুত নন।’

পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ গাজা থেকে সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে বিনিময়ে বাকি জিম্মিদের ফেরত আনার ব্যাপারেও তার কেবিনেটের প্রস্তুতি নেই বলেও মত অনেকের।

বিপরীতে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একাধিক গণমাধ্যম বলছে, হামাসের শীর্ষ নেতারা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি ভালোভাবেই আঁচ করতে পেরেছেন। এ কারণে সরাসরি বাতিল না করে পর্যালোচনা করছেন ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব। যদিও হামাস বরাবরই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বিরতির পক্ষে।

বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিলেই আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে গুরুত্ব দিতে পারেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। এতে করে কিছুটা সহজ অবস্থানও নিতে পার হামাস। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে আদৌ কিছু ভাবছেন কী না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুদ্ধ থামালে সরকার ভাঙার আশঙ্কায় নেতানিয়াহু

আপডেট সময় : ০৩:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

জোট সরকার ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় নেতানিয়াহু পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হলে নেতানিয়াহু প্রশাসনের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়বে, এমনকি ক্ষমতাচ্যুতও হতে পারেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। বিপরীতে মুখে পর্যালোচনার কথা বললেও হামাস মনে করে, যুদ্ধ বন্ধের কোনো আগ্রহই নেই নেতানিয়াহুর।

ইরান-ইসরাইল অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সাময়িক নয়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি হামাসের।

অন্যদিকে পর্যালোচনার দোহাই দিয়ে বারবার অস্ত্রবিরতির শর্ত নিয়ে জলঘোলা করছে ইসরাইল। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলছে গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা আসলে কতটা?

ব্রিটিশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা অস্কফার্ম গ্লোবালের প্রতিবেদনের বরাতে আলজাজিরা বলছে, গেল মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে এসে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেছে সাড়ে ৬শ’ ফিলিস্তিনির। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজার। এছাড়াও এই নির্দিষ্ট সময়ে গাজার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা।

গেল দুই দিনে অধিকৃত পশ্চিমতীরে ৩৯ শিশুসহ আটক করা হয়েছে ৬৬০ ফিলিস্তিনিকে। একই সময়ের ব্যবধানে ইসরাইলের হামলায় প্রাণ গেছে ৩০০ এর বেশি মানুষের। ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত গেল সাত দিনে প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছেন উপত্যকাটির বাসিন্দারা। এমন পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ২৪ জুন ইরান-ইসরাইল অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর নেতানিয়াহুর ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে গাজা যুদ্ধ।

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব থেকে বারবার পিছিয়ে আসছে ইসরাইল-হামাস উভয়পক্ষই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরের জন্য প্রস্তত নন। বিশেষ করে দেশটিতে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের নেতারাও চান না পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ক্ষমতাচ্যুত হলে, জোট আর মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে নিয়েই ডুববেন নেতানিয়াহু।

ইসরাইলে কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত জন এলেন বলেন, ‘এর আগে যখন ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতির শর্তে দুপক্ষ সম্মত হয়েছিল, বিবিই প্রথম তা ভঙ্গ করেন। এ থেকে স্পষ্ট, তিনি এই সমঝোতার জন্য প্রস্তুত নন।’

পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ গাজা থেকে সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে বিনিময়ে বাকি জিম্মিদের ফেরত আনার ব্যাপারেও তার কেবিনেটের প্রস্তুতি নেই বলেও মত অনেকের।

বিপরীতে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একাধিক গণমাধ্যম বলছে, হামাসের শীর্ষ নেতারা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি ভালোভাবেই আঁচ করতে পেরেছেন। এ কারণে সরাসরি বাতিল না করে পর্যালোচনা করছেন ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব। যদিও হামাস বরাবরই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বিরতির পক্ষে।

বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিলেই আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে গুরুত্ব দিতে পারেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। এতে করে কিছুটা সহজ অবস্থানও নিতে পার হামাস। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে আদৌ কিছু ভাবছেন কী না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।