জুলাইয়ে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজধানীর মাতুয়াইল, শনির আখড়া, দনিয়া এলাকা। এসময় মূল সড়কের দু’পাশের গলিগুলো রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতার জন্য। বাসিন্দাদের কাছে সেসময়ে ঘটা নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দুর্বিষহ দিনগুলো স্মৃতির পাতায় দগদগে ক্ষত হয়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করতে থাকলে প্রতিরোধের ঢাল হয়ে ছাত্রদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এখানকার অধিবাসীরা। ফলস্বরূপ জুলাই বিপ্লবের স্ট্যালিনগ্রাদে পরিণত হয় এসব এলাকা।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেছেন শিক্ষার্থী। শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এদিকে শাহবাগ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তবে শাহবাগ মোড় থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মোড়ে জড়ে হয়ে তাদের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করতে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জুলাইয়ে রাজধানীর শনির আখড়া, দনিয়া এলাকার প্রতিটি বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ, টিয়ার গ্যাসের চোখ ঝাঝানি, শটগান, ছররা গুলি, আহতের রক্ত, শহীদদের জীবন বলিদানের ঘটনা বছর পার হতে চললেও এখানকার বাসিন্দা ও ছাত্র-জনতার স্মৃতিতে দগদগে ক্ষত হয়ে আছে। হত্যাযজ্ঞের সেই দিনগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল এখানকার আন্দোলনকারীদের কাছে।
স্থানীয়রা জানান, এ এলাকায় স্নাইপার হামলা থেকে শুরু করে টিয়ার শেল সবধরনের হামলা হয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপরে। অনেককে বাসা থেকে রাতের আধারে ধরে নিয়ে গিয়েও হত্যা করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ ছাড়া স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনকারীদের এসব গলিতে আশ্রয় নেয়ায় তাদেরকে শনাক্ত করতে রাস্তাগুলোতে চালানো হতো ড্রোন। এজন্য তারা বসতবাড়িগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া উপেক্ষা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ছাত্ররা।
রাজপথের প্রতিরোধে শান দিতে রাস্তার দু’ধারের মহল্লার গলিগুলো যেন ব্যবহৃত হয়েছিল টানেল হিসেবে। ছাত্র-জনতার এ রণকৌশলে জড়িয়ে পড়েছিল স্থানীয় বাসিন্দারাও, যার চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে ভবনের দেয়ালগুলো।
এলাকাবাসীরা জানান, পুলিশের গুলিতে একের পর এক ছাত্রদের আহত হতে দেখে এলাকাবাসীরা ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং পুলিশ-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
জুলাই-আগষ্টের উত্তাল সময়ে রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, শনির আখড়া, দনিয়ার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল জীবন ভয় ও পুলিশি হয়রানি। জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্রদের পাশে না দাঁড়ালেও আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ভয় উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে পিছপা হননি এখানের মানুষেরা।
খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম কিংবা লড়াই করবার নানা অনুসঙ্গ দিয়ে পাশে ছিলেন এসব এলাকার অধিবাসীরা।
স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনের সময়ে তারা ছাত্রদের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ আশ্রয় দান করে তাদের রক্ষা করতে চেষ্টা করেছেন এবং খাদ্য ও পানি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এলাকাভিত্তিক এমন সাধারণ মানুষের অংশগ্রহনেই জুলাই হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন। প্রতিবেশীর পাশে থাকার অঙ্গিকারই রক্তাক্ত পথ মারিয়ে চূড়ান্ত বিজয় সহজ করে দিয়েছিল।