ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে চাপ বাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৪৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আগামী ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে ট্রাম্পের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা। এখন ট্রাম্প কী পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়ে উত্তেজনা বইছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এরইমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে মার্কিন বাণিজ্য অংশীদাররা। শুল্কনীতির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রভাবে পতনের দিকে ইউরোপের শেয়ারবাজার। চীনের অভিযোগ, শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

গেল ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছু ক্ষেত্রে এই হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করা হয়। এর জেরেই অস্থিরতা শুরু হয় বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করেন অর্থনীতিবিদরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন মাসের জন্য শুল্কনীতি স্থগিত করেন ট্রাম্প।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা সব পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখেন। এতেও শেয়ারবাজার ও মূল্যস্ফীতির হারে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। তবুও দমে যেতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে ব্যর্থ হলে, তাদের ওপর বসবে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক।

এখন দেখার অপেক্ষায় শুল্কনীতির সময়সীমা শেষে কি পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরইমধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দেশকে নতুন শুল্ক হারের রূপরেখাসহ চিঠিও দিয়েছেন ট্রাম্প। কয়েকটি দেশ নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ৯ জুলাই সময়সীমা শেষ হলেও নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।

যারা মার্কিন শুল্কনীতির বিরোধিতা করবে তাদের ওপর ধার্য করা হবে উচ্চ শুল্ক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন ট্রাম্প। এদিকে, শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়নি। আগামী মাসগুলোতেও বিষয়টি দেখা যাবে। মুদ্রাস্ফীতি এবং এককালীন মূল্য সমন্বয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি একটি আর্থিক ঘটনা। যা মার্কিন অর্থনীতিতে এখনও দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা লাভের উদ্দেশে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করছে। সেগুলো তারা শুল্কের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’

ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আকার বিশাল, কেবল তাদের সঙ্গেই নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এদিকে, ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্কারোপের নিন্দা জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম ব্রিকস। এটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। শুল্ক আরোপের বিষয়ে চীন বারবার তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্কারোপে কেউ বিজয়ী হয় না।’

ট্রাম্পের শুল্কের সময়সীমার যতই কাছে আসছে ততই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। পতনের দিকে আছে ইউরোপীয় শেয়ার বাজার। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু দেশ পাল্টা শুল্কারোপের পরিকল্পনা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইইউকে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।

প্লুটোস এসসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান আসকান ইরেদি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কনীতি কিছুটা দ্বিধায় আছেন। এটা স্পষ্ট যে শুল্কের ভার শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদেরই বহন করতে হবে। এভাবে তিনি বেশিদিন চালাতে পারবেন না। আগামী বছর মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। এর আগে মার্কিন অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে হবে।’

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের শুল্কনীতি দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যের দাম বাড়াবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা পূর্বাভাস বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক তিন থেকে দুই দশমিক নয় শতাংশে নেমে আসবে। এছাড়া পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে বিশ্বের মোট জিডিপি এক শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে চাপ বাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে

আপডেট সময় : ১১:৪৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

আগামী ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে ট্রাম্পের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা। এখন ট্রাম্প কী পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়ে উত্তেজনা বইছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এরইমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে মার্কিন বাণিজ্য অংশীদাররা। শুল্কনীতির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রভাবে পতনের দিকে ইউরোপের শেয়ারবাজার। চীনের অভিযোগ, শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

গেল ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছু ক্ষেত্রে এই হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করা হয়। এর জেরেই অস্থিরতা শুরু হয় বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করেন অর্থনীতিবিদরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন মাসের জন্য শুল্কনীতি স্থগিত করেন ট্রাম্প।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা সব পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখেন। এতেও শেয়ারবাজার ও মূল্যস্ফীতির হারে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। তবুও দমে যেতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে ব্যর্থ হলে, তাদের ওপর বসবে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক।

এখন দেখার অপেক্ষায় শুল্কনীতির সময়সীমা শেষে কি পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরইমধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দেশকে নতুন শুল্ক হারের রূপরেখাসহ চিঠিও দিয়েছেন ট্রাম্প। কয়েকটি দেশ নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ৯ জুলাই সময়সীমা শেষ হলেও নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।

যারা মার্কিন শুল্কনীতির বিরোধিতা করবে তাদের ওপর ধার্য করা হবে উচ্চ শুল্ক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন ট্রাম্প। এদিকে, শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়নি। আগামী মাসগুলোতেও বিষয়টি দেখা যাবে। মুদ্রাস্ফীতি এবং এককালীন মূল্য সমন্বয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি একটি আর্থিক ঘটনা। যা মার্কিন অর্থনীতিতে এখনও দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা লাভের উদ্দেশে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করছে। সেগুলো তারা শুল্কের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’

ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আকার বিশাল, কেবল তাদের সঙ্গেই নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এদিকে, ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্কারোপের নিন্দা জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম ব্রিকস। এটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। শুল্ক আরোপের বিষয়ে চীন বারবার তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্কারোপে কেউ বিজয়ী হয় না।’

ট্রাম্পের শুল্কের সময়সীমার যতই কাছে আসছে ততই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। পতনের দিকে আছে ইউরোপীয় শেয়ার বাজার। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু দেশ পাল্টা শুল্কারোপের পরিকল্পনা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইইউকে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।

প্লুটোস এসসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান আসকান ইরেদি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কনীতি কিছুটা দ্বিধায় আছেন। এটা স্পষ্ট যে শুল্কের ভার শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদেরই বহন করতে হবে। এভাবে তিনি বেশিদিন চালাতে পারবেন না। আগামী বছর মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। এর আগে মার্কিন অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে হবে।’

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের শুল্কনীতি দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যের দাম বাড়াবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা পূর্বাভাস বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক তিন থেকে দুই দশমিক নয় শতাংশে নেমে আসবে। এছাড়া পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে বিশ্বের মোট জিডিপি এক শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।