ঢাকা ১০:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

একজনের নামে সর্বোচ্চ ১০ সিমের অনুমোদন, কার্যকর ১৫ আগস্ট

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বর্তমানে যাদের নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো ধাপে ধাপে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ আগস্ট থেকে নতুন সীমা কার্যকর হবে। তার আগে, ১৫ জুলাই অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে বিটিআরসি।

গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত বিটিআরসির নিয়মিত কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, নতুন সীমা কার্যকর হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের নামে থাকা ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রাহকদের মধ্যে যাদের নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করে মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে। অপারেটররা ওই গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইবে, কোন ১০টি সিম তারা রাখতে চান।

সিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে যেসব নম্বর থেকে বেশি কল বা ডেটা ব্যবহৃত হয় এবং যেগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট) সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে, অনেক গ্রাহককে নিজেদের অতিরিক্ত সিম বন্ধ করতে বাধ্য হতে হবে, আর অপারেটরদেরও নিতে হবে প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ।

বিটিআরসি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো একজন গ্রাহকের জন্য সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করেছিল। পরে ২০২২ সালে সিম নিবন্ধন পদ্ধতি হালনাগাদ করা হলেও সিমের সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। তবে সম্প্রতি সিম জালিয়াতি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ভুয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতারণা বেড়ে যাওয়ায় সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সীমা আরও কমিয়ে আনা হলো।

বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ সক্রিয় সিম রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক সিম ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সিম নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং অপারেটরদের মাধ্যমে আগাম প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে।

এদিকে, গত ২৪ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের দশম সভায় আরও কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে একইসঙ্গে এক বছর পরপর সিম নবায়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকে এ বিষয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে, একজন ব্যক্তির নামে বেশি সংখ্যক সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকায় সেগুলো নানা ধরনের অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা ও অবৈধ তদবিরে সিম ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে—বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগে উপদেষ্টাদের নাম ব্যবহার করে তদবির, আবার জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার ফোন নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার ঘটনা।

বিটিআরসির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের নামে পাঁচটি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্রাহকের নামে, আর ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহার করছেন মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ গ্রাহক। ফলে, নতুন সীমা বাস্তবায়ন করা গেলে বেশিরভাগ গ্রাহকের ওপর এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে কমিশন।

নিউজটি শেয়ার করুন

একজনের নামে সর্বোচ্চ ১০ সিমের অনুমোদন, কার্যকর ১৫ আগস্ট

আপডেট সময় : ১২:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বর্তমানে যাদের নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো ধাপে ধাপে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ আগস্ট থেকে নতুন সীমা কার্যকর হবে। তার আগে, ১৫ জুলাই অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে বিটিআরসি।

গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত বিটিআরসির নিয়মিত কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, নতুন সীমা কার্যকর হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের নামে থাকা ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রাহকদের মধ্যে যাদের নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করে মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে। অপারেটররা ওই গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইবে, কোন ১০টি সিম তারা রাখতে চান।

সিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে যেসব নম্বর থেকে বেশি কল বা ডেটা ব্যবহৃত হয় এবং যেগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট) সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে, অনেক গ্রাহককে নিজেদের অতিরিক্ত সিম বন্ধ করতে বাধ্য হতে হবে, আর অপারেটরদেরও নিতে হবে প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ।

বিটিআরসি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো একজন গ্রাহকের জন্য সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করেছিল। পরে ২০২২ সালে সিম নিবন্ধন পদ্ধতি হালনাগাদ করা হলেও সিমের সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। তবে সম্প্রতি সিম জালিয়াতি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ভুয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতারণা বেড়ে যাওয়ায় সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সীমা আরও কমিয়ে আনা হলো।

বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ সক্রিয় সিম রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক সিম ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সিম নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং অপারেটরদের মাধ্যমে আগাম প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে।

এদিকে, গত ২৪ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের দশম সভায় আরও কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে একইসঙ্গে এক বছর পরপর সিম নবায়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকে এ বিষয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে, একজন ব্যক্তির নামে বেশি সংখ্যক সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকায় সেগুলো নানা ধরনের অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা ও অবৈধ তদবিরে সিম ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে—বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগে উপদেষ্টাদের নাম ব্যবহার করে তদবির, আবার জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার ফোন নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার ঘটনা।

বিটিআরসির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের নামে পাঁচটি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্রাহকের নামে, আর ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহার করছেন মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ গ্রাহক। ফলে, নতুন সীমা বাস্তবায়ন করা গেলে বেশিরভাগ গ্রাহকের ওপর এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে কমিশন।