ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নির্বাচন ঘিরে সংসদীয় সীমানায় আসছে পরিবর্তন!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাপক তছনছ করা হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে তাদের মনমতো সীমানা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার সতর্কতার সাথে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। এ নিয়ে বিগত সময়ের তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন।

ঢাকা জেলার দোহার এবং নবাবগঞ্জ, ‘ব্রিটিশ শাসন আমল’ থেকেই এই দুটি উপজেলা প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরো আলাদা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় আলাদা দুটি আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে হুট করে আসন দুটিকে একটি আসনে একীভূত করা হয়।

আটটি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দোহার উপজেলা। অন্যদিকে ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নবাবগঞ্জ উপজেলা। দুটি আসন এখন একটিতে পরিণত হওয়ায় দুই উপজেলার সরকারি বরাদ্দ কমেছে। এছাড়া একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বিস্তৃত এলাকার সব অধিবাসীকে যথাযথভাবে সেবা দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুই উপজেলার ভোটাররাই।

ভোটারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দুইটা এমপির কাজ একজনের ঘাড়ে গিয়ে পদে, আসলে দুইজন এমপির কাজ তো একজন করতে পারে না।’

সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, একটি আসনে সীমাবদ্ধ রাখা দোহার এবং নবাবগঞ্জ দুই উপজেলার আয়তন মিলে যেখানে ৪০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি, সেখানে মাত্র ১৬৭ বর্গ কিলোমিটারের কেরানীগঞ্জ উপজেলাকে ভাগ করে কেন দুটি আসন করা হয়েছে।

দোহারের একজন বলেন, ‘এখানে বিষয়টা হচ্ছে যে, এটা যারা করছে তারা অসৎ উপায়ে নির্বাচনের ফলাফল বের করার জন্য এটা করছে।’

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কুমিল্লা সদরের কিছু অংশ এবং সদর দক্ষিণের নিয়ে গঠিত ছিল কুমিল্লা-৯ আসনে। পরে কয়েক ধাপে এই আসনটিকে ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড করে তিনটি আসনের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে আসনটির অস্তিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হয়।

কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি যে ইউনিয়নের বাসিন্দা, কত বড় অন্যায়, কত বড় জালিয়াত। আমার নিজ আসনটা দিলো আরেকটা আসনের সঙ্গে। মানে আমি আসনবিহীন হয়ে পড়লাম। আমার এক ইউনিয়ন দিলো শহরের সঙ্গে। তাহলে আমার ঠিকানাই যদি মূল ব্যাপার হয় তাহলে আসন তো থাকে না।’

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে কম-বেশি দেড়শ’ আসনে হাত দেয় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এক উপজেলার অংশ কেটে যেমন অন্য আসনের সঙ্গে যোগ করা হয়, তেমনি বিএনপির ভোট বেশি এমন কিছু আসন কার্যত বিলুপ্ত করা হয়।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তখনকার নির্বাচন কমিশন এগুলো করেছে। সীমানা তারা পুনর্বিন্যাস করেছে সুবিধা অনুযায়ী। সেগুলো এখন এটা জায়গায় আসতে হবে। এক দেখতে হবে পপুলেশন আরেক দেখতে হবে জিওগ্রাফিক্যাল কন্টিগ্রিটি। এখন যে প্রস্তাব করা হচ্ছে ১০০ আসন বৃদ্ধি করার, তা করলে তো নতুন ধরনের বিন্যাস হবে আবার।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমরা বলেছি ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করে এই দায়িত্বটা বিশেষায়িত কমিটির উপর দেয়া দরকার। এই কমিটিতে ভূগোলবিদ থাকতে হবে, পপুলেশন এক্সপার্ট থাকতে হবে।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, ২০০১, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে কোন আসনে কী ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে, তার তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সবচেয়ে জটিল কাজ হবে সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ। তাই এটিকে সমাধান করতে হবে অত্যন্ত সুচারুভাবে।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা অনুপাতে আসন দিতে হলে ঢাকা শহর অনেক বেশি আসন পেয়ে যাবে। সেটা করা উচিত হবে না। সেজন্য ঢাকা শহরে কয়টা আসন থাকবে, চট্টগ্রাম শাহরে কয়টা আসন থাকবে আবার সারাদেশের জেলা অনুযায়ী কত আসন মিনিমাম থাকবে এগুলো একটা ফর্মুলাতে আসতে হবে।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই বছর যেহেতু সংবিধান সংশোধন করা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য। আমরা প্রস্তাব করেছি যে এবার কমিশনের উদ্যোগেই একটা কমিটি করা হোক এক্সপার্টদের নিয়ে। ওই কমিটি এই সীমানা নির্ধারণের কাজ করবে।’

এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টি আসনের সীমানা নিয়ে থেকে ৭০০ এর মতো অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। ইসি সূত্র বলছে, জনশুমারির ফল এবং প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় আসনের সীমানায় যে রদবদল হতে যাচ্ছে, তাতে এবার শহরের আসন কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে বাড়তে পারে গ্রামাঞ্চলের আসন।

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন ঘিরে সংসদীয় সীমানায় আসছে পরিবর্তন!

আপডেট সময় : ১১:১৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাপক তছনছ করা হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে তাদের মনমতো সীমানা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার সতর্কতার সাথে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। এ নিয়ে বিগত সময়ের তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন।

ঢাকা জেলার দোহার এবং নবাবগঞ্জ, ‘ব্রিটিশ শাসন আমল’ থেকেই এই দুটি উপজেলা প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরো আলাদা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় আলাদা দুটি আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে হুট করে আসন দুটিকে একটি আসনে একীভূত করা হয়।

আটটি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দোহার উপজেলা। অন্যদিকে ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নবাবগঞ্জ উপজেলা। দুটি আসন এখন একটিতে পরিণত হওয়ায় দুই উপজেলার সরকারি বরাদ্দ কমেছে। এছাড়া একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বিস্তৃত এলাকার সব অধিবাসীকে যথাযথভাবে সেবা দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুই উপজেলার ভোটাররাই।

ভোটারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দুইটা এমপির কাজ একজনের ঘাড়ে গিয়ে পদে, আসলে দুইজন এমপির কাজ তো একজন করতে পারে না।’

সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, একটি আসনে সীমাবদ্ধ রাখা দোহার এবং নবাবগঞ্জ দুই উপজেলার আয়তন মিলে যেখানে ৪০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি, সেখানে মাত্র ১৬৭ বর্গ কিলোমিটারের কেরানীগঞ্জ উপজেলাকে ভাগ করে কেন দুটি আসন করা হয়েছে।

দোহারের একজন বলেন, ‘এখানে বিষয়টা হচ্ছে যে, এটা যারা করছে তারা অসৎ উপায়ে নির্বাচনের ফলাফল বের করার জন্য এটা করছে।’

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কুমিল্লা সদরের কিছু অংশ এবং সদর দক্ষিণের নিয়ে গঠিত ছিল কুমিল্লা-৯ আসনে। পরে কয়েক ধাপে এই আসনটিকে ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড করে তিনটি আসনের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে আসনটির অস্তিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হয়।

কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি যে ইউনিয়নের বাসিন্দা, কত বড় অন্যায়, কত বড় জালিয়াত। আমার নিজ আসনটা দিলো আরেকটা আসনের সঙ্গে। মানে আমি আসনবিহীন হয়ে পড়লাম। আমার এক ইউনিয়ন দিলো শহরের সঙ্গে। তাহলে আমার ঠিকানাই যদি মূল ব্যাপার হয় তাহলে আসন তো থাকে না।’

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে কম-বেশি দেড়শ’ আসনে হাত দেয় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এক উপজেলার অংশ কেটে যেমন অন্য আসনের সঙ্গে যোগ করা হয়, তেমনি বিএনপির ভোট বেশি এমন কিছু আসন কার্যত বিলুপ্ত করা হয়।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তখনকার নির্বাচন কমিশন এগুলো করেছে। সীমানা তারা পুনর্বিন্যাস করেছে সুবিধা অনুযায়ী। সেগুলো এখন এটা জায়গায় আসতে হবে। এক দেখতে হবে পপুলেশন আরেক দেখতে হবে জিওগ্রাফিক্যাল কন্টিগ্রিটি। এখন যে প্রস্তাব করা হচ্ছে ১০০ আসন বৃদ্ধি করার, তা করলে তো নতুন ধরনের বিন্যাস হবে আবার।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমরা বলেছি ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করে এই দায়িত্বটা বিশেষায়িত কমিটির উপর দেয়া দরকার। এই কমিটিতে ভূগোলবিদ থাকতে হবে, পপুলেশন এক্সপার্ট থাকতে হবে।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, ২০০১, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে কোন আসনে কী ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে, তার তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সবচেয়ে জটিল কাজ হবে সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ। তাই এটিকে সমাধান করতে হবে অত্যন্ত সুচারুভাবে।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা অনুপাতে আসন দিতে হলে ঢাকা শহর অনেক বেশি আসন পেয়ে যাবে। সেটা করা উচিত হবে না। সেজন্য ঢাকা শহরে কয়টা আসন থাকবে, চট্টগ্রাম শাহরে কয়টা আসন থাকবে আবার সারাদেশের জেলা অনুযায়ী কত আসন মিনিমাম থাকবে এগুলো একটা ফর্মুলাতে আসতে হবে।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই বছর যেহেতু সংবিধান সংশোধন করা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য। আমরা প্রস্তাব করেছি যে এবার কমিশনের উদ্যোগেই একটা কমিটি করা হোক এক্সপার্টদের নিয়ে। ওই কমিটি এই সীমানা নির্ধারণের কাজ করবে।’

এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টি আসনের সীমানা নিয়ে থেকে ৭০০ এর মতো অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। ইসি সূত্র বলছে, জনশুমারির ফল এবং প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় আসনের সীমানায় যে রদবদল হতে যাচ্ছে, তাতে এবার শহরের আসন কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে বাড়তে পারে গ্রামাঞ্চলের আসন।