ঢাকা, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের সর্ম্পক, উত্তাল ভারত

- আপডেট সময় : ১১:১৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে

গত বছর সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বিক্ষোভ কূটনৈতিক মোড় নেয়৷ পুরনো মিত্র শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করায় ক্ষুব্ধ প্রতিবেশী ভারত চীনের দিকে উষ্ণ হয়ে ওঠে৷
বিক্ষোভের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আগামী বছরের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রভাব বিস্তারের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, তখন এই পুনর্বিন্যাস মেরুকরণ ও বহিরাগত হস্তক্ষেপের আশঙ্কা তীব্রতর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
১৭ কোটি মানুষের দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানোর জন্য দেশীয় ঐকমত্য চাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের নয়াদিল্লিভিত্তিক বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সম্ভবত এত তীব্র টানাপোড়েনের মুখে আগে কখনো পড়েনি।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্য নিয়ে ঢাকায় গভীর অসন্তোষ রয়েছে, যিনি ২০২৪ সালের আগস্টে হেলিকপ্টারে করে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহ থেকে পালিয়ে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে জনগণের ক্ষোভ ভারতের দিকে চলে গেছে কারণ নয়াদিল্লির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে হাজির হওয়ার জন্য প্রত্যর্পণের আদেশ অমান্য করেছেন এবং ইতিমধ্যে ছয় মাসের কারাদণ্ডে আদালত অবমাননার দায়ে তার অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সম্পর্ক এখন পুনর্বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনূসের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ছিল মার্চ মাসে, যে সফরে তিনি ২.১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, ঋণ এবং অনুদান সুরক্ষিত করেছিলেন।
বেইজিং নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদদেরও সরাসরি সাক্ষাৎ করেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আন্তরিকতা, দৃঢ়তা, ভালোবাসা ও স্নেহ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী চীন।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে সতর্ক এবং সাম্প্রতিক কূটনৈতিক বরফ গললেও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুটি দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের কাছাকাছি চলে এসেছে বাংলাদেশও।
গত মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে চার দিনের ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কামানের গোলাবর্ষণে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
পরের মাসে ঢাকা ও ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা চীনে সমকক্ষদের সাথে বৈঠক করেন।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, এই তিনজন বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা ও কৃষিসহ ‘সহযোগিতামূলক কর্মসূচিতে’ সম্মত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ওবায়দুল হক বলেন, একসময় ভারতে জনপ্রিয় মেডিকেল ট্যুরিজম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিকল্প স্বাস্থ্যসেবাসহ বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারত যখন ভিসা গ্রহণ কঠিন করে তুলেছিল তখন চীন বাংলাদেশি রোগীদের জন্য তিনটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছিল।
ঢাকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে বিভক্ত হওয়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান গত বছর সমুদ্রপথে বাণিজ্য শুরু করে।
যা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে নয়াদিল্লিতে।
তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের আদর্শিক ভিত্তির কারণে… তারা ইসলামপন্থী ও ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন সরকারের অধীনে ঢাকাকে মেনে নিতে রাজি নয়।
ঢাকা, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যে দৃশ্যমান সম্পৃক্ততা এই ধারণাকে আরও জোরদার করে।
নয়াদিল্লি ও বাংলাদেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশ স্থলপথে ঘিরে রাখা ভারত একাধিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতে পাটের আঁশ, তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য এবং খাদ্য আমদানির উপর নিয়ম কঠোর করা।
তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেছেন হুমায়ুন কবির।
তবে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঢাকার উচিত সতর্কতার সঙ্গে জোট গঠন করা এবং ভারসাম্য বজায় রেখে ‘বহুপাক্ষিক সম্পর্ক’ জোরদার করার চেষ্টা করা।
তিনি বলেন, ‘দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এখনও আছে, কিন্তু উষ্ণতা চলে গেছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক ঝাঁকুনির কবলে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশও।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ঢাকা বোয়িং বিমান কেনার এবং মার্কিন গম, তুলা ও তেলের আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছে, জুনে ইউনূস মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে তার “সম্পর্ক জোরদার” করার প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিলেন।
তবে আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিগগিরই খুব সামান্যই পরিবর্তন হবে এবং তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাদের আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্রাইসিস গ্রুপের দোন্থি বলেন, ‘পরিস্থিতি তখনই পাল্টাতে পারে যখন নয়াদিল্লি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট হয় এবং ঢাকায় এর জন্য যোগ্য কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেখে।
ঢাকার বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। সুত্র : আরব নিউজ/এএফপি