ভারতে নজিরবিহীন বন্যা; রেড অ্যালার্ট জারি

- আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে

নেপাল-চীন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ গেছে অন্তত আটজনের। এরমধ্যে নেপালে নিখোঁজ ২০ এবং চীনে অন্তত ১১ জন। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ধসে পড়েছে দুই দেশকে যুক্ত করা মৈত্রী সেতু। অন্যদিকে ভারতের হিমাচলে চলমান নজিরবিহীন বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। এছাড়াও মধ্য প্রদেশ-মহারাষ্ট্র-ত্রিপুরায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে দিল্লি ও কলকাতায়ও।
বিধ্বংসী বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়া। হিমালয়ঘেঁষা তিব্বত অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভোটে কোশি নদী প্লাবিত হয়ে ভেসে যায় সীমান্তে চীন ও নেপালকে যুক্ত করা মৈত্রী সেতু। থমকে গেছে নেপাল-চীন সীমান্ত বাণিজ্য। চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী বেশ কয়েকটি কন্টেইনারও ভেসে গেছে তীব্র স্রোতে।
গতকাল (মঙ্গলবার, ৮ জুলাই) অর্ধশতাধিক মানুষকে জীবিত উদ্ধারের পর আজও (বুধবার, ৯ জুলাই) দুর্গম এলাকাটিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নেপালের সেনাবাহিনী। দেশটিতে নিখোঁজদের মধ্যে ছয় চীনা কর্মী ও তিন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছে। নেপালের নুওয়াকোট জেলায় ত্রিশূলী নদীর তীরবর্তী এলাকাতেও উদ্ধার অভিযানে ব্যস্ত সেনাবাহিনী।
বর্ষার প্রথম দুই সপ্তাহে ২৩টি আকস্মিক বন্যা, ১৯টি পাহাড়ি ঢল আর ১৬টি ভূমিধসে বিপর্যস্ত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশ। পানি নেমে যাওয়ায় প্রকট হচ্ছে বন্যার ছেড়ে যাওয়া ক্ষত। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এখনও ২২৫টি সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০৩ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে হিমাচলে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫০ মিলিমিটার বেশি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মান্ডি জেলায় ১১০ শতাংশ, শিমলায় ৮৯ শতাংশ আর উনায় ৮৬ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বুধবারও হিমাচলের সাত জেলায় ফের আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় নদী তীরবর্তী ও পাহাড়ি গিরিখাত এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রশাসনের। শিমলায় জারি রয়েছে ইয়েলো অ্যালার্ট।
একদিকে ভারী বৃষ্টি, অন্যদিকে অলকানন্দা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় আকস্মিক বন্যার কবলে উত্তরের আরেক রাজ্যে উত্তরাখণ্ডের মুখ গ্রাম। জম্মু-কাশ্মীরে ভারী বৃষ্টির পর রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলায় পাহাড়ি ঢলে হয়েছে প্রাণহানিও। উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খান্ড, ওড়িষা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর. মিজোরামসহ ভারতজুড়েই রয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস।
মধ্য প্রদেশের দুই জেলায় সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট, চারটির বেশি জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি রয়েছে। মহারাষ্ট্রেও নাগপুর মধ্যাঞ্চলীয় চার জেলায় রেড অ্যালার্ট ও তিন জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট চলছে। মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাটে প্রবাহিত পূর্ণা নদীতে পানি বাড়ছে। কাবেরি, নবসরী, রঞ্জিতসাগর, ওয়াগাদিয়া আর জামনগর নদীতে উপচে উপকূল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় এক মাসে প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গুজরাটের ২০৬টি জলাধারে পানি বেড়ে ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশ পানি জমেছে ৪৯টি বাঁধে, ২৪টি পূর্ণ। আরও বৃষ্টি আর পানি বাড়ার আভাসে ৩৪টি বাঁধে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং আরও ৩৯টি বাঁধে বিভিন্ন পর্যায়ের সতর্কতা জারি রয়েছে। মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের মধ্যাঞ্চলে সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। পাঁচ জেলায় আগামী চার দিনে ভারী বৃষ্টির আভাস আবহাওয়া বিভাগের। বার্ষিক গড়ের ৪৬ শতাংশ, ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি এরই মধ্যে রেকর্ড করে ফেলেছে রাজ্যটি।
বুধবারও ভারী বৃষ্টির কবলে ভারতের রাজধানীসহ পুরো দিল্লি।
মুহুরি নদীতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রেড অ্যালার্ট চলছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার দক্ষিণে। রাজ্যের বাকি অংশে জারি অরেঞ্জ অ্যালার্ট। সোমবার থেকে টানা বৃষ্টি চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায়। বুধবার সকালেও বজ্রসহ ঝড় অব্যাহত। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে নগরবাসী, ব্যাহত গণপরিবহণ সেবা।
প্রতিবেশি পাকিস্তানেও ২৬ জুন থেকে বন্যা ও বৃষ্টিজনিত নানা ঘটনায় ৩৮ শিশুসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৭৯ জনে। গিলগিত-বালতিস্তান আর খাইবার পখতুনখোয়াসহ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হিমবাহে ধস ও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।