জুলাই আন্দোলন: কুবি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম হামলা চালায় পুলিশ

- আপডেট সময় : ০২:০০:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে

২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ১১ জুলাই পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার হন তারাই। দেশজুড়ে সে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শান্তিপূর্ণ ছাত্র-আন্দোলন আরও কঠোর রূপ নিতে শুরু করে।
২০২৪ সালের আজকের (১১ জুলাই) এ দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে লাঠিপেটার পাশাপাশি ছোড়া হয় টিয়ারশেল।
এতে গুলিবিদ্ধ হন রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী। এরপরও দমানো যায়নি ছাত্রদের, বাধ্য হয়ে পিছু হটে পুলিশ। সহপাঠীদের ওপর হামলার খবর পেয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসেন ছাত্রীরাও। মিছিল পরিণত হয় ক্ষোভ আর অধিকার আদায়ের দাবানলে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলার কথা শুনে বেরিয়ে এসেছিলেন ছাত্রীরা।
আহত শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রদের এত বেশি উপস্থিতি ছিল যে, পুলিশ ছাত্রদের দমাতে গুলি চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অথবা উপরের নির্দেশনায় পুলিশ এমন করে থাকতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
চার কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা শেষে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের যান চলাচল। জুলাই আন্দোলনে এটিই ছিল ছাত্রদের প্রথম প্রতিরোধ। যা শুধু কুমিল্লা নয়, পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছিল। শাহবাগেও শোর ওঠে— ‘কুমিল্লায় হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই।’ পরদিন ক্যাম্পাসে আসেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন জানান, কুমিল্লাতেই শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম হামলা হয়। ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’— এ স্লোগান দেয়া হচ্ছিল ঢাকাতেও।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় স্বৈরাচার হটানোর একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে। যেখানে রাজপথে থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
১৬ জুলাই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর পদযাত্রার পর ১৮ জুলাই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কোটবাড়ি বিশ্বরোড হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হলেও পিছু হটেননি কেউ। হল বন্ধ হলেও ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে সরব ছিল কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, ‘পুলিশ এখানেই প্রথম নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ দিন শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পেটায় পুলিশ।’
ইনকিলাব মঞ্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহীম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিরোধটা হয়েছে, তা বিজয় দিয়ে শেষ হয়েছে “৩৬ জুলাইয়ে”।’
যে ১১ জুলাইয়ের প্রথম প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল শত সহস্র তরুণের মাঝে। সেই দিনটি স্থান পায়নি জুলাই ক্যালেন্ডারে। তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ আর অভিমান।
শিক্ষার্থীরা জানান, এ আন্দোলনে সব বিষয়গুলো এবং সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরেছিলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা।
৩৬ জুলাই। একটি প্রতীকী তারিখ, যা আজ যেনো এক মহাকাব্য। এ আন্দোলনে অংশ নেয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিশ্বাস, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে এ সুযোগকে কাজে লাগাবে নতুন বাংলাদেশ।