রাজধানীর কাঁচাবাজারে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী

- আপডেট সময় : ০১:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৬০ বার পড়া হয়েছে

টানা বৃষ্টির মধ্যে সরবরাহ ভালো থাকলেও সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির বাজার চড়া রয়েছে। এখন পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচা মরিচের দামে আগুন। খুচরা বাজারে দাম আকাশচুম্বী। কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। সরবরাহ সংকটে দাম বেড়েছে বেগুনেরও, বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। বেড়েছে পটল ঢেঁড়স প্রায় সব সবজির দাম। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দরও। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ডিমের দাম। তবে মাছের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় সেখানেই কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন তারা। এদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে, কিন্তু সেখানে নেই তেমন বিক্রি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, মিরপুরসহ আশেপাশের একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়া মরিচের গাছ মরে গেছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে মরিচের। দুইদিন আগেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজিতে। আজ ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক দোকানি কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন না। যারা বিক্রি করছেনও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম পরিমাণে পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনছেন।
তালতলা বাজারে তরকারি বিক্রেতা সাইফুল বলেন, পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের পাল্লা এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা এরপর যাতায়াত খরচ তো রয়েছে। প্রতিদিন এক পাল্লা মরিচ আনলেও আজ ১ কেজি মরিচ এনেছি। এভাবে দাম বাড়লে মরিচ বিক্রি বন্ধ করে দেব।
শেওড়াপাড়া বাজারের তরকারি বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুইদিন আগেও ২০০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। গতকাল ২৪০ টাকা বিক্রি করলেও আজ পাইকারি বাজারেই কেজিতে দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সরবরাহ কমা এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াতে দাম বেশি বলছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। বেগুন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং কচুর মুখী ৭০ টাকা।
সজনে কেজিতে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা এবং পেঁপে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা।
শাকসবজির মধ্যে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৩০ টাকা হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকায়।
বাজারে আদা ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ১৮০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট চালের কেজি প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ চাল ৬৫ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, গেল শুক্রবারেরও এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা কম ছিল। আর ক্রেতার অভিযোগ বাজারে নজরদারি নেই সরকারের।
মুরগির বাজারেও বাড়তি দাম লক্ষ্য করা গেছে। সোনালি কক মুরগির কেজি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৭০ টাকা, লাল লেয়ার ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা। বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৯০ টাকা।
রেজাউল করিম নামের এক পোশাককর্মী বলেন, “তিনদিন আগেও অফিসের পেছনের গলির দোকানে ১৫০ টাকা কেজি ছিল। আজ বলল ১৭০! বাসায় বাচ্চাদের জন্য কিনি, নিজেরা তো যা পাই তা দিয়েই চলে। এত দাম দিলে তো মুরগিও বাদ দিতে হবে!”
তিনি বলেন, “এতদিন মুরগি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, আমার মতে এটাই ছিল ব্রয়লার মুরগির স্বাভাবিক দাম। এই দামে থাকলে গরিব ধনী সবাই নিজেদের চাহিদা মতো খেতে পারবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।”
এদিকে মাছের বাজারেও গত সপ্তাহের মতো চড়া দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাষের শিং মাছের (আকারভেদে) কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মাগুর মাছের কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি ২২০ টাকা।
গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ২০০ টাকা।