জুলাই হত্যাকাণ্ড: প্রমাণ দিচ্ছে পরিবার, বিচার নিয়ে প্রশ্ন?

- আপডেট সময় : ০২:৩২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে

জুলাই হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রমাণাদি দিয়ে তদন্ত সংস্থাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে শহিদদের পরিবার। অথচ সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে পালিয়ে যেতে সহায়তাসহ বিচারের ধীরগতি হতাশ করছে শহিদদের স্বজনদের। দেশ গড়তে শহিদ পরিবারের চাওয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
তৃষ্ণার্তদের পানি বিতরণ করেই রক্তে ভেসে গিয়েছিলো মুগ্ধের নিথর দেহ। তারপর থেকে মুগ্ধের নাম মানুষের মুখে মুখে, রাস্তার দেয়ালে, কখনো গণমাধ্যমের শত শত শিরোনামে। মুগ্ধের শাহাদাতে পরিবার গর্বিত হলেও তাদের ব্যথা অন্য জায়গায়।
এক বছর ধরে মুগ্ধের হত্যাকারীকে শনাক্তে মোবাইল ও সিসিটিভির অসংখ্য ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পরিবার। তদন্ত সংস্থার সুবিধায় পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছেও। সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম পরিচয় জানানোর পরও তাকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মুগ্ধের বড় ভাইয়ের।
মুগ্ধের বড় ভাই বলেন, ‘এখানে অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) কে ছিলো তা বের করে দেয়া হয়েছে, তার এখন কোথায় পোস্টিং সেগুলো চেক করে বের করে দেয়ার পরেও, নিয়ে আসার নাম করে তাকে পালিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে। এভাবে যদি ঘটতে থাকে তাহলে এ বিচার কতটা সফল হবে সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে।’
হাজারও প্রাণের বিনিময়ে দেশের লক্ষ কোটি টাকা পাচার হবার পথ বন্ধ হলো। অথচ সেই শহিদ ও আহতদের জন্য প্রথম বরাদ্দ শুরু হয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা দিয়ে। যা ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শুরু হলেও কম হতো বলে মনে করেন মুগ্ধের জমজ ভাই মীর স্নিগ্ধ।
মীর স্নিগ্ধ বলেন, ‘অবশ্যই একশ কোটি টাকা কোন কিছুই না। আমি বলবো এক হাজার নয় বরং যদি আরও বাড়ানো সম্ভব হয়, পাঁচ হাজার বা দশ হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু করা যেত তাহলে সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। এখনো সম্ভব যারা শহিদ পরিবার আছে তাদের চাহিগুলো পূরণ করার।’
এদিকে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র বলছে, ৫ আগস্ট কনস্টেবল ইমনের গুলিতে প্রাণ ঝরে ১৬ বছরের আনাসের। সেই ঘটনার ফুটেজ সংগ্রহে মানুষের দ্বারে দ্বারে দিনের পর দিন ভিডিও ফুটেজ ভিক্ষা চেয়েছেন বলে জানান আনাসের মা।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যেভাবে ভিক্ষা করে এভাবে আমি মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে ভিডিও, ছবিগুলো সংগ্রহ করেছি। আন্দোলনে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো দেশটা যেন ভালো থাকে। স্বৈরাচার মুক্ত, ন্যায়পরায়ণ একটা ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র হোক। আমি সর্বোপরি এ দেশটাকেই চাই।’
যে কয়েকজন শহিদের হত্যার বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে তাদের মধ্যে আনাসের নাম থাকলেও মায়ের যন্ত্রণা অন্য জায়গায়। চিঠিতে নতুন করে বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্নের কথা লিখে গিয়েছিলো আনাস, সেখান থেকে যোজন যোজন দূরে রাজনীতিবিদরা। তবে কি বৃথা গেলো আনাসের আত্মত্যাগ?
শহীদ আনাসের বাবা বলেন, ‘প্রবীণ রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা, কাজেকর্মে কোথাও আমরা শহিদদের চাওয়ার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। শুধু ক্ষমতার পেছনে ছুটছে সবাই।’
শহিদ ও আহতদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অস্পষ্ট পরিকল্পনায় অস্বস্তির শেষ নেই। শহিদ পরিবারের চাওয়ার আলোকেই নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে হাত দেয়া উচিত বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মীর্যা গালিব।
ড. মীর্যা গালিব বলেন, ‘যারা শহিদ হলো, যারা আহত হয়েছেন তারা এ গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। সরকার একটা খুব ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে যে, তারা তো একটা ঐক্যমত্য কমিশন করছে, তারা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে ইনভাইট করে শহিদদের কথা শোনাতে পারে। তাদের পরিবারের কথা শোনাতে পারে যে তাদের চাওয়া কি, যারা শহিদ হয়েছেন তারা কেন গণঅভ্যুত্থানে গিয়েছিলো।’