জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা, গোলাগুলি ও খুনের ঘটনায় গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগরীর ৮ থানায় ৬০টি মামলা হয়েছে। তবে, ভুক্তভোগী পরিবারের ও আইনজীবীদের অভিযোগ, কোন মামলার তদন্তে নেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনকে ব্যবহার করে নগরীতে অনেক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তদন্ত।
জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোর শুরুতে রণক্ষেত্র ছিল ষোলশহর, মুরাদপুর। ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠন। ১২ জুলাই বিকেলে মুরাদপুরে সংঘর্ষে প্রথম শহীদ হন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম। সেদিন শহীদ হন আরও দুইজন।
এমইএস কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত। শহীদ হওয়ার মাস কয়েক আগে পছন্দ করে একটি শার্ট কিনে দেন তার মা। সাজানো গোছানো বইয়ের টেবিল, জামা, ছবিসহ নানা স্মৃতি আঁকড়ে ছেলেকে ধরে রাখার চেষ্টা স্বজনদের।
সন্তানের মৃত্যুর পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন শান্তর বাবা। ১৮০ দিনে সে মামলার তদন্ত শেষ করার কথা থাকলেও এক বছরেও হয়নি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ পরিবার।
ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবা বলেন, ‘যেখানে অন্তত ৫০ শতাংশ আশা ছিলো তা এখন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাঁধা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে, তারপরেও বিচারকাজ আগানো উচিত ছিলো।’
শহীদ শান্তর মা বলেন, ‘তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। এটা যেন আমরা দেখে যেতে পারি। এক বছর হয়ে গেছে এখনও তো আমরা বিচার প্রক্রিয়ার কোন অগ্রগতিই দেখতে পাচ্ছি না।’
জুলাইয়ের শুরুর দিকের আরেক শহীদ দুই সন্তানের জনক দোকান কর্মী মো. ফারুক। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর পর ২৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় ২৬৯ জনের নাম উল্লেখ ও ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন নিহতের বাবা। এখন দিন যত বাড়ছে ততই কমছে ন্যায় বিচার ও পুনর্বাসনের স্বপ্ন।
শহীদ ফারুকের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, ‘শুধু মামলাই হয়েছে কিন্তু কোন বিচার আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমার ছেলে মেয়েগুলোকে যারা এতিম করলো তাদের বিচার যেন প্রাপ্যভাবেই হয়।’
গণঅভ্যুত্থান ঘিরে নগরীর ৮ থানায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধারায় প্রায় ৬০টি মামলা হয়েছে। প্রায় এক বছর হতে চললেও তদন্তে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই বলছেন আইনজীবীরা।
মহানগর পিপি মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ যখন বলে আমি ছিলাম না বা আমি ছিলাম, সে জড়িত আছে কি নেই এটা এখনি বলা দূরুহ ব্যাপার। এর জন্য, সরকারের তদন্তকারী থানা রয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে, তখনই বুঝা যাবে কে কতটুকু জড়িত আছে।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের হওয়া অনেক মামলা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মামলায় বাদী আসামিকে চেনেন না। জুলাই আন্দোলনের নামে পূর্ব শত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কিংবা মামলা বাণিজ্যের জন্য অনেককে জড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষ যদি মামলার এজহারভুক্ত আসামি হয়ে যায়, রিপোর্টও যদি হুবহু এজহার অনুযায়ী দেয়, তাহলে তো সেই রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। পুলিশ অবশ্যই এটা বিবেচনা করবে। যেহেতু আসামির সংখ্যা বেশি, সময় তো একটু বেশি লাগতেই পারে।’
জুলাই-আগস্টের মামলাগুলো পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা মতো তদন্ত হচ্ছে বলছে সংশ্লিষ্ট থানা। তবে, তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আরও সময় প্রয়োজন। যদিও এ নিয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে চাননি সিএমপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।