বাংলাদেশে হতে পারে বড় ভূমিকম্প, কতটা প্রস্তুত
- আপডেট সময় : ০৪:৫২:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
‘ইউএসজিএসের তথ্য বলছে, গত ৭-৮ মাসে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। হয়তো এটা নির্দেশ করছে, আমাদের সামনে বড় ভূমিকম্প আসছে। কারণ, দেড় শ বছরের সাইকেলে আমরা পড়ে গেছি। ১৮৭০ সালের সঙ্গে যদি দেড় শ বছর যোগ করি তাহলে ২০২০। দেড় শ বছর মানে কিন্তু এটা নয়, ঠিক দেড় শ বছরেই ভূমিকম্প হবে। এটা ১৪০ বছরে হতে পারে। আবার ১৬০ বছরেও হতে পারে। তার মানে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া উপায় নাই।’
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনুভূত ভূমিকম্পগুলোর তিনটিরই উৎসস্থল ছিল বাংলাদেশে। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট রাতে রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে সৃষ্ট এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছিল ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং ভুটান ও মিয়ানমারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূগর্ভের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। ফলে এর কম্পন বেশি অনুভূত হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। গত ৫ মে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় অনুভূত ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয় ঢাকার কাছে দোহারে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতে উৎপন্ন কয়েকটি ভূমিকম্পেও দেশে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে। বিষয়টিকে বড় ভূমিকম্পের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
বছরের শুরুতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় হওয়া ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ভয়াবহতার উদাহরণ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এমন কিছু ঘটলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে। তুরস্কে ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়।
দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্টলাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূতত্ত্বের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি বলা হয়। ফল্টলাইনে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে যেকোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে সম্প্রতি এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে আন্তর্জাতিক ভূমিকম্প প্রকৌশল সংস্থার (আইএইই) উদ্যোগে নেওয়া ওয়ার্ল্ড সিসমিক সার্ভে ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ড. আনসারী বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৮৬৯ থেকে শুরু করে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর নিচের ভূমিকম্পগুলো ১৮৭০, ১৮৮৫, ১৯১৮ ও ১৯৩০ সালে হয়েছে। বলা হয়, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো দেড় শ বছর পরপর আসে। আর ৮ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো আসে তিন শ বছর পরপর। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে।’
এর আগে চলতি বছর তুরস্কে ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানীর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশের সীমানায় বড় ভূমিকম্প হবে। কবে হবে, তা জানা না গেলেও হবে যে, তা নিশ্চিত।’
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে উল্লেখ করে তিনি এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, আতঙ্কিত হয়ে কোনো সমাধান আসবে না। বরং প্রস্তুতি নিলে বিপর্যয়ের মাত্রা কমানো যায়। সে জন্য সতর্ক হতে হবে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ইউএসজিএসের তথ্য বলছে, গত ৭-৮ মাসে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। হয়তো এটা নির্দেশ করছে, আমাদের সামনে বড় ভূমিকম্প আসছে। কারণ, দেড় শ বছরের সাইকেলে আমরা পড়ে গেছি। ১৮৭০ সালের সঙ্গে যদি দেড় শ বছর যোগ করি তাহলে ২০২০। দেড় শ বছর মানে কিন্তু এটা নয়, ঠিক দেড় শ বছরেই ভূমিকম্প হবে। এটা ১৪০ বছরে হতে পারে। আবার ১৬০ বছরেও হতে পারে। তার মানে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া উপায় নাই।’
বড় ভূমিকম্পের আসার আগে ছোট ছোট টুকটাক ভূমিকম্প হয় উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অনেক সময় একশটা ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। আবার বড় ভূমিকম্পের পরেও একশটা ছোট ভূমিকম্প হতে পারে।’
সিলেটে ভূমিকম্প উৎপত্তির বিষয়টিকে খারাপ লক্ষণ হিসেবে দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নে মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ। সিলেটের আশপাশে প্রায় তিনটি ফাটল বা চ্যুতি রয়েছে। যেখানে ৭.১, ৭.৫, ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। (এমন মাত্রার ভূমিকম্প) সিলেটে হোক আর ঢাকায় হোক, তা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেবে।’
সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং ভূমিকম্পের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেন এ দুই বিশেষজ্ঞ।
বিশ্বের অন্যতম জনঘনত্বপূর্ণ শহর ঢাকা। সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনার মতো শহরগুলোর জনঘনত্বও কম নয়। বড় ভূমিকম্পে এসব শহরে ক্ষয়ক্ষতি কেমন হওয়ার আশঙ্কা করছেন? জানতে চাইলে অধ্যাপক আনসারী বলেন, ‘বাংলাদেশে আসলে তিনটি বড় শহর। রাজউকের এলাকা ধরে যদি বলি ঢাকার আয়তন ১৫০০ বর্গ কিলোমিটার, লোক আছে প্রায় ২ কোটি। বাসাবাড়ির সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। চট্টগ্রামের আয়তন কম, ১৪০ বর্গকিলোমিটার হবে। লোকসংখ্যা অনেকে বলে ১০ লাখ, প্রকৃত সংখ্যা বলা মুশকিল। বাসাবাড়ির সংখ্যা ৪ লাখ। সিলেটেও অফিশিয়ালি জনসংখ্যা ৫ লাখের মতো বলা হয়। বাসাবাড়ির সংখ্যা হবে দেড় থেকে দুই লাখের মতো। পুরো বাংলাদেশ হিসাব করলে এই ২০ লাখ বাসাবাড়ির সঙ্গে হয়তো আরও ৩০ লাখ যোগ হবে। সবমিলিয়ে ৫০ লাখের মতো বাসাবাড়ি হবে, যেগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
তুরস্কে হওয়া সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ টেনে এই অধ্যাপক বলেন, ‘তুরস্ক বিশাল একটি দেশ। কিন্তু জনঘনত্ব আমাদের চেয়ে অনেক কম। সেই তুরস্কেই কিন্তু একটা জায়গায় ভূমিকম্প হয়ে ৬০ লাখ লোক নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় মারা গেছে আরও নয় হাজার। বেশির ভাগ মানুষই মারা গেছে ভবনধ্বসে। বলা হয়, ঢাকায় মোট ২১ লাখ বাসাবাড়ির মধ্যে ৬ লাখ পাকা দালান, যেগুলো চারতলা বা তার বেশি। একটা অনুমান রয়েছে, ঢাকায় ভূমিকম্প হলে ২-৩ লাখ লোক হতাহত হবে। আমরা এটা সামাল দিতে পারব কি না, সেটা একটা ব্যাপার। আমাদের আসলে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ হাজার ২৩৪ জন লোক বাস করে। আর ঢাকায় জনসংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে ৩ শতাংশের বেশি হারে। ফলে এই জনঘনত্ব দিনদিন বাড়ছে।
বলে রাখা প্রয়োজন যে, তুরস্কে গত ফেব্রুয়ারিতে যে ভূমিকম্পে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হলো, সেই অঞ্চলে জনঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৩১৬ জন।
এ প্রসঙ্গে ঢাবির অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘জনঘনত্ব একটা বড় চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ঢাকার কোনো কোনো জায়গায় জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজারের মতো। খোলা স্থান একেবারেই কম। পুরোনো এলাকাগুলোয় এমনকি সড়কের জন্যও ঠিকমতো জায়গা রাখা হয়নি। রানা প্লাজার কথা মনে করে দেখুন। একটি ভবন ধ্বসে গেল। সেখানে উদ্ধারকাজ শেষ করতে আমাদের দুই সপ্তাহ লেগে গেল। বড় ভূমিকম্প হলে ঢাকায় এমন হাজার হাজার রানা প্লাজা হবে।’
ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো কীভাবে চিহ্নিত করা যায়, জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের পর যেমন গার্মেন্টস ভবনগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, সেভাবে শহরাঞ্চলের সবগুলো ভবন পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। আমরা অনেক সময় একটা পরিসংখ্যান বলি, বড় ভূমিকম্প হলে ৩০ শতাংশ ভবনে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু কোন তিরিশ ভাগ ভবন ভাঙবে, আমরা কিন্তু জানি না।’
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সাড়ে তিন হাজার ভবন পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আনসারী বলেন, ‘ভবনগুলো পরীক্ষা করে আমরা বলে দিয়েছি অমুক বিল্ডিংটা ‘‘রেড’’, মান খারাপ। অমুক বিল্ডিংটায় ‘‘গ্রিন’’ ট্যাগ, মান ভালো। এভাবে কালার কোড দেওয়া আছে। ঢাকায় এ কাজটা রাজউককে, চট্টগ্রামে হলে সিডিএ-কে, সিলেটে হলে সিটি করপোরেশনকে শুরু করতে হবে। অন্যান্য শহরেও কোথাও সিটি কর্পোরেশন কোথাও পৌরসভা বা ডেভলপারদের এই কাজগুলো শুরু করতে হবে।’
এত বেশি ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কার কারণ হিসেবে মূলত তদারকি ও এ সম্পর্কিত তথ্য ঘাটতির কথা জানান অধ্যাপক আনসারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে খুব সুন্দর আইন তৈরি হয়, কিন্তু প্রয়োগে সমস্যা। নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, সেটা রাজউক ভালোভাবে দেখছে না। তার সক্ষমতা নাই। রাজউকের ইনস্পেকটরদের সবাই নন-ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া তো ভবনের সবকিছু পরীক্ষা করতে পারে না। রাজউক যদি সক্ষমতা নাও বাড়ায় আউটসোর্সের মাধ্যমে তা পূরণ করতে পারে। অনেক কিছুই করা যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বেড়ালের গলায় কেউ ঘণ্টা বাঁধতে চায় না। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
কোন ভবনে ঝুঁকি বেশি
সবচেয়ে ঝুঁকিতে কোন ভবনগুলো রয়েছে; নতুন না পুরোনো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সরলীকরণের সুযোগ নেই। তাঁদের মতে, নতুন ভবনের চেয়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া (এক্সিসটিং) ভবন নিয়েই সমস্যা। নতুন ভবন বছরে হয়তো ১০ হাজার হচ্ছে। এক্সিসটিং ভবন ৬ লাখ। পুরান ঢাকায় যদি খুব পুরোনো ভবনগুলো দেখেন, সেগুলো ১৮৯৭ সালের ও ১৯১৮ সালের ভূমিকম্প সয়েছে। পুরোনো নিয়মে ভবনের দেয়ালগুলো অনেক পুরো বা চওড়া করা হতো, যা ভূমিকম্প সহনীয়। নতুন ভবনে যদি ঠিকমতো কংক্রিটিং না করে- তাহলে তো সমস্যা হবেই। এ জন্য নতুন বা পুরোনো ভবন বিষয় নয়। ভূমিকম্প সহনীয় কি না, তা সব ভবন পরীক্ষা করেই বলতে হবে।
ড. আনসারী বলেন, ‘আগে আমরা মনে করতাম, পুরোনো ভবন হলেই খারাপ। ব্যাপারটা তা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখেছি, ৬০ বছরের পুরোনো ভবনগুলোর সক্ষমতা নতুন হল ভবনগুলোর তুলনায় ভালো। কারণ নতুনগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় গলদ ছিল।’
ভবন তৈরির আগে মাটির গুনাগুণ পরীক্ষা জরুরি বলে মনে করেন ড. আনসারী। তিনি বলেন, ‘মাটি শক্তিশালী করে ভবন করতে হবে। মাটি ভূমিকম্প সহনীয় না হলে ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করে লাভ নেই। আমাদের বিল্ডিং কোডে সব গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে। ভূমিকম্প সহনীয় মাটি এবং ভূমিকম্প সহনীয় ভবন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। নজর দিতে হবে, যেন বিল্ডিং কোডের ব্যত্যয় না হয়। এ জন্য দেশে বিদ্যমান সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।’
করণীয় কী
বড় ভূমিকম্পে বিপর্যয় ঠেকাতে করণীয় বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রাতারাতি ভেঙে ফেলা যাবে না। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলো হয় ধ্বংস, নয় তো সংস্কার করতে হবে। উন্মুক্ত এলাকা রাখতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, সুয়ারেজ ইত্যাদির সরবরাহ লাইন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভূমিকম্প হলে এগুলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা না হয়ে ওঠে। সচেতনতা নৃষ্টির পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
বড় ভূমিকম্প হলে ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধার, আহতদের চিকিৎসা এবং ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নতুন করে সব গড়ে তোলার জন্য কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ? সক্ষমতাই বা কতটুকু? এ বিষয়ে অধ্যাপক আনসারী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এই সরকারের আমলেই অনেক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্যও কেনা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসকে শুধু প্রশিক্ষিত করলেই হবে না। তাদের ক্ষমতাও দিতে হবে। বঙ্গবাজার নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কিন্তু অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন আমলে নেয়নি। সুশাসনের দিকটায় নজর দিতে হবে। সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।