ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সরবরাহ পর্যাপ্ত, তবুও চড়া পেঁয়াজের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দামের উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশের বাজারে। ইতোমধ্যেই ঢাকায় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে মসলাজাতীয় পণ্যটি। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। বাজারভেদে এই দাম একেক জায়গায় একেক রকম। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে।

পর্যাপ্ত সরবরাহে থাকলেও রাজধানীর বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম। ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে নজর রাখতে হবে আমদানীকারক ও আড়তদারদের ওপর। শনিবার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ছাড়াও ঘাটতি নেই আমদানি করা ভারত ও চায়নার পেঁয়াজের। এরপরও দাম ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের ৫৭টি টিম পৃথক এ অভিযান চালায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরকেন্দ্রিক বাজারে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও রপ্তানি বন্ধ এবং দেশের পেঁয়াজের মজুদ কম থাকাকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

দিনাজপুরের হিলিতে একরাতেই প্রতিকেজিতে ৮০টাকা ও বেনাপোলে দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও শনিবার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। যদিও পূর্বের এলসি করা পেঁয়াজ আগের মূল্যেই ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে এখনও।

এদিকে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে। তবে দু’একটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা দরেও। সেখানেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। এছাড়াও বিভিন্ন মুদি দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে, ধোলাইপাড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ২২০-২৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা দরে। অবশ্য, দোকানভেদে দামের তারতম্য রয়েছে এই বাজারে।

যাত্রাবাড়ী আড়তের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ভারত পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করার খবরে সাপ্লাই কমে গেছে। এখন সাপ্লাই কমলে বাজারে তো দাম বাড়বেই। আমরা আড়তে ২২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যা মনে হচ্ছে, দাম আরও বাড়বে।

লালবাগের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজু জানান, বৃহস্পতিবার পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় কিনলেও শনিবার রাতে তা বেড়ে হয়েছে ২০৫ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। দাম বাড়তি হওয়ায় কম পরিমাণেই কিনছেন তিনি।

বিক্রেতারা দাবি করছেন, শ্যামবাজারের পাইকারি আড়ত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে তাদের। তবে বিক্রির দাম বাড়লেও লাভ কমেছে। তারা বলছেন, গাড়ি ভাড়া, পণ্যবহন খরচের কারণে লাভ কম হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বাড়লেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। কারওয়ান বাজারেই খুচরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও চায়নার পেঁয়াজ ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শনিবার দিনভর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার পরও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না।

ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু অভিযান নয় বরং আমদানীকারক ও আড়তদার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সুফল মিলবে বাজারে।

এদিকে পেঁয়াজ আগে কেনা থাকায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী কেজিতে দাম একটু কম রাখছেন। তবে নতুন আসা পেঁয়াজের দাম বেশিই রাখা হচ্ছে।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২৯ অক্টোবর বাড়তি রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে ভারত। চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও তা আরও তিন মাসের জন্য বাড়ানো হয়।

এ বিষয়ক আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, বিশ্বের যেকোনো দেশেই পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। তবে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম মূল্য ৮০০ ডলার রাখতে হবে। পরিবহন ও বীমা খরচ এ দামের সাথে অন্তর্ভুক্ত নয় বলেও জানানো হয়।

হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ‘ভারত সরকারের বেধে দেওয়া রফতানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার মূল্যেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

সরবরাহ পর্যাপ্ত, তবুও চড়া পেঁয়াজের বাজার

আপডেট সময় : ০৭:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দামের উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশের বাজারে। ইতোমধ্যেই ঢাকায় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে মসলাজাতীয় পণ্যটি। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। বাজারভেদে এই দাম একেক জায়গায় একেক রকম। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে।

পর্যাপ্ত সরবরাহে থাকলেও রাজধানীর বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম। ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে নজর রাখতে হবে আমদানীকারক ও আড়তদারদের ওপর। শনিবার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ছাড়াও ঘাটতি নেই আমদানি করা ভারত ও চায়নার পেঁয়াজের। এরপরও দাম ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের ৫৭টি টিম পৃথক এ অভিযান চালায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরকেন্দ্রিক বাজারে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও রপ্তানি বন্ধ এবং দেশের পেঁয়াজের মজুদ কম থাকাকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

দিনাজপুরের হিলিতে একরাতেই প্রতিকেজিতে ৮০টাকা ও বেনাপোলে দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও শনিবার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। যদিও পূর্বের এলসি করা পেঁয়াজ আগের মূল্যেই ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে এখনও।

এদিকে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে। তবে দু’একটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা দরেও। সেখানেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। এছাড়াও বিভিন্ন মুদি দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে, ধোলাইপাড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ২২০-২৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা দরে। অবশ্য, দোকানভেদে দামের তারতম্য রয়েছে এই বাজারে।

যাত্রাবাড়ী আড়তের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ভারত পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করার খবরে সাপ্লাই কমে গেছে। এখন সাপ্লাই কমলে বাজারে তো দাম বাড়বেই। আমরা আড়তে ২২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যা মনে হচ্ছে, দাম আরও বাড়বে।

লালবাগের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজু জানান, বৃহস্পতিবার পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় কিনলেও শনিবার রাতে তা বেড়ে হয়েছে ২০৫ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। দাম বাড়তি হওয়ায় কম পরিমাণেই কিনছেন তিনি।

বিক্রেতারা দাবি করছেন, শ্যামবাজারের পাইকারি আড়ত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে তাদের। তবে বিক্রির দাম বাড়লেও লাভ কমেছে। তারা বলছেন, গাড়ি ভাড়া, পণ্যবহন খরচের কারণে লাভ কম হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বাড়লেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। কারওয়ান বাজারেই খুচরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও চায়নার পেঁয়াজ ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শনিবার দিনভর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার পরও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না।

ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু অভিযান নয় বরং আমদানীকারক ও আড়তদার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সুফল মিলবে বাজারে।

এদিকে পেঁয়াজ আগে কেনা থাকায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী কেজিতে দাম একটু কম রাখছেন। তবে নতুন আসা পেঁয়াজের দাম বেশিই রাখা হচ্ছে।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২৯ অক্টোবর বাড়তি রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে ভারত। চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও তা আরও তিন মাসের জন্য বাড়ানো হয়।

এ বিষয়ক আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, বিশ্বের যেকোনো দেশেই পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। তবে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম মূল্য ৮০০ ডলার রাখতে হবে। পরিবহন ও বীমা খরচ এ দামের সাথে অন্তর্ভুক্ত নয় বলেও জানানো হয়।

হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ‘ভারত সরকারের বেধে দেওয়া রফতানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার মূল্যেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’