‘আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা বিএনপির চরিত্র’
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৪২ বার পড়া হয়েছে
আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা বিএনপির চরিত্র বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখন দেশের উন্নয়ন করছে, তখন বিএনপির সন্ত্রাসীরা নাশকতা করে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে সিলেটে পৌঁছে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় তা বুঝেই দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকার প্রস্তাব আনুযায়ী আমরা গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলে ২০০১ সালে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি এ প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হয়। এই বিএনপি এখন অগ্নিসন্ত্রাস করছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারম্যান কে? দুর্নীতির মামলার আসামি। এতিমের টাকা আত্মসাতকারী। আরেকজন লন্ডনে বসে অগ্নিসন্ত্রাসের নির্দেশ দিচ্ছে। এরা কি মানুষ? এদের কাছে মানবিকতা বলতে কিছু নেই।’
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই দেশের একজন মানুষও যেন ভূমিহীন না থাকে। আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন করেছি। আমাদের সময়ে শিক্ষার হারও বেড়েছে। আমাদের আমলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।’
আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা যখন দেশের দায়িত্ব নেন তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। একটি ভঙ্গুর দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে তিনি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার বাবা, মা ও ভাইদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভোট বন্ধ করতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার নির্দেশ দেয়, আর দেশে বসে আগুন দেয়, এত সাহস কোথায় পায়? যারা আগুন দিতে আসবে তাদের হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছে। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধু তাদের অধিকার দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। আমরা দেশের রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করেছি। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা চেষ্টা করে চলেছি। এ দেশে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। ৮ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিয়েছি। ২১ জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন নেই। এ সিলেটে কেউ ভূমিহীন নেই। যদি কেউ বাদ পড়ে তাদের ঘরবাড়ি করে দেব।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জিয়াউর রহমান ডিক্টেটরের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশের সংবিধান স্থগিত করেছে। ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে। আর আমাদের আইনি অধিকারটুকু কেড়ে নেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন করে যাচ্ছি। অথচ বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সালে ৩২৫২টি গাড়ি ভাঙচুর ও শত শত প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বাণিজ্য করেই ধ্বংস করেছে নির্বাচন। একজন লন্ডনে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আরেকজন গুলশানে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আবার পল্টন থেকেও আরেকবার বিক্রি করেছে। তারা এভাবে নির্বাচনকে বাণিজ্যে পরিণত করে ধ্বংস করেছে নির্বাচনকে। উল্লেখ্য, জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে সিলেটে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি। পরে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান রহমতুল্লাহর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। নির্বাচনের আগে দলীয় প্রধানের এই সফরকে কেন্দ্র করে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।
নগরী জুড়ে বিজার করছে উৎসবের আমেজ। আওয়ামী লীগের জনসভার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলের স্বেচ্ছাসেবকরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর আজ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট, রাজশাহী বিভাগের নাটোর ও পাবনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে ভার্চুযালি নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া আগামী ২৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার বরিশাল জেলা সদরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এরপর, ৩০ ডিসেম্বর, শনিবার গোপালগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) এবং মাদারীপুর-৩ নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি।