আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না পেনশন স্কিম
- আপডেট সময় : ০৮:০১:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
আগ্রহ কমছে পেনশন স্কিমে। ব্যাংকের চেয়ে কম সুদ, মেয়াদ শেষে এককালীন কোনো অর্থ না পাওয়ার বিধান এবং ডলারের তুলনায় টাকার উচ্চহারে অবমূল্যায়নের কারণে প্রবাসীসহ বাংলাদেশিদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না সর্বজনীন পেনশন স্কিম। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম এক মাসে ৩৯৮ জন প্রবাসী এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাঁদা পরিশোধ করেন। কিন্তু এ হারও পরে বজায় থাকেনি, ফলে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরের তিন মাসে এই স্কিমে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৯১ জন প্রবাসী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরে স্কিমগুলোতে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। চালুর পর বিপুল পরিমাণ প্রবাসী এই পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবেন বলে আশা করেছিলেন পেনশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সে প্রত্যাশা পূরণ এখনো হওয়া বাকি। এই অবস্থায়, পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর স্কিমগুলোতে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে সুদহার পর্যালোচনা, ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুফল সম্পর্কে প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনা, এবং দেশের করপোরেট হাউজগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্যোগ।
গত ১৭ আগস্ট চালু করা সর্বজনীন পেনশনে সরকার চারটি স্কিম রেখেছে, এগুলো হলো— প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারিখাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা’, এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য ‘সমতা’। এই চারটি স্কিমে প্রথম মাসে ১২ হাজার ৯৭০ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পরের তিন মাসে এটি বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ১৬৬ জনে। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেনশনের স্কিমগুলোয় চাঁদা জমা পড়েছে প্রায় ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগের এক জন কর্মকর্তা বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তদের জন্য প্রায় আট শতাংশ হারে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক বর্তমানে মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে। তাছাড়া, অন্যান্য সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করলে উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি মূল আমানতের অর্থও ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
একজন ব্যক্তি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিক কিস্তি জমা দেওয়ার পর মাসিক পেনশন পাওয়া শুরু করবে। পেনশন ব্যবস্থায় স্কিমগুলোতে যে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিও ফ্লেক্সিবল (পরিবর্তনযোগ্য)। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সময় সময় এটি পুনঃনির্ধারণ করবে। নির্বাচনের পর এক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে সূত্র জানায়।
এছাড়া, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি ‘নগদ’-এর সঙ্গেও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে মোবাইলের মাধ্যমেও গ্রাহকরা সহজে সর্বজনীন পেনশনের চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে গত ১৫ নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে একটি সভা করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। সভায় জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশনের গতি ‘অত্যন্ত মন্থর’। বিশেষত, ‘প্রবাস’ স্কিমের সাবস্ক্রিপশন একেবারেই সীমিত। প্রবাসীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে নিবন্ধন সহজ করাসহ তারা যাতে সহজে চাঁদা পরিশোধ করতে পারেন, সেজন্য অনলাইন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করার পরামর্শ দেয়া হয় সভায়।