নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ০৫:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪১৫ বার পড়া হয়েছে
ইতিহাস গড়ার মূল ভিত্তিটা তৈরি করে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের পুরো ইনিংসজুড়েই চাপে রেখে মাত্র ১৩৪ রানে আটকিয়ে রাখেন মেহেদী-শরিফুলরা। ১৩৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে বাংলাদেশ চাপে পড়লেও লিটন-সৌম্য-তাওহীদের ব্যাটিংয়ে ৮ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়।
বুধবার নেপিয়ারে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান করেছে কিউইরা।
প্রথম ওভারে মাহেদী হাসানকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কাজেও আসে সেটি। টিম সেইফার্টের ডানহাতি বোলিংয়ে দুর্বলতা ছিল, এবারও তিনি আউট হয়ে যান মাহেদীর বলে। তিন বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি সেইফার্ট, হন বোল্ড।
পরের ওভারে এসে ঝড়ই বইয়ে দেন শরিফুল। প্রথম বল ডট দেওয়ার পর দ্বিতীয়টিতেই উইকেট পেয়ে যান তিনি। ফিন অ্যালেন ৩ বলে ১ রান করে ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে। পরের বলে আরও এক উইকেট নিয়ে শরিফুল হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান। শরিফুল করা বল ব্যাট উঁচিয়ে ছেড়ে দেন গ্লেন ফিলিপস, বল লাগে তার প্যাডে। শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি, তবে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারশেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ২ রানে ৩ উইকেট। এমন হতভম্ব হওয়া শুরুর পর প্রতিআক্রমণের চেষ্টা করেন ড্যারল মিচেল। তানজিম হাসান সাকিবের করা তৃতীয় ওভারে আসে সাত রান, শরিফুলের করা পরের ওভারে দুই বাউন্ডারিতে ৯ রান নেন মিচেল।
তবে তার এই প্রতিরোধ থামিয়ে দেন মাহেদী হাসান। গতবছর সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন তিনি। ফিরে আসার ম্যাচটা মাহেদী স্মরণীয় করে রাখেন আরও এক উইকেটে। এবার তার হালকা ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হন মিচেল। ১৫ বলে ১৪ রান করেন তিনি।
উইকেট হারালেও দলকে চাপে পড়তে দেননি মার্ক চাপম্যান। তানজিম সাকিবের বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৪ রান নেন। পাওয়ার প্লে শেষ পর্যন্ত খুব একটা মন্দ হয়নি। ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান করে তারা।
পাওয়ার প্লের পরের ওভারগুলোতে রান হয়নি খুব একটা। ওই চাপ থেকে চাপম্যানকে আউট করেন রিশাদ হোসেন। তার বলে ডিপ কাভারে দাঁড়িয়ে চাপম্যানের ক্যাচ নেন তানজিম হাসান সাকিব। ১৯ বলে ১৯ রান করে আউট হন চাপম্যান।
এরপর জিমি নিশাম ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। চার-ছক্কার ফুলঝুঁড়ি ছোটান তিনি। ১৭তম ওভারে অবশ্য নিশামকে আউট করেন মোস্তাফিজ। ইয়র্কার করতে গিয়ে দেওয়া তার ফুলটসে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ কাভারে দাঁড়ানো আফিফকে ক্যাচ দেন তিনি। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ বলে ৪৮ রান করেন নিশাম।
দেড়শ ছাড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও পরে হয়নি সেটি। ২২ বলে ২৩ রান করে মিচেল স্যান্টনার দলের রান নিয়ে যান ১৩০ ছাড়িয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট নেন মাহেদী হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। এক উইকেট করে পান তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেন।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারে ছক্কা হাঁকান রনি তালুকদার, সবমিলিয়ে আসে সাত রান। কিন্তু পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এডাম মিলনেকে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি, মিড অনে ক্যাচ নেন টিম সাউদি। ৭ বলে ১০ রান করে আউট হন তালুকদার।
তিনে নেমে লিটন দাসের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তাদের ২০ বলে ২৫ রানের জুটি ভাঙে জিমি নিশামের বলে শান্ত স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে।
এরপর ক্রিজে এসে ছোটখাটো একটা ঝড়ই তোলেন সৌম্য সরকার। ওয়ানডেতে পাওয়া সেঞ্চুরির আত্মবিশ্বাসটা এখনও তার তরতাজা, শটগুলোতেও ছিল তার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সিয়ারসের বল মিড উইকেট দিয়ে চার মারেন। পরের বলেও একই রকম শট খেলতে যান, কিন্তু এবার বোলার একটু জোরে করেন; আউট হয় যান ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করা সৌম্য।
এরপর হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বাধেন লিটন। তার সঙ্গীরা যখন আক্রমণাত্মক, তখন কিছুটা নিশ্চুপই ছিলেন লিটন। ১৮ বলে ১৯ রান করে হৃদয় আউট হন, ব্যর্থ হন আফিফও। ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকে সমীকরণ। ১৫তম ওভারের শেষ বলে লিটনকে এলবিডব্লিউ আউট দেন আম্পায়ার, রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে পায়ে চোটও পান রান নিতে গিয়ে। সেসব ছাপিয়ে এসে ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকান লিটন। পরের বলে স্কুপ করেন তিনি, ইশ সোধি বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচটি প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন; কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে শুরুতে পা ও পরে পেরিয়ে যান তিনি।
সহজ হয়ে আসে বাংলাদেশের সমীকরণ। দুই ওভারে দরকার কেবল ১০ রান। ১৯তম ওভারের প্রথমটি ডট দিলেও পরেরটিতে ছক্কা হাঁকান মাহেদী হাসান, এরপর দুই রান নেন; চতুর্থ বলে চার মেরে নিশ্চিত করেন স্মরণীয় এক জয়ের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দশম টি-টোয়েন্টিতে এসে জয় পেলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল নেন তিন উইকেট। দুটি করে উইকেট পান মেহেদি ও মুস্তাফিজ। নিউজিল্যান্ডের মাঠে তাদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৩৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৩৪/৯। (অ্যালেন ১, শেফার্ড ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিলনে ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, সাকিব ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)।
বাংলাদেশ : ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫। (লিটন ৪২*, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, শেখ মেহেদি ১৯ ; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিলনে ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)।
ফল : বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জয়ী