রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম: শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ০৬:০০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৫৪ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে ও রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম, তারা কখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।’
মাদারীপুরের কালকিনিতে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে শনিবার আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নয়, বিদেশিদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি’।
২০০১ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে প্রস্তাব করা হলো গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমরা ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব বিএনপির কাছে দেওয়া হলো। বিএনপি ওই প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে দেশের সম্পদ বিক্রি করতে রাজি হইনি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে ভোট চুরি করে। আর এই ভোট চুরির অপরাধে আন্দোলন হয়, সংগ্রাম হয়, জনগণ প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদের ফলে ঠিক ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। ভোট চুরির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিল। এরপরে যে নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
শনিবার বিকেলে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভা মঞ্চে যোগ দেন শেখ হাসিনা। রাজনীতির ৪৩ বছরে প্রথমবারের মতো কালকিনিতে গেলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালের জুনে সরকার গঠন করি। ২০০১ সালের জুলাইতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এরই মধ্যে খাদ্য ঘাটতি ৪০ লাখ মেট্রিক টন পূরণ করে ২৬ মেট্রিক টন খাদ্য গোলায় মজুত রেখে যাই। বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি করি। স্বাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে ৬৫.৫ ভাগে উন্নীত করি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে জনগণের দোরগড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেই, বিনামূল্যে ওষুধ দিতে শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা দেবে উন্নয়ন, নৌকায় দেবে সব। কাজেই নৌকা মার্কা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা পরপর তিনবার একটানা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, প্রতিটি ঘর আজ আলোকিত করে দিয়েছি। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। নৌকায় এদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে সেবা করার সুযোগ দেবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন যারা ঠেকাতে চায়, ওই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী, ওরা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেটে থেকে তৈরি করা দল। মানুষের কল্যাণ করতে পারে না, মানুষ খুন করতে পারে। রেলে আগুন দিয়েছে, মা বাচ্চা কোলে করে আগুনে পুড়ে মরে গেছে। যে ছবি সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু তাদের বিবেকে কিছু লাগে না। ওরা মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী দল বিএনপি, আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াত। এদের কি রাজনীতি করার অধিকার আছে? তারাতো মানুষ পোড়ায়, খুনির দল। জিয়াউর রহমান খুনি, খালেদা জিয়া খুনি, তারেক জিয়া খুনি। ওই খুনিদের রাজত্ব আর হবে না এ দেশে। ওদের বিচার হবে। এতগুলো মানুষ হুকুম দিয়ে মারছে, সেই বিচার একদিন বাংলাদেশের মাটিতে হবে।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, আবার ক্ষমতায় এলে লন্ডন থেকে ধরে এনে তারেক জিয়াকে মানুষ পোড়ানোর জন্য সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বিএনপি–জামায়াতের ক্ষমতায় আসার আর কোনো যোগ্যতা নেই। কারণ, তারা খুনিদের দল, যুদ্ধাপরাধীদের দল।
গতকাল শুক্রবার রাতে শেখ হাসিনা সড়কপথে বরিশাল থেকে টুঙ্গিপাড়া আসেন। আজ শনিবার সকাল থেকেই টুঙ্গিপাড়া জনসভায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। এতে জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে বাসে-ট্রাকে এবং পায়ে হেঁটে জনসভাস্থলে আসেন।