০৮:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘটনাবহুল ২০২৩ বিদায় নিচ্ছে আজ

আজ পশ্চিমে লালিমা ছড়িয়ে নিকষ আঁধারের নেকাব টেনে সূর্য বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। ঝরা পল্লবের মতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়বে ‘২০২৩’। ফেলে আসা বছরটি এখন ‘পুরোনো সেই দিনের কথা।’ নববর্ষকে আহ্বান জানিয়ে ফুরাবে এ বছরের সব লেনদেন। বিদায় অভাবনীয় আলোড়ন সৃষ্টিকারী ২০২৩।

অতঃপর কালপ্রভাতে ‘রবির কর’ দশ দিগন্তে আলোক রেখা ছড়িয়ে চোখ মেলবে নতুন দিনে। অভিবাদন নতুন বর্ষ ২০২৪। হ্যাপি নিউ ইয়ার। পুরাতন স্বপ্নগুলো বিচূর্ণ হলে নতুন স্বপ্ন সামনে এগিয়ে আসে। যে অনুক্ষণ, দিন যায়—তা আর ফেরে না। শনি-রবি বা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অক্ষয়-অব্যয় নামগুলো বারবার ফিরে আসে কিন্তু যে সালটি একবার বিদায় নেয় তার আর কখনো প্রত্যাবর্তন হয় না। ইতিহাসের পাতায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। ধাবমান সময়ের পথে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যায়। তবুও মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বুনে আগামী দিনের। আশার ফানুস ওড়ায় নতুন দিনের।

নানা প্রতিকূলতা, সংকট, অর্জন ও সম্ভাবনার পথ দেখিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। বিদায়ী বছরের অনেকটা জুড়ে আলোচনায় ছিলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা খাতের সংকট। বছর জুড়ে প্রস্তুতির পর ২০২৩ এর শেষ লগ্নে এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে এগুচ্ছে দেশ।

খ্রিষ্ট বর্ষ পরিক্রমায় শেষ হতে চলেছে ২০২৩। বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন রসায়ন। যা নির্বাচনী বছরে নানামুখী আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকার অতি আগ্রহী ভূমিকা যেমন আলোচনায় ছিল, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেলফি- দেশের রাজনীতিতে আলোচিত ঘটনা।

বছরের প্রথম ভাগে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বছর জুড়ে আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সংকট। নতুন বছরে জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটা পরিবর্তনের প্রত্যাশা শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ।

তিনি জানান, বিদায়ী বছরে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের নিম্নমান ও ভুল নিয়ে যেমন সমালোচনা হয়েছে, তেমনি শিক্ষাক্রমের সমালোচনাও হয়েছে ঘুরেফিরে।

বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। সংকট যেমন ছিলো তেমনি সম্ভাবনাও অপার বলে জানান শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দল বহুমুখী সমঝোতায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলীয় কোন্দলে এবার নির্বাচনের বাইরে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ। বিদায়ী বছরে বিএনপির রাজনৈতিক সাফল্য হচ্ছে তাদের সমমনা ২৩টি দলকে যুগপৎ আন্দোলনে এক ছাতার নিচে আনা।

২০২৩ সালের দিকে ফিরে তাকালে ক্রিকেটের আরও অনেক অর্জনের পরও ক্রিকেট বিশ্বকাপে শোচনীয় ব্যর্থতাই সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন ঘিরে সারা বছরই উত্তাপ-উত্তেজনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৬৩টি রাজনৈতিক দল। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি তপসিল ঘোষণার পর গতি পায়। তারা দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে।

এরই মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে সর্বসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদধারীসহ বেশ কয়েক জন জননেতা দল ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সাংগঠনিক ও ভোটের মাঠে এই নেতাদের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে শেষ পর্যন্ত জোট ছেড়ে চলে যাওয়া আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করার পাশাপাশি বছর জুড়েই দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ইস্যুটিও ছিল বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রে।

বিদায়ি বছরে আমরা হারিয়েছি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আবদুল মালিক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চিত্রনায়ক ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী প্রমুখকে। এত কিছুর পরেও জীবনযাত্রা থেমে নেই। এখন জড়তা, ভয়কে পাশে ঠেলে আবার জাগছে মানুষ নতুন স্বাভাবিকতায়। সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে থাকে কিছু আনন্দ-বেদনার কাব্য, আশা আর অপরিমেয় প্রত্যাশা।

ঘটনাবহুল ২০২৩ বিদায় নিচ্ছে আজ

আপডেট : ০৪:০৭:১৫ অপরাহ্ন, রোববার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

আজ পশ্চিমে লালিমা ছড়িয়ে নিকষ আঁধারের নেকাব টেনে সূর্য বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। ঝরা পল্লবের মতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়বে ‘২০২৩’। ফেলে আসা বছরটি এখন ‘পুরোনো সেই দিনের কথা।’ নববর্ষকে আহ্বান জানিয়ে ফুরাবে এ বছরের সব লেনদেন। বিদায় অভাবনীয় আলোড়ন সৃষ্টিকারী ২০২৩।

অতঃপর কালপ্রভাতে ‘রবির কর’ দশ দিগন্তে আলোক রেখা ছড়িয়ে চোখ মেলবে নতুন দিনে। অভিবাদন নতুন বর্ষ ২০২৪। হ্যাপি নিউ ইয়ার। পুরাতন স্বপ্নগুলো বিচূর্ণ হলে নতুন স্বপ্ন সামনে এগিয়ে আসে। যে অনুক্ষণ, দিন যায়—তা আর ফেরে না। শনি-রবি বা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অক্ষয়-অব্যয় নামগুলো বারবার ফিরে আসে কিন্তু যে সালটি একবার বিদায় নেয় তার আর কখনো প্রত্যাবর্তন হয় না। ইতিহাসের পাতায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। ধাবমান সময়ের পথে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যায়। তবুও মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বুনে আগামী দিনের। আশার ফানুস ওড়ায় নতুন দিনের।

নানা প্রতিকূলতা, সংকট, অর্জন ও সম্ভাবনার পথ দেখিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। বিদায়ী বছরের অনেকটা জুড়ে আলোচনায় ছিলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা খাতের সংকট। বছর জুড়ে প্রস্তুতির পর ২০২৩ এর শেষ লগ্নে এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে এগুচ্ছে দেশ।

খ্রিষ্ট বর্ষ পরিক্রমায় শেষ হতে চলেছে ২০২৩। বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন রসায়ন। যা নির্বাচনী বছরে নানামুখী আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকার অতি আগ্রহী ভূমিকা যেমন আলোচনায় ছিল, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেলফি- দেশের রাজনীতিতে আলোচিত ঘটনা।

বছরের প্রথম ভাগে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বছর জুড়ে আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সংকট। নতুন বছরে জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটা পরিবর্তনের প্রত্যাশা শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ।

তিনি জানান, বিদায়ী বছরে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের নিম্নমান ও ভুল নিয়ে যেমন সমালোচনা হয়েছে, তেমনি শিক্ষাক্রমের সমালোচনাও হয়েছে ঘুরেফিরে।

বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। সংকট যেমন ছিলো তেমনি সম্ভাবনাও অপার বলে জানান শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দল বহুমুখী সমঝোতায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলীয় কোন্দলে এবার নির্বাচনের বাইরে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ। বিদায়ী বছরে বিএনপির রাজনৈতিক সাফল্য হচ্ছে তাদের সমমনা ২৩টি দলকে যুগপৎ আন্দোলনে এক ছাতার নিচে আনা।

২০২৩ সালের দিকে ফিরে তাকালে ক্রিকেটের আরও অনেক অর্জনের পরও ক্রিকেট বিশ্বকাপে শোচনীয় ব্যর্থতাই সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন ঘিরে সারা বছরই উত্তাপ-উত্তেজনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৬৩টি রাজনৈতিক দল। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি তপসিল ঘোষণার পর গতি পায়। তারা দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে।

এরই মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে সর্বসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদধারীসহ বেশ কয়েক জন জননেতা দল ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সাংগঠনিক ও ভোটের মাঠে এই নেতাদের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে শেষ পর্যন্ত জোট ছেড়ে চলে যাওয়া আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করার পাশাপাশি বছর জুড়েই দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ইস্যুটিও ছিল বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রে।

বিদায়ি বছরে আমরা হারিয়েছি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আবদুল মালিক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চিত্রনায়ক ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী প্রমুখকে। এত কিছুর পরেও জীবনযাত্রা থেমে নেই। এখন জড়তা, ভয়কে পাশে ঠেলে আবার জাগছে মানুষ নতুন স্বাভাবিকতায়। সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে থাকে কিছু আনন্দ-বেদনার কাব্য, আশা আর অপরিমেয় প্রত্যাশা।