১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাল নতুন মন্ত্রিসভার শপথ, থাকছে নতুন মুখের চমক

  • আহমেদ সিরাজ
  • আপডেট : ০৬:৩৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৮১ দেখেছেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেন আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে। সংসদ ভবনের শপথকক্ষে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এমপিদের শপথ পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টি শুরুতে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারাও শপথ নেন।

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছে নতুন মুখের চমক। চলমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন অনেকেই।এ রকমই আভাস পাওয়া গেছে।

সবশেষ মন্ত্রিসভায় ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রীসহ মোট ৪৪ জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ৩ জন এবারের নির্বাচনে দল থেকে মনোনায়ন পাননি। আর ৩ জন নির্বাচনে হেরেছেন। সরকারের চলমান উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ত্বরান্বিত করতে আগামী মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ আসবে বলে জানা গেছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন, তারা হলেন- ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

ঐতিহ্যবাহী দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, এবারও কেবল আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের নিয়েই মন্ত্রিসভা হবে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সবশেষ ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। বয়স, নানা বিতর্ক বা অদক্ষতার দায়ে তারা ঝরে পড়তে পারেন। এরমধ্যে টানা তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন- এমন বর্ষীয়ান নেতাও ছিটকে যেতে পারেন।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এবার মন্ত্রিসভায় একেবারে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন- এমন বেশ ক’জন নতুন মুখ থাকতে পারেন। এরমধ্যে একাধিক সাবেক আমলার নাম আলোচনায় আছে। তবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন তরুণ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তবে শপথের জন্য নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের তালিকা এখনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসেনি বলে জানান তিনি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেওয়ার পরপরই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে সবই নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের। ফলে যারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, কাল সকাল থেকে হয়তো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদের ফোন করে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

এবার দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে অনেকের। অনেকে বাদ পড়তে পারেন। এরই মধ্যে ছয়জনের বাদ পড়ার বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রমোশন হতে পারে বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর।

কাল নতুন মন্ত্রিসভার শপথ, থাকছে নতুন মুখের চমক

বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিভিন্ন সেক্টরে তাদের বেশ কাজ রয়েছে। তাদের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসাদের সুনির্দিষ্ট সেক্টরে কাজে লাগাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে আলোচনায় সাবেক আমলা ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, আইইবির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আইনের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেটরত্ন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

এর বাইরে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নও আলোচনায় আছেন। কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রুমানা আলী, ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলসহ অনেকেই আলোচনায় আছেন।

এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও আসতে পারেন এবারের মন্ত্রিসভায়।

পুরোনোদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ অনেকে থাকছেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে।

পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়নেই বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এই ছয়জন নতুন মন্ত্রিসভায় আসছেন না এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত।

তবে আরও কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন এই মন্ত্রিসভা থেকে। এর মধ্যে বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠানটা বঙ্গভবনে হয়। এ বছরও বঙ্গভবনেই হবে। প্রস্তুতির মধ্যে কি কি বিষয় রয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে শপথ হয়, সেখানকার একটা প্রস্তুতি রয়েছে। ইনভাইটেশনের একটি তালিকা করতে হয়, সেই তালিকা করছি। ইনভাইটেশন কার্ড করতে হয়, সেটি আমরা করছি। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এটার জন্য কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, সেটা করছি। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গভবনে প্রথমে রাষ্ট্রপতি শপথ পড়াবেন প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

গত রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও অনিয়মের অভিযোগে ময়মনসিংহ–৩ আসনে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া নওগাঁ–২ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত করে ইসি। এই আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।

মোট ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করে ইসি। এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২ আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, কল্যাণ পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া এবার চমক জাগিয়ে ৬২টি আসনে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এরই মধ্যে টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপানসহ অনেক দেশ।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গত ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হয় ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর।

এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১৭ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা। এরপর গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে প্রচার।

এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি।

কাল নতুন মন্ত্রিসভার শপথ, থাকছে নতুন মুখের চমক

আপডেট : ০৬:৩৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেন আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে। সংসদ ভবনের শপথকক্ষে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এমপিদের শপথ পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টি শুরুতে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারাও শপথ নেন।

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছে নতুন মুখের চমক। চলমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন অনেকেই।এ রকমই আভাস পাওয়া গেছে।

সবশেষ মন্ত্রিসভায় ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রীসহ মোট ৪৪ জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ৩ জন এবারের নির্বাচনে দল থেকে মনোনায়ন পাননি। আর ৩ জন নির্বাচনে হেরেছেন। সরকারের চলমান উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ত্বরান্বিত করতে আগামী মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ আসবে বলে জানা গেছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন, তারা হলেন- ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

ঐতিহ্যবাহী দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, এবারও কেবল আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের নিয়েই মন্ত্রিসভা হবে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সবশেষ ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। বয়স, নানা বিতর্ক বা অদক্ষতার দায়ে তারা ঝরে পড়তে পারেন। এরমধ্যে টানা তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন- এমন বর্ষীয়ান নেতাও ছিটকে যেতে পারেন।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এবার মন্ত্রিসভায় একেবারে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন- এমন বেশ ক’জন নতুন মুখ থাকতে পারেন। এরমধ্যে একাধিক সাবেক আমলার নাম আলোচনায় আছে। তবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন তরুণ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তবে শপথের জন্য নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের তালিকা এখনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসেনি বলে জানান তিনি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেওয়ার পরপরই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে সবই নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের। ফলে যারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, কাল সকাল থেকে হয়তো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদের ফোন করে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

এবার দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে অনেকের। অনেকে বাদ পড়তে পারেন। এরই মধ্যে ছয়জনের বাদ পড়ার বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রমোশন হতে পারে বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর।

কাল নতুন মন্ত্রিসভার শপথ, থাকছে নতুন মুখের চমক

বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিভিন্ন সেক্টরে তাদের বেশ কাজ রয়েছে। তাদের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসাদের সুনির্দিষ্ট সেক্টরে কাজে লাগাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে আলোচনায় সাবেক আমলা ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, আইইবির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আইনের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেটরত্ন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

এর বাইরে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নও আলোচনায় আছেন। কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রুমানা আলী, ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলসহ অনেকেই আলোচনায় আছেন।

এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও আসতে পারেন এবারের মন্ত্রিসভায়।

পুরোনোদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ অনেকে থাকছেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে।

পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়নেই বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এই ছয়জন নতুন মন্ত্রিসভায় আসছেন না এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত।

তবে আরও কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন এই মন্ত্রিসভা থেকে। এর মধ্যে বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠানটা বঙ্গভবনে হয়। এ বছরও বঙ্গভবনেই হবে। প্রস্তুতির মধ্যে কি কি বিষয় রয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে শপথ হয়, সেখানকার একটা প্রস্তুতি রয়েছে। ইনভাইটেশনের একটি তালিকা করতে হয়, সেই তালিকা করছি। ইনভাইটেশন কার্ড করতে হয়, সেটি আমরা করছি। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এটার জন্য কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, সেটা করছি। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গভবনে প্রথমে রাষ্ট্রপতি শপথ পড়াবেন প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

গত রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও অনিয়মের অভিযোগে ময়মনসিংহ–৩ আসনে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া নওগাঁ–২ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত করে ইসি। এই আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।

মোট ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করে ইসি। এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২ আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, কল্যাণ পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া এবার চমক জাগিয়ে ৬২টি আসনে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এরই মধ্যে টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপানসহ অনেক দেশ।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গত ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হয় ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর।

এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১৭ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা। এরপর গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে প্রচার।

এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি।