ফিলিস্তিনের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন তাঁরা
- আপডেট সময় : ০৮:৩২:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৬ বার পড়া হয়েছে
হংকংয়ের জালে যখন ফিলিস্তিন একের পর এক গোল দিচ্ছে, তখনও নিজ দেশে আছড়ে পড়ছিল ইসরায়েলের বোমা। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে জীবনযাপন করাটাই দায়, সেখানে ফুটবলটা নিতান্তই বিলাসিতা। তবে ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা এশিয়ান কাপে এসেছে। উপহার দিয়েছে নান্দনিক ফুটবল। আর গ্রুপপর্বের শেষদিনে তারা তৈরি করেছে ইতিহাস।
যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের কাছে জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এশিয়ান কাপে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছিলেন ফিলিস্তিনের জাতীয় দলের ফুটবলাররা। কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েই থেমে থাকেননি তাঁরা। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে জয় পেয়ে কথা রেখেছেন মুসাব আল বাত্তাতরা।
কাতারে গ্রপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ওদে দাবাঘের জোড়া গোলে হংকংকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জনগণের অনেকেই কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছেন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের এ ঐতিহাসিক জয় দেশের জনগণের কিছুটা হলেও আনন্দের সঞ্চার করবে। দেশটির অধিনায়ক মুসাব তেমনটাই মনে করেন।
এবারের এশিয়ান কাপে ফিলিস্তিন যখনই খেলতে নেমেছে, মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে। এর ব্যতিক্রম হয়নি গতকালের হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচেও। আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৬৫৬৮ জনের প্রায় সকলেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পক্ষে গলা ফাঁটিয়েছেন।
গ্যালারি থেকে এমন সমর্থন পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছে ফিলিস্তিনের ফুটবলাররাও। এর প্রমাণ মিলেছে মাঠের খেলায়। হংকংকে পুরো ম্যাচে কোনো সুযোগই দেয়টি ম্যাক্রাম দাবাউবের শিষ্যরা।
ম্যাচে ৬৮ ভাগ সময় বল নিজেদের পায়ে রেখেছে ফিলিস্তিন। হংকংয়ের গোল মুখে শট নিয়েছে ১৯টি। লক্ষ্যে থাকা ৭ শটের তিনটিতে সফল হয়েছে। ম্যাচের ১২ মিনিটে গোল খাতা খোলেন দাবাঘ। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটের মধ্যে ফিলিস্তিনের হয়ে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জায়েদ কুনবার। ম্যাচের ৬০ মিনিটে হংকংয়ের কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন দাবাঘ। হংকংয়ের গোলরক্ষক কে উইং সে বাধা হয়ে না দাঁড়ালে স্কোরলাইন আরো বড় হতে পারত।
এ জয়ে তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের তৃতীয় হয়েছে ফিলিস্তিন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরব আমিরাতের পয়েন্টও সমান চার। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে দেশটি। তিন ম্যাচে পূর্ণাঙ্গ নয় পয়েন্ট ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে আছে ইরান।
ছয় গ্রুপের টুর্নামেন্টে প্রতিটি গ্রুপের সেরা দুই দল নকআউট পর্ব খেলবে। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই ফিলিস্তিনের। প্রতিটি গ্রুপের তিনে থাকা দলগুলোর মধ্যে সেরা চার দলও সুযোগ পাবে শেষ ষোলোতে। তৃতীয় স্থানে সেরা চারের একটি হওয়ায় নক পর্বে উঠেছেন দাবাউর শিষ্যরা।
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অনেক খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারা নিজেদের স্বজন হারিয়েছেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফুটবল দিয়েই নিজেদের জনগণকে সান্ত্বনা দেওয়ার কথা বলেছিলেন তারা। সেই কথাই তারা রাখলেন শেষ পর্যন্ত। শেষ ষোলোতে তাদের প্রতিপক্ষ হট ফেবারিট এবং টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার।
ম্যাচের আগে আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল। দোহাতে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা মাত্রই মাঠে নেমে ফিলিস্তেনের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে উদযাপনে মাতেন তাঁরা। দেশটির অধিনায়ক মুসাব ম্যাচ পরবর্তী জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের জনগণকে দেওয়া কথা রেখেছেন তাঁরা।
ম্যাচ শেষে ফিলিস্তিন অধিনায়ক মুসাব আল বাত্তাত বলেন, এই পারফরম্যান্স মূলত নিজ দেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে, ‘আমরা একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে চেয়েছি। আমাদের সব ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল আসরে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। আর সেটা কেবল নিছক স্থান পূরণের জন্য না বরং নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দেওয়ার জন্য।’
মুসাব বলেছেন, ‘যারা আমাদের সমর্থন করছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনের ভেতরে বা বাইরে… যারা আমাদের সমর্থন করছে, অনুসরণ করছে, আমরা তাঁদের মুখে হাসি ফোঁটাতে পেরেছি।’