কেটে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ, বাড়বে তাপমাত্রা
- আপডেট সময় : ০৮:০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪১৮ বার পড়া হয়েছে
তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। তবে সারাদেশেই তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বর্তমানে দেশের রংপুর বিভাগের পুরো অঞ্চলে বইছে মৃদু মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ। এই বিভাগ ছাড়া দেশের অন্যন্য অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে।
রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠান্ডা বাতাস। সব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে রংপুর বিভাগের আট জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার সকালে তীব্র শীতের কারণে রংপুর বিভাগের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়। রংপুর বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কর্মসূচি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম।
মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শীত ও ঠান্ডায় তাপমাত্রা কমে গেলে আবারও যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কর্মসূচি চালু করা হবে। আর শীতে গরম কাপড় পরে শিশুদের বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বলা হয়েছে, ভোর ৬টায় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র মোতাবেক ও রংপুর বিভাগের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় জানায়, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হলে স্কুল-কলেজের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ থাকবে। কোনো জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রির নিচে নামে, সেক্ষেত্রে সেই জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে।
হাড়কাঁপানো শীতে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, গতকাল রাতে দেশের বেশকিছু জেলায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
আজ দেশের সর্বনিম্ন দিনাজপুরে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ধরণের তাপমাত্রা আগামী দুই দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। তবে এর পর থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সে অনুযায়ী জানুয়ারি জুড়েই শীতের প্রকোপ থাকতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে মেঘ আছে। উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার দাপট কমেনি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিভাগের শৈত্য প্রবাহ পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে এই বিভাগের শুধুমাত্র নওগার বদলগাছিতে বইছে শৈত্য প্রবাহ। এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে।
আজ ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ৩, যশোরে ১১ দশমিক ৮, কুষ্টিয়ায় ১২ দশমিক ৬ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
পঞ্চগড়ে টানা চার দিন ধরে চলছে মৃদু থাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিদিন ভোর থেকেই শুরু হয় ঘনকুয়াশা। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এর আগে বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি।
এদিকে কয়েকদিন ধরেই রাতভর ঘনকুয়াশা থাকলেও সকালের দিকে কুয়াশা কমে আসে। সারাদিন হালকা কুয়াশার সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন থাকে চারদিক। বুধবার দুপুরের দিকে অল্প সময় সূর্যের আলো দেখা যায়। তবে বিকেলের মধ্যেই আবারও কুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি। দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি।’
তিন দিনের আবহাওয়া
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আবহাওয়া অধিদপ্তর সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার (৩ দিন) পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এতে আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে।
প্রথম দিনের (২৫ জানুয়ারি) পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। নওগাঁ জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় সকাল ৬টায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। আর রাজধানীতে বাতাসের গতি উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। এদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিট।
দ্বিতীয় দিনের (২৬ জানুয়ারি) পূর্বাভাসে জানানো হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তৃতীয় দিনের (২৭ জানুয়ারি) আভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় জানানো হয়, এসময়ের শেষের দিকে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।