রোনালদোর পর মেসি- ব্রাজিলিয়ান জাদু দুজনকেই ফেরাল বার্নাব্যুতে
- আপডেট সময় : ০৬:৫১:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৩৯৯ বার পড়া হয়েছে
ম্যাচের একদম শেষ শটটি ছিল পেনাল্টি। কিন্তু হোসেলুর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এতে অবশ্য রেয়াল মাদ্রিদের কিছু যায় আসেনি। পেনাল্টি মিস করার জন্য কালকের ম্যাচটিই হয়তো সেরা উপলক্ষ্য। শিরোপা দৌড়ে দুইয়ে থাকা জিরোনার বিপক্ষে এর আগেই ৪ গোল দিয়েছে মাদ্রিদ, তা এ গোলটা হলেও কিছু আসত যেত না।
আর দুই, এ গোলের সঙ্গে যে ভিনিসিয়ুসের নাম থাকত না। কালকের ম্যাচে ভিনিসিয়ুস যা দেখিয়েছেন, তাতে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন কোনো গোল ম্যাচের সঙ্গে যায়ও না!
জোড়া গোল দিয়েছেন জুড বেলিংহাম। লা লিগায় এখন এককভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা ইংলিশ মিডফিল্ডার। অন্য যেকোনো দিন হেডলাইনে বেলিংহামই থাকতেন, ইংলিশ পত্রপত্রিকা তাই করেছে। কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়ার মতো যারা একচোখা নয়, এবং খেলাটা আসলেই যারা দেখেছেন, তাদের সবার মুখেই শুধু একটি নাম, ভিনিসিয়ুস।
ম্যাচ শেষে মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘সে (ভিনিসিয়ুস) বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। (এরপরের সেরা) বেলিংহাম, তৃতীয় সেরা রদ্রিগো, এরপরে আসবে ভালভার্দে, কামাভিঙ্গা, ক্রুস।’
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটের ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। বাঁ প্রান্তে বল পান ভিনিসিয়ুস। বল পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে সাইডস্ট্র্যাপ করে একটু তাকালেন। বেলিং হাম সামনেই ছিলেন, ইশারায় পাস চেয়েওছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকেই বাঁকানো এক শট নিলেন। বাঁকের সঙ্গে প্রচণ্ড গতি। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঝাঁপানো গোলকিপারের নাগালের বাইরের দিয়ে দূরের পোস্টের কোণে আশ্রয় নিচ্ছে। মাদ্রিদের জার্সিতে আরেক নাম্বার সেভেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।
প্রথম গোলে যদি আদর্শ ও ক্লাব কিংবদন্তির কথা মনে করান, দ্বিতীয় গোলে যেন মেসিকে ডেকে আনলেন বার্নাব্যুতে।
২৫ মিনিটে ফারলাঁ মেন্দির কাছ থেকে বল পেয়েছিলেন মাঝমাঠের একটু সামনে। জিরোনা রক্ষণ ভিনিসিয়ুসের বিখ্যাত দৌড় আর ড্রিবলিংয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ বুঝতে পারেনি ভিনিসিয়ুস ও বেলিংহাম কী ভাবছেন। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে ইঙ্গিত দিয়ে অফ দ্য বল ছুট লাগালেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। মাঠের ওই প্রান্ত থেকে তাঁকে বল পাঠানো বেশ কঠিন হতো ডান পায়ের ভিনিসিয়ুসের পক্ষে।
লিওনেল মেসিকে এসব ক্ষেত্রে একটি কাজ করতে দেখা যায়। লুকা মদরিচও নিয়মিত এটা করেন। ২০২২ চ্যাম্পিয়নস লিগে চেলসির বিপক্ষে মদরিচ ম্যাচের রূপ বদলে দেওয়া এক পাস দিয়েছিলেন। বুটের বাইরের দিক ব্যবহার করে বলকে স্বাভাবিকের উল্টোদিকে পাঠানো সে পাসের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বল পাঠালেন ভিনিসিয়ুস। জিরোনা রক্ষণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল পেয়ে গেলেন বেলিংহাম।। গোলকিপারকে কাটিয়ে দেওয়া গোলটি বেশ দারুণ ছিল, কিন্তু ভিনিসিয়ুসের পাসের কাছে আলোচনায় পাত্তা পাচ্ছে না বেলিংহামের কাজ।
এবার লা লিগার চমক হিসেবে আবির্ভাব জিরোনার। শীর্ষ স্তরে মাত্র চতুর্থ মৌসুম কাটাচ্ছে, কিন্তু শুরু থেকেই শিরোপা দৌড়ে তারা। কাল ম্যাচ শুরু করেছিল মাত্র দুই পয়েন্ট পিছিয়ে। এমন ম্যাচে রক্ষণে অভিজ্ঞ ডেলে ব্লাইন্ডকে পায়নি তারা।
অবশ্য চোট সমস্যায় মাদ্রিদ রক্ষণও ফাঁকা। মূল তিন সেন্টারব্যাকই চোটে পড়েছেন। চতুর্থ পছন্দ ও অধিনায়ক নাচো-ও নিষিদ্ধ। শিরোপা নির্ধারণী হতে পারে, এমন এক ম্যাচে মাদ্রিদের দুই সেন্টারব্যাকের দায়িত্বে ছিলেন রাইটব্যাক কারভাহাল ও মিডফিল্ডার চুয়ামেনি! লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করা জিরোনার বিপক্ষে তাই দুশ্চিন্তা নিয়ে মাঠে নেমেছিল মাদ্রিদ। প্রথমার্ধে ভিনিসিয়ুসের এমন পারফরম্যান্স সে দুশ্চিন্তা একটু কমালেও উড়িয়ে দিতে পারেনি।
কারণ, বার্সেলোনার মাঠেও ৪-২ গোলে জিতেছে জিরোনা। আতলেতিকোর বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জিতেছে। এই মৌসুমে দ্বিতীয়ার্ধেই জিরোনাকে ভালো খেলতে দেখা গেছে।
তাই দ্বিতীয়ার্ধেও ভিনিসিয়ুসকে ছন্দ রাখতে হয়েছে।
এবার লা লিগার সেরা রাইটব্যাক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন জিরোনার ইয়ান কুতো। ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ধারে খেলতে যাওয়া এই ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাককে নাকি মাদ্রিদ নজরে রাখছে। সে অর্থে কাল একটি পরীক্ষা ছিল তাঁর। ভিনিসিয়ুস তাঁকে শুধু ফেল করাননি, শূন্য পাইয়েছেন।
৫৪ মিনিটে আরও একবার কুতোকে নাকানিচুবানি খাইয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুস। ড্রিবলিংয়ের একপর্যায়ে নিজের বাঁ পাকে ব্যবহার করে নিজেকেই নিজে পাস দিয়েছেন, দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাঁর শট জিরোনা গোলকিপার ঠেকিয়ে দেন। ফিরতি বল যায় বেলিংহামের সামনে। সেখান থেকে সহজেই নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান ইংলিশ মিডফিল্ডার। গোলের আগে পায়ে চোট পাওয়া মিডফিল্ডার একটু পর বেরিয়ে যান।
এতক্ষণ ড্রিবলিং, গতি আর পায়ের কাজে জিরোনার নাভিশ্বাস তুলেছেন। ৭ মিনিট পর অন্যদিকটাও দেখল। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে পাস দেন ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ রদ্রিগোকে। এতক্ষণ ভিনিসিয়ুস শো দেখে মনে হয় একটু ক্লান্ত ছিলেন। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এক ছুঁটে বক্সে ঢুকে পড়লেন। একক প্রচেষ্টার এক গোল। একটু পর রদ্রিগো ও ভিনিসিয়ুস মাঠ ছাড়েন।
বদলি নামা আর্দা গুলাশ যোগ করা সময়ে পেনাল্টি এনে দেন। এবারও অপরাধী কুতো। কিন্তু হোসেলু পেনাল্টি মিস করলে ৪-০ গোল ব্যবধানের জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের।
এ জয়ে ২৪ ম্যাচে ৬১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষস্থান শক্তিশালী করেছে মাদ্রিদ। সমান ম্যাচ খেলা জিরোনার চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আনচেলত্তির শিষ্যরা। এবারের লিগে এ নিয়ে মাত্র দুটি ম্যাচ হেরেছে জিরোনা, দুবারই মাদ্রিদের বিপক্ষে। তবে মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে ফর্ম হারিয়ে বসা চিন্তায় ফেলবে তাদের। সর্বশেষ চার ম্যাচে মাত্র একটি জয় জিরোনার। আজ বার্সেলোনা জিতলেই দুই দলের মধ্যে ব্যবধান তিনে নেমে আসবে।