১১:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১২২ দেখেছেন

গত বছর গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার দুই ধাপ পেছাল। সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচকে এমনটাই বলা হচ্ছে। ‘গণতন্ত্র সূচক ২০২৩’ শীর্ষক সূচকে শীর্ষ দুই দেশ নরওয়ে ও নিউজিল্যান্ড।

গতবারের মতো এবারের গণতন্ত্র সূচকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে নরওয়ে। পূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগের এই দেশের স্কোর ৯ দশমিক ৮১। দ্বিতীয় অবস্থানে নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় আইসল্যান্ড। সুইডেন চতুর্থ, ফিনল্যান্ড পঞ্চম।

অন্যদিকে, এবারের এই তালিকার গত বছরের মতো একেবারে তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। স্বৈরশাসকের অধীনে থাকা মিয়ানমার ১৬৬তম স্থানে আছে। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৮৫। এ ছাড়া বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া ১ দশমিক ০৮ স্কোর নিয়ে ১৬৫তম স্থানে আছে।

১৬৭টি স্বাধীন দেশ ও অঞ্চল নিয়ে এবারের সূচক তৈরি করেছে ইআইইউ। সূচকে ১০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৮৭। এর আগে ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৩। স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। ২০২০ সালের সূচকে একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম।

ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এই সূচক পাঁচটি মানদণ্ড— নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ১০ স্কোরের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়।

এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে।

ইআইইউবলছে, ২০২৩ সালের সূচকে ৫ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে ৭৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে এই সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। একই সূচকে ২০১৯ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।

ব্রিটিশ এই সাময়িকী ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০০৭ সালে ৫ দশমিক ৫২, ২০০৮ সালে ৫ দশমিক ৮৭, তারপরের তিন বছর বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল; ৫ দশমিক ৮৬।

সূচকে দেশ ও অঞ্চলগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা। জরিপের মতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা গণতন্ত্রের আওতায় আছেন। তবে পূর্ণ গণতন্ত্রে আছেন ৭.৮ শতাংশ। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় রয়েছেন বিশ্বের ৩৯.৪ শতাংশ মানুষ। এবারের সূচকে পূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে রয়েছে ২৪টি দেশ। ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে ৫০টি দেশ। হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় ৩৪টি দেশ। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় ৩৯টি দেশ।

গত কয়েকবারের মতো এবারও হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ক্যাটাগরিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ১০-এর মধ্যে যেসব দেশের স্কোর ৪ থেকে ৬-এর মধ্যে, তারাই এই বিভাগে রয়েছে। এই বিভাগে সবার ওপরে বাংলাদেশ। সবার নিচে মৌরিতানিয়া। এবারের সূচকে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—আমেরিকা (২৯তম), ইসরায়েল (৩০তম), ভারত (৪১তম)।

ইআইইউ বলছে, বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য একটি সুসংবাদ আছে। আর সেটি হলো ২০২৩ সালে বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা দুটি বেড়ে ৭৪-এ পৌঁছেছে। তবে সূচকের অন্যান্য মাপকাঠিতে গত বছরটি বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্য শুভ ছিল না। বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকের গড় স্কোর কমে ৫ দশমিক ২৩ হয়েছে; যা ২০২২ সালে ৫.২৯ ছিল।

ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা কোনও না কোনও ধাঁচের গণতন্ত্রে বাস করে। যা প্রায় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করা মানুষের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০১৫ সালের ৮ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় কম। আর বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাস করে মিশ্র গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে (৩৯.৪ শতাংশ)।

এ বছরের এই সূচকে গত বছরের মতো ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৭ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে দেশটি ২৯তম স্থানে আছে।

বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

আপডেট : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গত বছর গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার দুই ধাপ পেছাল। সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচকে এমনটাই বলা হচ্ছে। ‘গণতন্ত্র সূচক ২০২৩’ শীর্ষক সূচকে শীর্ষ দুই দেশ নরওয়ে ও নিউজিল্যান্ড।

গতবারের মতো এবারের গণতন্ত্র সূচকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে নরওয়ে। পূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগের এই দেশের স্কোর ৯ দশমিক ৮১। দ্বিতীয় অবস্থানে নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় আইসল্যান্ড। সুইডেন চতুর্থ, ফিনল্যান্ড পঞ্চম।

অন্যদিকে, এবারের এই তালিকার গত বছরের মতো একেবারে তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। স্বৈরশাসকের অধীনে থাকা মিয়ানমার ১৬৬তম স্থানে আছে। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৮৫। এ ছাড়া বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া ১ দশমিক ০৮ স্কোর নিয়ে ১৬৫তম স্থানে আছে।

১৬৭টি স্বাধীন দেশ ও অঞ্চল নিয়ে এবারের সূচক তৈরি করেছে ইআইইউ। সূচকে ১০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৮৭। এর আগে ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৩। স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। ২০২০ সালের সূচকে একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম।

ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এই সূচক পাঁচটি মানদণ্ড— নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ১০ স্কোরের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়।

এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে।

ইআইইউবলছে, ২০২৩ সালের সূচকে ৫ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে ৭৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে এই সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। একই সূচকে ২০১৯ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।

ব্রিটিশ এই সাময়িকী ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০০৭ সালে ৫ দশমিক ৫২, ২০০৮ সালে ৫ দশমিক ৮৭, তারপরের তিন বছর বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল; ৫ দশমিক ৮৬।

সূচকে দেশ ও অঞ্চলগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা। জরিপের মতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা গণতন্ত্রের আওতায় আছেন। তবে পূর্ণ গণতন্ত্রে আছেন ৭.৮ শতাংশ। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় রয়েছেন বিশ্বের ৩৯.৪ শতাংশ মানুষ। এবারের সূচকে পূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে রয়েছে ২৪টি দেশ। ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে ৫০টি দেশ। হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় ৩৪টি দেশ। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় ৩৯টি দেশ।

গত কয়েকবারের মতো এবারও হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ক্যাটাগরিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ১০-এর মধ্যে যেসব দেশের স্কোর ৪ থেকে ৬-এর মধ্যে, তারাই এই বিভাগে রয়েছে। এই বিভাগে সবার ওপরে বাংলাদেশ। সবার নিচে মৌরিতানিয়া। এবারের সূচকে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—আমেরিকা (২৯তম), ইসরায়েল (৩০তম), ভারত (৪১তম)।

ইআইইউ বলছে, বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য একটি সুসংবাদ আছে। আর সেটি হলো ২০২৩ সালে বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা দুটি বেড়ে ৭৪-এ পৌঁছেছে। তবে সূচকের অন্যান্য মাপকাঠিতে গত বছরটি বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্য শুভ ছিল না। বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকের গড় স্কোর কমে ৫ দশমিক ২৩ হয়েছে; যা ২০২২ সালে ৫.২৯ ছিল।

ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা কোনও না কোনও ধাঁচের গণতন্ত্রে বাস করে। যা প্রায় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করা মানুষের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০১৫ সালের ৮ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় কম। আর বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাস করে মিশ্র গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে (৩৯.৪ শতাংশ)।

এ বছরের এই সূচকে গত বছরের মতো ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৭ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে দেশটি ২৯তম স্থানে আছে।