ঢাকা ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আমেরিকা ও ইউরোপের চাপের ওপর শেখ হাসিনা মাথানত করেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:২৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, এবার আমেরিকা যেভাবে ঢাকায় এসে নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে শেখ হাসিনার ওপরে এবং বাংলাদেশে চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় তো সঠিক নির্বাচন হতে পারে না। নানা কৌশলে তারা অনেক সমালোচনা করেছে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে। এ চাপ শেখ হাসিনা সামলে নিয়েছেন। আমাদের স্বীকার করতে হবে আমেরিকা ও ইউরোপের চাপের ওপর শেখ হাসিনা মাথানত করেননি। তাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা গ্রহণ করেননি। তার নিজের বিবেচনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের চার-পাঁচ জন লোকের সঙ্গে পরামর্শ করে যেভাবে কাজ করেছেন, এটাতে আমি বলব শেখ হাসিনার একটা সাফল্য আছে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি (বিজেপি) কেন্দ্রীয় পরিষদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির উপদেষ্টা ও তাত্ত্বিক নেতা।

তিনি বলেন, উত্তরাধিকারভিত্তিক, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রের ধারণার বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন, এটি শুধু কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নয়, একদম ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রাজধানীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের জাতিতে বড় বড় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছিল। ১৯৫৪ সালে যে প্রদেশিক সভার নির্বাচন হলো, তাতে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী এদের অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দেশবাসী তাদের বিশ্বাস করতেন। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগকে এখন আওয়ামী লীগ বলা কঠিন। এই দল এখন হয়ে গেছে শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন। এখন সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা-নেতারা যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক ক্যাপাসিটিতে আছেন, তারা সব ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন। এ ধরনের মানসিকতা গণতন্ত্রের পরিচালক নয়।

তিনি বলেন, নেত্রী স্থানীয় যারা, তারা শেখ হাসিনার হাতে সব কর্তৃত্ব দিয়ে একটা ডিক্টেটরশিপ প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটা নির্বাচন গেল, সেখানে শেখ হাসিনার পরিকল্পনা সফল হয়েছে। কিন্তু এই যে নির্বাচন হলো ৭ জানুয়ারি, সেখানে স্বাভাবিক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য অতি অল্প আছে। সেটা পাঁচ ভাগের বেশি হবে না। আর ৯৫ ভাগ সাজিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এবার আওয়ামী লীগ যেসব দলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে এবং তাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটি রক্ষা করেনি। জাতীয় পার্টি, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন এদের কিছু সিট ছেড়ে দেবে বলেছিল। কিন্তু ইলেকশনে দেখা গেল, সেই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ রক্ষা করেনি।

এই রাজনীতিক বিশ্লেষক বলেন, আওয়ামী লীগের বাইরে নেতা বলতে যেটা বোঝায়, সেটা অন্য কোনো দলের মধ্যে নেই। বামপন্থিদের মধ্যেও নেই, ডানপন্থিদের মধ্যেও নেই। এ বাস্তবতায় রাজনীতি শূন্য কয়েকটি দল আছে, তারা দলাদলি করছে। এই দলাদলির মধ্যে অন্তত শেখ হাসিনা যতকাল সক্রিয় আছেন, ততকাল অন্য কোনো নেতার আত্মপ্রকাশের সময় ও সুযোগ কোনোটাই নেই।

বিএনপির রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, বিএনপির রাজনীতি আপনারা দেখছেন, সেখানে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে টেলিফোনে যে সিদ্ধান্ত দেন বিএনপি সেটা কার্যকর করে। এখানে তারেক জিয়ার সঙ্গে যার সম্পর্ক যত বেশি, তারা তত বড় অবস্থানে আছেন। রাজনীতি উত্তরাধিকার ভিত্তিক, পরিবারতান্ত্রিক এটার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ধারণা। বিএনপি তো রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠেনি, হয়ে উঠবে বলেও মনে হয় না। কারণ গত ২০ বছর ধরে তাদের কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। তারা ওই উত্তরাধিকার ভিত্তিক পরিবারতন্ত্রিক রাজনীতিতে চলে গেছে। জাতীয় পার্টিরও একই অবস্থান।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক এম এ আলিম সরকার প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আমেরিকা ও ইউরোপের চাপের ওপর শেখ হাসিনা মাথানত করেননি

আপডেট সময় : ১২:২৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, এবার আমেরিকা যেভাবে ঢাকায় এসে নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে শেখ হাসিনার ওপরে এবং বাংলাদেশে চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় তো সঠিক নির্বাচন হতে পারে না। নানা কৌশলে তারা অনেক সমালোচনা করেছে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে। এ চাপ শেখ হাসিনা সামলে নিয়েছেন। আমাদের স্বীকার করতে হবে আমেরিকা ও ইউরোপের চাপের ওপর শেখ হাসিনা মাথানত করেননি। তাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা গ্রহণ করেননি। তার নিজের বিবেচনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের চার-পাঁচ জন লোকের সঙ্গে পরামর্শ করে যেভাবে কাজ করেছেন, এটাতে আমি বলব শেখ হাসিনার একটা সাফল্য আছে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি (বিজেপি) কেন্দ্রীয় পরিষদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির উপদেষ্টা ও তাত্ত্বিক নেতা।

তিনি বলেন, উত্তরাধিকারভিত্তিক, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রের ধারণার বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন, এটি শুধু কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নয়, একদম ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রাজধানীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের জাতিতে বড় বড় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছিল। ১৯৫৪ সালে যে প্রদেশিক সভার নির্বাচন হলো, তাতে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী এদের অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দেশবাসী তাদের বিশ্বাস করতেন। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগকে এখন আওয়ামী লীগ বলা কঠিন। এই দল এখন হয়ে গেছে শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন। এখন সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা-নেতারা যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক ক্যাপাসিটিতে আছেন, তারা সব ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন। এ ধরনের মানসিকতা গণতন্ত্রের পরিচালক নয়।

তিনি বলেন, নেত্রী স্থানীয় যারা, তারা শেখ হাসিনার হাতে সব কর্তৃত্ব দিয়ে একটা ডিক্টেটরশিপ প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটা নির্বাচন গেল, সেখানে শেখ হাসিনার পরিকল্পনা সফল হয়েছে। কিন্তু এই যে নির্বাচন হলো ৭ জানুয়ারি, সেখানে স্বাভাবিক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য অতি অল্প আছে। সেটা পাঁচ ভাগের বেশি হবে না। আর ৯৫ ভাগ সাজিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এবার আওয়ামী লীগ যেসব দলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে এবং তাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটি রক্ষা করেনি। জাতীয় পার্টি, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন এদের কিছু সিট ছেড়ে দেবে বলেছিল। কিন্তু ইলেকশনে দেখা গেল, সেই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ রক্ষা করেনি।

এই রাজনীতিক বিশ্লেষক বলেন, আওয়ামী লীগের বাইরে নেতা বলতে যেটা বোঝায়, সেটা অন্য কোনো দলের মধ্যে নেই। বামপন্থিদের মধ্যেও নেই, ডানপন্থিদের মধ্যেও নেই। এ বাস্তবতায় রাজনীতি শূন্য কয়েকটি দল আছে, তারা দলাদলি করছে। এই দলাদলির মধ্যে অন্তত শেখ হাসিনা যতকাল সক্রিয় আছেন, ততকাল অন্য কোনো নেতার আত্মপ্রকাশের সময় ও সুযোগ কোনোটাই নেই।

বিএনপির রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, বিএনপির রাজনীতি আপনারা দেখছেন, সেখানে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে টেলিফোনে যে সিদ্ধান্ত দেন বিএনপি সেটা কার্যকর করে। এখানে তারেক জিয়ার সঙ্গে যার সম্পর্ক যত বেশি, তারা তত বড় অবস্থানে আছেন। রাজনীতি উত্তরাধিকার ভিত্তিক, পরিবারতান্ত্রিক এটার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ধারণা। বিএনপি তো রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠেনি, হয়ে উঠবে বলেও মনে হয় না। কারণ গত ২০ বছর ধরে তাদের কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। তারা ওই উত্তরাধিকার ভিত্তিক পরিবারতন্ত্রিক রাজনীতিতে চলে গেছে। জাতীয় পার্টিরও একই অবস্থান।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক এম এ আলিম সরকার প্রমুখ।