বেইলি রোডে আগুন: ৪৫ জনের মৃত্যু, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
- আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৭২ বার পড়া হয়েছে
বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৫ জন নিহত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। দগ্ধ হয়ে আরও অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান তিনি।
ঘটনার পরপরই শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পরিদর্শনে গেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ১২ জন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলো কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এ ছাড়া, ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ২২ জন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অধিকাংশই নিহত হয়েছে শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার কারণে। এ ছাড়া ধোয়ার কারণে শ্বাসরোধ হয়েওে অনেকে মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আহত ও দগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে— বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের সূত্রপাত হয়। যা পরে ভবনটিতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য ২ ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পর সেখান থেকেই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এ ছাড়া ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। এর মধ্যে চারজন শিশু ও ২১ জন নারী। বাকি সবাই পুরুষ বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
গুরুতর আহতদের মধ্যে ২০ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। বাকিদের মধ্যে অধিকাংশকেই ঢামেক হাসপাতালে। এ ছাড়া আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালেও কয়েকজনকে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বেইলি রোডের বহুতল ভবনটির সামনে আটকে পড়া স্বজনদের খোজে এসেছেন অনেকে। হতাহতদের সবাই শ্বাসরো্ধ হয়ে মারা গেছে। ভবনটিতে সরু সিড়ি থাকায় উদ্ধারকাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। না হলে আশপাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারত।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ছয়তলা ভবনটিতে থাকা সিড়ি ছিল সরু। শুধু তাই নয়, এমনকি সিড়িতেও রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। ফলে সিড়ি দিয়ে আটকে পড়াদের বেরিয়ে আসাটা কঠিন ছিল।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভবনটি তৈরিতে অনিয়ম ছিল কিনা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কিনা, এসব তদন্তে রমনা থানায় একটি মামলা করা হবে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বেইলি রোডে একটি রেস্টুরেন্টে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করেন। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রেস্টুরেন্টটিতে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট। পরবর্তীতে ইউনিট বাড়ার পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে ৩ প্লাটুন সাধারণ আনসার ছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১ প্লাটুন আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়।
তারা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে কাজ করে। এছাড়াও উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও। একপর্যায়ে ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে।
কারণ অনুসন্ধানে ফায়ারের ৫ সদস্যের কমিটি
রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভয়াবহ এই আগুনের ঘটনার নেপথ্যের কারণ, ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ হতাহত বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি : পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কমিটির সদস্য সচিব ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন, সদস্য করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টরকে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।