০৩:৩৭ অপরাহ্ন, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজার যুদ্ধকে বিকৃতভাবে দেখাচ্ছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম

গত পাঁচ মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ভুল ও ব্যাপক পক্ষপাতমূলক খবর প্রকাশ করছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের (সিএফএমএম) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনটিতে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এক মাসের খবর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাজ্যের সাতটি ও আন্তর্জাতিক তিনটি সম্প্রচারমাধ্যমের ১ লাখ ৮০ হাজার ভিডিও ক্লিপ ও ২৮টি ব্রিটিশ নিউজ ওয়েবসাইটের ২৬ হাজার আর্টিকেল ব্যবহার করা হয়েছে।

১৫৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে, যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী সম্প্রচারমাধ্যম ও প্রকাশনাগুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের ইহুদিবিরোধী অথবা হামাসের সমর্থক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া লাইভ সম্প্রচারে ফিলিস্তিনিদের হেনস্তা করার সুযোগ পেয়েছে ইসরায়েলি প্রতিনিধি ও সমর্থকরা। এসময় উপস্থাপকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পতাকার মতো ফিলিস্তিনি প্রতীককে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইহুদিবিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব ইসলামবিদ্বেষকেও সামনে আনা হয়েছে। যেমন অনেক খবরে বলা হয়েছে যে, ফিলস্তিনিদের সমর্থকরা বিপজ্জনক কারণ তারা মুসলিম।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরায়েলি নিপীড়ন এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হয়নি।

ওই সব প্রতিবেদন দেখ মনে হয়েছে, দ্বন্দ্বের শুরু ৭ অক্টোবর থেকে। সেদিন থেকেই ইসরায়েল গাজা দখল করেছে। তবে ২০০৫ সালেও সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি ছিল। এ বিষয়টি দেখানো হয়নি।

এমনও প্রতিবেদন দেখা গেছে যেখানে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। একটি সম্প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, পশ্চিমতীরকে দখল করেছে ফিলিস্তিনিরা। তবে এসব জায়গায় আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। সেখানে উপস্থাপকেরও কোনো ভূমিখা দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল তথ্য এবং গুজব বিদ্বেষ ছড়ায়। আর এ যুদ্ধকে ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে একটি ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফিলিস্তিনি এবং তাদের সমর্থকদের সন্ত্রাসী বানিয়ে মুসলিম-বিদ্বেষ আরও বাড়ি তোলা হচ্ছে।

এর কারণে যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টেল মামার প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দুই হাজারটি মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে। যা এর আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে ৩৩৫ গুণ বেশি।

প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ফয়সাল হানিফ বলেন, ফিলিস্তিনিদেরকে মানুষ হিসেবে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা উচিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের অনেক আগে থেকে তাদের অধিকারগুলো কীভাবে খর্ব করা হয়েছে সেটিও তুলে ধরা উচিত।

গাজার যুদ্ধকে বিকৃতভাবে দেখাচ্ছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম

আপডেট : ০২:০৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

গত পাঁচ মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ভুল ও ব্যাপক পক্ষপাতমূলক খবর প্রকাশ করছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের (সিএফএমএম) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনটিতে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এক মাসের খবর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাজ্যের সাতটি ও আন্তর্জাতিক তিনটি সম্প্রচারমাধ্যমের ১ লাখ ৮০ হাজার ভিডিও ক্লিপ ও ২৮টি ব্রিটিশ নিউজ ওয়েবসাইটের ২৬ হাজার আর্টিকেল ব্যবহার করা হয়েছে।

১৫৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে, যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী সম্প্রচারমাধ্যম ও প্রকাশনাগুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের ইহুদিবিরোধী অথবা হামাসের সমর্থক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া লাইভ সম্প্রচারে ফিলিস্তিনিদের হেনস্তা করার সুযোগ পেয়েছে ইসরায়েলি প্রতিনিধি ও সমর্থকরা। এসময় উপস্থাপকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পতাকার মতো ফিলিস্তিনি প্রতীককে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইহুদিবিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব ইসলামবিদ্বেষকেও সামনে আনা হয়েছে। যেমন অনেক খবরে বলা হয়েছে যে, ফিলস্তিনিদের সমর্থকরা বিপজ্জনক কারণ তারা মুসলিম।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরায়েলি নিপীড়ন এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হয়নি।

ওই সব প্রতিবেদন দেখ মনে হয়েছে, দ্বন্দ্বের শুরু ৭ অক্টোবর থেকে। সেদিন থেকেই ইসরায়েল গাজা দখল করেছে। তবে ২০০৫ সালেও সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি ছিল। এ বিষয়টি দেখানো হয়নি।

এমনও প্রতিবেদন দেখা গেছে যেখানে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। একটি সম্প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, পশ্চিমতীরকে দখল করেছে ফিলিস্তিনিরা। তবে এসব জায়গায় আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। সেখানে উপস্থাপকেরও কোনো ভূমিখা দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল তথ্য এবং গুজব বিদ্বেষ ছড়ায়। আর এ যুদ্ধকে ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে একটি ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফিলিস্তিনি এবং তাদের সমর্থকদের সন্ত্রাসী বানিয়ে মুসলিম-বিদ্বেষ আরও বাড়ি তোলা হচ্ছে।

এর কারণে যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টেল মামার প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দুই হাজারটি মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে। যা এর আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে ৩৩৫ গুণ বেশি।

প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ফয়সাল হানিফ বলেন, ফিলিস্তিনিদেরকে মানুষ হিসেবে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা উচিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের অনেক আগে থেকে তাদের অধিকারগুলো কীভাবে খর্ব করা হয়েছে সেটিও তুলে ধরা উচিত।