ঢাকা ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়লো, বাজার ঘুরে প্রতিমন্ত্রী সন্তুষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
  • / ৪০৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রমজানে বেশি প্রয়োজন- এমন পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়লো আরেক দফা। খেজুরের পাশাপাশি অন্য সব ফলের দাম আকাশচুম্বী। তবে বাজার পরিদর্শন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল টিটু। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা পুরোপুরি সফল হতে আরও সময় লাগবে।

সোমবার (১১ মার্চ) রাজধানীর শান্তিনগর বাজার পরিদর্শন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। অনেক অসঙ্গতিও পান। পরে সেখানে ব্যবসায়ীদের বলেন, রশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারগুলোতে তদারকি আরও বাড়ানো হবে বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে অবস্থান তার।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রতিটি বাজার কমিটিকে বাজার পর্যবেক্ষণের তাগিদ দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিটির সমর্থন প্রয়োজন বলে জানান।

অন্যদিকে, গতরাতে কারওয়ান বাজারে অভিযানের অভিজ্ঞতায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস জানান পণ্যের হাতবদলে কাছাকাছি দূরত্বেও দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এর আগে, শান্তিনগর বাজার পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। এ সময় কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল, আমিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মজিবুল হক, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও আবু সিদ্দিকসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দুইদিন আগেও রাজধানীর বাজারগুলোয় বেগুন মিলতো সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে শান্তিনগর বাজারে একই বেগুন হাঁকা হচ্ছে ১২০ টাকা। শসার কেজি ১২০ আর লেবুর হালি মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আলুর কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫। পেঁয়াজের দাম ঢাকার বাইরের আড়তগুলোতে অনেকটা কমলেও রাজধানীতে এখনও ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকা।

ইফতারির প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম এবারে রেকর্ড ছাড়িয়েছে আগেই। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছে মালটা, কমলা ও আপেলসহ অন্যান্য ফলও। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দিকে অভিযোগের আঙুল খুচরা ব্যবসায়ীদের।

তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এবার ইফতারির শরবতও মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজাসহ এ ধরনের সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা তিন মাস আগে ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। ৭৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত ট্যাং আগে বিক্রি হতো ৭৬০ টাকায়। এখন নতুন উৎপাদন করা প্যাকেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। ছোট সাইজের রুহ আফজা ৩০০ মিলিলিটারের দাম আগে ছিল ২১০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা করা হয়েছে। বড় সাইজের রুহ আফজা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ইসপি, অরেঞ্জ, ম্যাংগো ফ্লেভারের বিভিন্ন শরবতের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর মাঝারি মানের কামরাঙ্গা মরিয়ম খেজুর কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিয়ম কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা ও ইরানি মরিয়ম কেজিপ্রতি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে তিউনেশিয়ান খেজুর প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সৌদি আম্বার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আজোয়া (ছোট) খেজুর প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, মদিনার সুগাই খেজুর ১২০০ টাকা ও মেগজল আম্বার খেজুর প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া নাখাল মরিয়ম খেজুর ৫৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ৫০০ টাকা, সুকাই খেজুর ৪৫০ টাকা, লিবিয়ান খেজুর ৫০০ টাকা, বরই খেজুর ৫০০ টাকা, ঢালাকাচা খেজুর ৫২০ টাকা এবং দাবাস খেজুর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে এসব খেজুর গত বছরের চেয়ে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

২০ বছর ধরে খেজুর বিক্রি করছেন সেলিম হাওলাদার। তিনি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশে খেজুরের দাম এত বেশি। গত বছর যেসব খেজুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বছর সেসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ফলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে আনতে রাজধানীর বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, ঝিগাতলা পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক। দেখা যায়, সব বাজারেই কাছাকাছি মূল্যে পাইকারি ও খুচরায় ফল বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে ক্রাউন আপেল ২০ কেজির বক্স বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ফলে পাইকারিতে প্রতি কেজি আপেলের দাম পড়ছে ১৯০-২০০ টাকা। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ফুজি আপেলের ২০ কেজির বক্স ৪৫০০-৪৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ফুজি আপেলের দাম পাইকারিতে পড়ছে ২২৫-২৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এই আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। মিশরের মাল্টা ১৫ কেজির বক্স পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১৮৬-১৯০ টাকা)। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা।

ভারতের সাদা আঙুর ছোট ক্যারেট (৯ কেজি) ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা, বড় ক্যারেট (৯ কেজি) ৩৮০০ থেকে ৩৯০০ টাকা এবং দেশটির কালো আঙুর ছোট ক্যারেট ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আঙুর প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনার ও আঙুর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনারের কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুরের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চায়না কমলা (৯ কেজি) ১ কার্টন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ১৯০০-২০০০ টাকায়, কেজি ২০০-২১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে এ কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। গ্রিন কমলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫৭ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়।

রোজায় ইফতারের আরেকটি জনপ্রিয় ফল আনারস। অন্যান্য বছর রসালো এ ফলটি মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও এবার এটিরও দাম বেশি। বড় সাইজের একটি আনারস খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। একই আনারস এক বছর আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি ও ছোট আকারের আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এদিকে দেশি ফল পাকা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চম্পা কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মের ফল তরমুজের বেচাকেনাও শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। বিক্রেতারা প্রতি কেজির দর রাখছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেদানা ৩৫০-৪০০ টাকা, সফেদা/আতাফল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।

এদিকে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সুলভ মূল্যে ভ্রাম্যমাণ পরিবহনে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রথম রোজা থেকে শুরু হয়ে ২৮ রমজান পর্যন্ত ঢাকার ৩০টি কেন্দ্রে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। রোববার রাজধানীর খামারবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।

বিক্রয় কেন্দ্রগুলো হলো – নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ী (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচা বাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর-১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) কাকরাইল।

স্থায়ী বাজার- মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)। নির্ধারিত এসব পয়েন্টে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসি ৯০০ টাকা, ব্রয়লার ২৫০ টাকা, ১ লিটার দুধ ৮০ টাকায় পাওয়া যাবে। এছাড়া এক ডজন ডিম পাওয়া যাবে ১১০ টাকায়। এছাড়া রুই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছও পাওয়া যাবে।

এছাড়া দুই সিটির ৫ জায়গায় অস্থায়ী দোকানে ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস ও ৮ জায়গায় সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি হবে। গরু, খাসি, মুরগির মাংস এক কেজি করে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার মধ্যে প্রাণিজাত পণ্য নিয়ে কুলভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে এবং সকাল ১০টা থেকে বিক্রয় করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়লো, বাজার ঘুরে প্রতিমন্ত্রী সন্তুষ্ট

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

রমজানে বেশি প্রয়োজন- এমন পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়লো আরেক দফা। খেজুরের পাশাপাশি অন্য সব ফলের দাম আকাশচুম্বী। তবে বাজার পরিদর্শন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল টিটু। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা পুরোপুরি সফল হতে আরও সময় লাগবে।

সোমবার (১১ মার্চ) রাজধানীর শান্তিনগর বাজার পরিদর্শন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। অনেক অসঙ্গতিও পান। পরে সেখানে ব্যবসায়ীদের বলেন, রশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারগুলোতে তদারকি আরও বাড়ানো হবে বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে অবস্থান তার।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রতিটি বাজার কমিটিকে বাজার পর্যবেক্ষণের তাগিদ দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিটির সমর্থন প্রয়োজন বলে জানান।

অন্যদিকে, গতরাতে কারওয়ান বাজারে অভিযানের অভিজ্ঞতায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস জানান পণ্যের হাতবদলে কাছাকাছি দূরত্বেও দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এর আগে, শান্তিনগর বাজার পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। এ সময় কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল, আমিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মজিবুল হক, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও আবু সিদ্দিকসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দুইদিন আগেও রাজধানীর বাজারগুলোয় বেগুন মিলতো সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে শান্তিনগর বাজারে একই বেগুন হাঁকা হচ্ছে ১২০ টাকা। শসার কেজি ১২০ আর লেবুর হালি মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আলুর কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫। পেঁয়াজের দাম ঢাকার বাইরের আড়তগুলোতে অনেকটা কমলেও রাজধানীতে এখনও ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকা।

ইফতারির প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম এবারে রেকর্ড ছাড়িয়েছে আগেই। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছে মালটা, কমলা ও আপেলসহ অন্যান্য ফলও। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দিকে অভিযোগের আঙুল খুচরা ব্যবসায়ীদের।

তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এবার ইফতারির শরবতও মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজাসহ এ ধরনের সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা তিন মাস আগে ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। ৭৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত ট্যাং আগে বিক্রি হতো ৭৬০ টাকায়। এখন নতুন উৎপাদন করা প্যাকেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। ছোট সাইজের রুহ আফজা ৩০০ মিলিলিটারের দাম আগে ছিল ২১০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা করা হয়েছে। বড় সাইজের রুহ আফজা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ইসপি, অরেঞ্জ, ম্যাংগো ফ্লেভারের বিভিন্ন শরবতের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর মাঝারি মানের কামরাঙ্গা মরিয়ম খেজুর কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিয়ম কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা ও ইরানি মরিয়ম কেজিপ্রতি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে তিউনেশিয়ান খেজুর প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সৌদি আম্বার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আজোয়া (ছোট) খেজুর প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, মদিনার সুগাই খেজুর ১২০০ টাকা ও মেগজল আম্বার খেজুর প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া নাখাল মরিয়ম খেজুর ৫৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ৫০০ টাকা, সুকাই খেজুর ৪৫০ টাকা, লিবিয়ান খেজুর ৫০০ টাকা, বরই খেজুর ৫০০ টাকা, ঢালাকাচা খেজুর ৫২০ টাকা এবং দাবাস খেজুর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে এসব খেজুর গত বছরের চেয়ে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

২০ বছর ধরে খেজুর বিক্রি করছেন সেলিম হাওলাদার। তিনি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশে খেজুরের দাম এত বেশি। গত বছর যেসব খেজুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বছর সেসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ফলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে আনতে রাজধানীর বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, ঝিগাতলা পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক। দেখা যায়, সব বাজারেই কাছাকাছি মূল্যে পাইকারি ও খুচরায় ফল বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে ক্রাউন আপেল ২০ কেজির বক্স বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ফলে পাইকারিতে প্রতি কেজি আপেলের দাম পড়ছে ১৯০-২০০ টাকা। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ফুজি আপেলের ২০ কেজির বক্স ৪৫০০-৪৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ফুজি আপেলের দাম পাইকারিতে পড়ছে ২২৫-২৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এই আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। মিশরের মাল্টা ১৫ কেজির বক্স পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১৮৬-১৯০ টাকা)। খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা।

ভারতের সাদা আঙুর ছোট ক্যারেট (৯ কেজি) ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা, বড় ক্যারেট (৯ কেজি) ৩৮০০ থেকে ৩৯০০ টাকা এবং দেশটির কালো আঙুর ছোট ক্যারেট ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আঙুর প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনার ও আঙুর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনারের কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুরের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চায়না কমলা (৯ কেজি) ১ কার্টন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ১৯০০-২০০০ টাকায়, কেজি ২০০-২১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে এ কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। গ্রিন কমলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫৭ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়।

রোজায় ইফতারের আরেকটি জনপ্রিয় ফল আনারস। অন্যান্য বছর রসালো এ ফলটি মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও এবার এটিরও দাম বেশি। বড় সাইজের একটি আনারস খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। একই আনারস এক বছর আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি ও ছোট আকারের আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এদিকে দেশি ফল পাকা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চম্পা কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মের ফল তরমুজের বেচাকেনাও শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। বিক্রেতারা প্রতি কেজির দর রাখছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেদানা ৩৫০-৪০০ টাকা, সফেদা/আতাফল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।

এদিকে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সুলভ মূল্যে ভ্রাম্যমাণ পরিবহনে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রথম রোজা থেকে শুরু হয়ে ২৮ রমজান পর্যন্ত ঢাকার ৩০টি কেন্দ্রে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। রোববার রাজধানীর খামারবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।

বিক্রয় কেন্দ্রগুলো হলো – নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ী (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচা বাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর-১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) কাকরাইল।

স্থায়ী বাজার- মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)। নির্ধারিত এসব পয়েন্টে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসি ৯০০ টাকা, ব্রয়লার ২৫০ টাকা, ১ লিটার দুধ ৮০ টাকায় পাওয়া যাবে। এছাড়া এক ডজন ডিম পাওয়া যাবে ১১০ টাকায়। এছাড়া রুই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছও পাওয়া যাবে।

এছাড়া দুই সিটির ৫ জায়গায় অস্থায়ী দোকানে ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস ও ৮ জায়গায় সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি হবে। গরু, খাসি, মুরগির মাংস এক কেজি করে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার মধ্যে প্রাণিজাত পণ্য নিয়ে কুলভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে এবং সকাল ১০টা থেকে বিক্রয় করা হবে।