ঢাকা ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অন্যকে সচেতন করে নিজেই করলেন আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • / ৪১৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদ ও মার্কেটিং বিভাগের উদ্যোগে বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর জহির অনুষ্ঠানে উপস্থাপনকালে দর্শক মাতিয়ে বলেছিলেন ঝুলেপড়া (আত্মহত্যা) কি সমাধান হতে পারে? কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসলে যেন নিজেকে কেউ বন্দি করে না রাখে।

আত্মহত্যার বিষয়ে অন্যকে সচেতন করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেই বেছে নিয়েছেন এই পথ। গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকা।

তার ছোট্ট এই দুটি কথা সম্বলিত ভিডিও ফেসবুকে এখন ভাইরাল। তার কঠিন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে মৃত্যুর অল্প কিছুক্ষণ আগে জানিয়ে গিয়েছিল সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিক তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। কেন তারা দায়ী, তা দীর্ঘ এক পোস্টে উল্লেখ করে গিয়েছেন।

তার এমন সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারছে না। সবাই বলছে প্রতিবাদী মেয়েটি কিভাবে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দারুণ প্রতিভাবান এই মেয়েটি সব কাজেই ছিল পারদর্শী। গান, উপস্থাপনা, বিতর্ক সবকিছুই ছিল তার দখলে এবং বিমানবাহিনীতেও সুযোগ পেয়েছিল মেয়েটি। এছাড়া কাজ করেছেন একটি এফএম চ্যানেলে। এমন উজ্জ্বল প্রতিভা হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্যাম্পাসে। সেই সঙ্গে দোষীদের কঠিনতম শাস্তি চায় শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলোতে আস্থা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, ফাইরুজের মৃত্যুতে সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা লিখেছেন,

‘আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই, তবে মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের) সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে, যে আমাকে বহিষ্কার করা উনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনও জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিং কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনও আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাত বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে বলে, ‘ৃ তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলছস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে ছাল তুলি, কে বাঁচাবে? আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। যেখানে এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনও সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনও গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’

নিউজটি শেয়ার করুন

অন্যকে সচেতন করে নিজেই করলেন আত্মহত্যা

আপডেট সময় : ০২:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদ ও মার্কেটিং বিভাগের উদ্যোগে বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর জহির অনুষ্ঠানে উপস্থাপনকালে দর্শক মাতিয়ে বলেছিলেন ঝুলেপড়া (আত্মহত্যা) কি সমাধান হতে পারে? কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসলে যেন নিজেকে কেউ বন্দি করে না রাখে।

আত্মহত্যার বিষয়ে অন্যকে সচেতন করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেই বেছে নিয়েছেন এই পথ। গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকা।

তার ছোট্ট এই দুটি কথা সম্বলিত ভিডিও ফেসবুকে এখন ভাইরাল। তার কঠিন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে মৃত্যুর অল্প কিছুক্ষণ আগে জানিয়ে গিয়েছিল সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিক তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। কেন তারা দায়ী, তা দীর্ঘ এক পোস্টে উল্লেখ করে গিয়েছেন।

তার এমন সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারছে না। সবাই বলছে প্রতিবাদী মেয়েটি কিভাবে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দারুণ প্রতিভাবান এই মেয়েটি সব কাজেই ছিল পারদর্শী। গান, উপস্থাপনা, বিতর্ক সবকিছুই ছিল তার দখলে এবং বিমানবাহিনীতেও সুযোগ পেয়েছিল মেয়েটি। এছাড়া কাজ করেছেন একটি এফএম চ্যানেলে। এমন উজ্জ্বল প্রতিভা হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্যাম্পাসে। সেই সঙ্গে দোষীদের কঠিনতম শাস্তি চায় শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলোতে আস্থা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, ফাইরুজের মৃত্যুতে সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা লিখেছেন,

‘আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই, তবে মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের) সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে, যে আমাকে বহিষ্কার করা উনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনও জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিং কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনও আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাত বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে বলে, ‘ৃ তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলছস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে ছাল তুলি, কে বাঁচাবে? আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। যেখানে এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনও সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনও গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’