ঢাকা ০১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৩:১৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪০৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চৈত্রের দহনকাল শেষে বৈশাখের রুদ্ররূপের হাতছানি। মেঘ-রোদ্দুরের খেলায় যেন সেই আভাস। বৈশাখের রঙে সাজছে প্রকৃতি। আর তাকে বরণে স্পন্দন জাগছে বাঙালি হৃদয়ে। নববর্ষের চিরায়ত এই আয়োজন তো আপন ঐতিহ্যেরই স্মারক।

নতুনের বার্তা নিয়ে আসে বৈশাখ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাড়তি রঙ পায় বাঙালির চিরায়ত বর্ষবরণ উৎসব। শোভাযাত্রার মোটিফে রঙতুলির শেষ পরশ বুলাতে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সার্বজনীন উৎসব ঘিরে সৃজনশীল শিল্পচর্চা অব্যাহত থাকবে। দূর হবে যাবতীয় কলুষতা, আশা আয়োজকদের।

এই যে এত রঙ, সাজ সাজ রব, আঁকিবুকি- চৈত্রের তপ্ত দুপুরে সবই যেন দু’দণ্ড শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। নতুন বছরকে বরণ করতেই এত আয়োজন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সাথে জড়িত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ফোক সংস্কৃতি আছে সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। যেমন পেঁচা, মুখোশ, নকশী কাঁথা ও জামদানি সব ধরনের কাজ হচ্ছে।’

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে আমাদের উপর প্রেসার যাবে। বৈশাখ তো আর আটকে থাকবে না, মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদেরই বের করতে হবে।’

উৎসবের আমেজে কর্মব্যস্ত চারুকলার পুরো প্রাঙ্গণ। মাটির সরা, ফুল, পাখি আর মুখোশের অবয়বে রঙ তুলির শেষ পরশ।

চারুকলার শিক্ষার্থী বলেন, ‘নতুন বছরকে আমরা একদম রঙিনভাবে বরণ করে নিবো।’

ঈদের ছুটির আমেজে এবার উপস্থিতি কম, তাই বলে উৎসব ফিকে হবে? প্রাণের এই আয়োজনকে ঘিরে প্রস্তুতির কমতি নেই শিক্ষার্থীদের। সাবেক ও বর্তমানের মেলবন্ধনে বিরামহীন ব্যস্ততা।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আনন্দের সাথে কাজ করছে তার সাথে পূর্ণমিলনী হয় সিনিয়র- জুনিয়রদের। এমনও হচ্ছে চারুকলার সাথে জড়িত না কিন্তু তারা দেখতে আসছে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন চারুকলার নিজস্ব অর্থায়নে। জলরং, সরাচিত্র, পাখি, মুখোশের যে পসরা তা বিক্রির টাকা রসদ জোগায় শোভাযাত্রার আয়োজনে।

আয়োজনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিল্পকর্ম যেটা বিক্রি হয় এইটার টাকা দিয়ে আমাদের এই একমাসের কর্মযজ্ঞ চলে। আমাদের আয়োজনের সবকিছুর ফান্ড এখান থেকেই হয়।’

চারুকলার স্কুলঘর সেজেছে এবার রিকশাচিত্রে। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতেই এবার এই ভিন্ন মাত্রা।

আরেকজন বলেন, ‘রিকশা পেইন্টিংকে সম্মান জানানোর জন্য আমাদের চারুকলার স্কুলের দেয়ালে এই পেইন্টিং করা হয়েছে এবার।’

বর্ষবরণে পাঁচটি মোটিফের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে দেশীয় ঐতিহ্যের নানা দিক। কলুষতা দূর করে যেন আলোকের ঝর্ণাধারার সন্ধান।

সংস্কৃতিকর্মী বলেন, ‘বাঙালির ঐতিহ্যকে আমরা ধারন করি, লালন করি এবং এইটা যেন বেঁচে থাকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের ও সকল রাজনীতির মানুষ এক জায়গায় এসে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে থাকে।’

আমরা তো তিমির বিনাশী। এই বার্তার মধ্যে দিয়ে সমস্ত অন্ধকার ও কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে মুক্তির আহবান নতুন বছরে। মঙ্গল শোভাযাত্রা আপন জাতিসত্তায় অনুপ্রাণিত হওয়ার উৎসব। শুভবুদ্ধির উদয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্পৃক্ত হওয়ার উপলক্ষ্য।

ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, ‘এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সবার। এইটা হচ্ছে প্রতিবাদ থেকে জন্ম এবং এই প্রতিবাদটা ছিল সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপ্রেক্ষতা, গণতন্ত্র মুক্তি সবকিছু মিলে শুভবুদ্ধি ও সচেতনা মানুষের মধ্যে জাগুক।’

সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগ্রত করার পাশাপাশি যাবতীয় অশুভ দূর করে প্রতিটি হৃদয়ে আলো ছড়াবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। অটুট রাখবে সৃজনশীল শিল্পচর্চা।

চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, ‘লোক শিল্পের যে ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে একটা মেলবন্ধন রাখবার জন্য এবং মানুষ তার নিজ অঞ্চল সম্পর্কে জানবে এর জন্য এইটা করি। আমরা মনে করছি আমাদের অন্ধকার শক্তির বিপক্ষে যে লড়াই সেটা এখন পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গল শোভাযাত্রার খুশির ঝড় আর বৈশাখী হাওয়া দোলা দেবে বাঙালির মননে। যাবতীয় জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ যেন আগামীর পথচলা আরও মঙ্গলময় করার নতুন বার্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

আপডেট সময় : ০৩:১৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

চৈত্রের দহনকাল শেষে বৈশাখের রুদ্ররূপের হাতছানি। মেঘ-রোদ্দুরের খেলায় যেন সেই আভাস। বৈশাখের রঙে সাজছে প্রকৃতি। আর তাকে বরণে স্পন্দন জাগছে বাঙালি হৃদয়ে। নববর্ষের চিরায়ত এই আয়োজন তো আপন ঐতিহ্যেরই স্মারক।

নতুনের বার্তা নিয়ে আসে বৈশাখ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাড়তি রঙ পায় বাঙালির চিরায়ত বর্ষবরণ উৎসব। শোভাযাত্রার মোটিফে রঙতুলির শেষ পরশ বুলাতে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সার্বজনীন উৎসব ঘিরে সৃজনশীল শিল্পচর্চা অব্যাহত থাকবে। দূর হবে যাবতীয় কলুষতা, আশা আয়োজকদের।

এই যে এত রঙ, সাজ সাজ রব, আঁকিবুকি- চৈত্রের তপ্ত দুপুরে সবই যেন দু’দণ্ড শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। নতুন বছরকে বরণ করতেই এত আয়োজন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সাথে জড়িত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ফোক সংস্কৃতি আছে সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। যেমন পেঁচা, মুখোশ, নকশী কাঁথা ও জামদানি সব ধরনের কাজ হচ্ছে।’

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে আমাদের উপর প্রেসার যাবে। বৈশাখ তো আর আটকে থাকবে না, মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদেরই বের করতে হবে।’

উৎসবের আমেজে কর্মব্যস্ত চারুকলার পুরো প্রাঙ্গণ। মাটির সরা, ফুল, পাখি আর মুখোশের অবয়বে রঙ তুলির শেষ পরশ।

চারুকলার শিক্ষার্থী বলেন, ‘নতুন বছরকে আমরা একদম রঙিনভাবে বরণ করে নিবো।’

ঈদের ছুটির আমেজে এবার উপস্থিতি কম, তাই বলে উৎসব ফিকে হবে? প্রাণের এই আয়োজনকে ঘিরে প্রস্তুতির কমতি নেই শিক্ষার্থীদের। সাবেক ও বর্তমানের মেলবন্ধনে বিরামহীন ব্যস্ততা।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আনন্দের সাথে কাজ করছে তার সাথে পূর্ণমিলনী হয় সিনিয়র- জুনিয়রদের। এমনও হচ্ছে চারুকলার সাথে জড়িত না কিন্তু তারা দেখতে আসছে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন চারুকলার নিজস্ব অর্থায়নে। জলরং, সরাচিত্র, পাখি, মুখোশের যে পসরা তা বিক্রির টাকা রসদ জোগায় শোভাযাত্রার আয়োজনে।

আয়োজনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিল্পকর্ম যেটা বিক্রি হয় এইটার টাকা দিয়ে আমাদের এই একমাসের কর্মযজ্ঞ চলে। আমাদের আয়োজনের সবকিছুর ফান্ড এখান থেকেই হয়।’

চারুকলার স্কুলঘর সেজেছে এবার রিকশাচিত্রে। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতেই এবার এই ভিন্ন মাত্রা।

আরেকজন বলেন, ‘রিকশা পেইন্টিংকে সম্মান জানানোর জন্য আমাদের চারুকলার স্কুলের দেয়ালে এই পেইন্টিং করা হয়েছে এবার।’

বর্ষবরণে পাঁচটি মোটিফের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে দেশীয় ঐতিহ্যের নানা দিক। কলুষতা দূর করে যেন আলোকের ঝর্ণাধারার সন্ধান।

সংস্কৃতিকর্মী বলেন, ‘বাঙালির ঐতিহ্যকে আমরা ধারন করি, লালন করি এবং এইটা যেন বেঁচে থাকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের ও সকল রাজনীতির মানুষ এক জায়গায় এসে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে থাকে।’

আমরা তো তিমির বিনাশী। এই বার্তার মধ্যে দিয়ে সমস্ত অন্ধকার ও কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে মুক্তির আহবান নতুন বছরে। মঙ্গল শোভাযাত্রা আপন জাতিসত্তায় অনুপ্রাণিত হওয়ার উৎসব। শুভবুদ্ধির উদয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্পৃক্ত হওয়ার উপলক্ষ্য।

ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, ‘এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সবার। এইটা হচ্ছে প্রতিবাদ থেকে জন্ম এবং এই প্রতিবাদটা ছিল সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপ্রেক্ষতা, গণতন্ত্র মুক্তি সবকিছু মিলে শুভবুদ্ধি ও সচেতনা মানুষের মধ্যে জাগুক।’

সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগ্রত করার পাশাপাশি যাবতীয় অশুভ দূর করে প্রতিটি হৃদয়ে আলো ছড়াবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। অটুট রাখবে সৃজনশীল শিল্পচর্চা।

চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, ‘লোক শিল্পের যে ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে একটা মেলবন্ধন রাখবার জন্য এবং মানুষ তার নিজ অঞ্চল সম্পর্কে জানবে এর জন্য এইটা করি। আমরা মনে করছি আমাদের অন্ধকার শক্তির বিপক্ষে যে লড়াই সেটা এখন পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গল শোভাযাত্রার খুশির ঝড় আর বৈশাখী হাওয়া দোলা দেবে বাঙালির মননে। যাবতীয় জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ যেন আগামীর পথচলা আরও মঙ্গলময় করার নতুন বার্তা।