পেনশন স্কিম, প্রত্যাশার চেয়েও গ্রাহক কম
- আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
- / ৪০০ বার পড়া হয়েছে
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে গেল ৮ মাসে ৬০ হাজার গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। যার বিপরীতে জমা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। যা প্রত্যাশার চেয়েও কম। তাই এই স্কিম নিয়ে সরকারের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও নাগরিকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না তেমন। এর জন্য আস্থাহীনতা, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পেনশন স্কিমের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
গেল বছরের আগস্টে সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত কর্মী, স্বল্প আয়ের মানুষ এবং প্রবাসীদের অংশ নেয়ার সুযোগ রেখে চারটি আলাদা স্কিমের ঘোষণা দেয়া হয়। স্কিমগুলোতে মোট ১০ কোটি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নেয় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ৷ এ স্কিম নিয়ে সরকারের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও নাগরিকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না তেমন। গেল ৮ মাসে ৬০ হাজার গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। যার বিপরীতে ৪৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে যার ৪১ কোটি টাকা ইতোম্যধ্যে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হলেও শুরুতে স্কিমটি যেভাবে সাড়া ফেলেছিল তাতে এখন ভাটা পড়েছে।
সরকারি পেনশন আওতার বাইরে থাকা নাগরিকদের জন্য সরকার গেল বছর সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু করলেও এখনও জানেননা অনেকই। যারা জানেন তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আস্থাহীনতা আর ব্যাংক ডিপোজিট কিংবা সঞ্চয় পত্রের চেয়ে কম সুবিধা থাকারে অভিযোগ তাদের।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে আইটি বিভাগে প্রায় ৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন এস এম আব্দুল্লাহ। মাসিক বেতন আর উৎসব ভাতা ছাড়া প্রোভিডেন্ড ফান্ড কিংবা নেই কোনো পেনশন সুবিধা। চাকরি ছাড়লে পাবেন না এককালীন কোনো ভাতা বা টাকা।
তার কাছে পেনশন মানে এক সাথে নির্দ্দিষ্ট অংকের টাকা যা পাওয়া যায় নির্দ্দিষ্ট সময় পর। তবে দেশে নতুন চালু হওয়া সর্বজনিন পেনশন স্কিম নিয়ে তার ভাবনা কি?
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘চালের দাম দেশে ২০ বছরে বাড়ছে ৮ গুণ। তাহলে ২৮ বছর পর আমার এ ৩ হাজার টাকার মূল্য কত হবে। এখানে তো আমার লাভের কিছু দেখি না। এরপরও যে রিটার্ন করছি তা আমার পকেট থেকে যাচ্ছে, তাহলে আমি কেন করবো বলেন।’
দেশের বেসরকারি খাতে কর্মরতদের একটি বড় অংশেরই পরিস্থিতি আব্দুল্লাহর মতো। শ্রম জরিপ অনুযায়ী, দেশে কাজে নিয়োজিতদের ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত, যেখানে সাধারণ করপোরেট সুযোগ সুবিধাগুলোর নিশ্চয়তাও পান না অনেকেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি বলছে, দেশে ১০ ভাগ বেসরকারি চাকরিজীবীর প্রভিডেন্ট বা গ্রাচ্যুইটি সুবিধা আছে। আর ৪০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন বলেন, ‘নতুন একটা স্কিম আদৌ স্টাবলিশ হবে কি না। এজন্য আরও কিছুদিন দেখি ভবিষ্যতে কি হয়।’
এছাড়া রেমিট্যান্স আনাসহ পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর কথা শুরু থেকে বলে আসলেও সাড়া মেলেনি খুব একটা। প্রবাসে যেসব ব্যাংক পেনশন স্কিম নিয়ে কাজ করছে সেখানেও মিলছে না গ্রাহক সংখ্যা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ভাটা পড়ার কারণ হলো প্রতিটি মানুষকে আমরা মেসেজটা দিতে পারিনি। সর্বস্তরের মানুষকে একটি সামাজিক নিরাপত্তায় আনার কর্মসূচি এ যাবৎ ছিল না। এ কর্মসূচি যদি আমরা সম্পূর্ণ করতে পারি, যদি মানুষ নিজ নিজ স্কিমে এনরোলড হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যৎে আশা করি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাষায় এনরোলড হওয়ার মতো আর লোকই থাকবে না।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থাহীনতা, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পেনশন স্কিমের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড.মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষের যে আস্থার অভাব, সেটা কিন্তু একটা বৃহত্তর বিষয়। এবং পেনশন স্কিম তো সেটার বাইরে না। সেজন্য এ স্কিম নিয়ে প্রত্যাশিত আগ্রহ তৈরি হয়নি মানুষের।
মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারেন ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকরা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনায় সরব ছিল সব মহল। যেখানে চিন্তার শীর্ষে ছিল জমানো অর্থের সুরক্ষা, মেয়াদ শেষে টাকা পাওয়া, না পাওয়ার আস্থাহীনা। তবে স্কিম চালুর ৮ মাস পার হলেও এসব প্রশ্নের স্থায়ী সমাধান কিংবা আস্থা অর্জনে কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা কতটুকু সফল?
এসব প্রশ্নের উত্তর মেলা যতটা কঠিন, তততাই কি কঠিন মানুষের আস্থা অর্জন? তাই সাধারণ নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার পেছনে আস্থাহীনতা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নাকি মূল্যস্ফীতি দায়ি সে প্রশ্ন থেকেই যায়।