জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ক্ষতির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি
- আপডেট সময় : ০৮:৩৫:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
- / ৩৯৮ বার পড়া হয়েছে
রেকর্ড ভাঙা তাপদাহ, ভয়াবহ বন্যা আর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকে করুণ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে যে পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে, আগামী ২৬ বছরে সেই অর্থ আয়ই ১৯ শতাংশ কমে যাবে সারাবিশ্বে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ ১৯ থেকে ৫৯ লাখ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে বিশ্ব।
মরুভূমিতে বৃষ্টি-বন্যা, নাতিশীতোষ্ণ দেশে তাপপ্রবাহ, শীতপ্রধান দেশে দাবানলের তীব্রতা। শিল্প বিপ্লবের পর বিশ্বের জলবায়ু পরিস্থিতি গেল এক থেকে দুই দশকের মধ্যে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কার্বন ডাই অক্সাইড যদি আজ থেকেই উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনা হয়, এরপরও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ ১৯ শতাংশ কমে যাবে মানুষের আয়। নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘটবে এমনটা। সঙ্গে বৃষ্টিপাত আর তাপমাত্রার ওঠানামাও কারণ হিসেবে কাজ করবে, আগুনে ঘি ঢালবে দাবানল আর ঝড়।
পডস্টাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের নতুন এই গবেষণা বলছে, আগামী ২৫ থেকে ২৬ বছরে বিশ্ব অর্থনীতিকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করবে জলবায়ু পরিবর্তন। ক্ষতির মুখে পড়বে উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত সব দেশ। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপে কমবে মানুষের আয়। দক্ষিণ এশিয়া আর আফ্রিকাকে দিতে হবে চরম মূল্য, যেখানে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে এখানকার দেশগুলোর ভূমিকা কম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের চরম লোকসানের কথাও। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের কারণে শিল্প বিপ্লবের পর ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে বিশ্বের তাপমাত্রা।
আসছে সময়গুলোতে আরও বাড়বে বন্যা, ঝড়, তাপদাহ আর দাবানল। তৈরি হবে স্বাস্থ্যঝুঁকি, বাড়বে অর্থনৈতিক ক্ষতি, মানুষের ভোগান্তি আর মৃত্যুহার। কমবে মানুষের উৎপাদন সক্ষমতা। ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ১৬ লাখ কোটি ডলার। ভবিষ্যতে যা বছরে ৫০ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।
জলবায়ুকে কম ক্ষতিগ্রস্ত করা দেশগুলোর আয় সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর তুলনায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বিশ্বের জিডিপি ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ প্রতিবেদনে পরিষ্কার, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিনিয়োগ সাশ্রয়ী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে না দেওয়ার পদক্ষেপ নিলে বিনিয়োগ হবে পূর্বাভাসের লোকসানের চেয়ে ৬ গুণ কম।
মূলত বিশ্বের ১ হাজার ৬০০ এলাকার ওপর গেল ৪০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে এই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। উল্টোদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ নিলে খরচ হবে ৬ লাখ কোটি ডলার। জ্বালানি তেল, গ্যাস আর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোই শুধুমাত্র বিশ্বের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।