ঢাকা ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রভাব শ্রম অর্থনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৬:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • / ৩৯০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জীবিকার খোঁজে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আয়-রোজগার সামান্য। শেষমেশ ঠাঁই হয় ঘিঞ্জিবস্তি এলাকায়। এবারের তীব্র গরম তাদের জীবনে তৈরি করেছে আরও সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বস্তির বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মপরিবেশ। প্রভাব পড়ছে শ্রম অর্থনীতিতে।

কড়াইল বস্তির এক সরু গলির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে নিলুফা আক্তার। দুপুরে রান্নার সময় গড়িয়ে গেলেও তার অপেক্ষা রিকশাচালক স্বামীর জন্য। কাজ শেষে বাজার নিয়ে ঘরে এলেই জুটবে আহার, মিটবে ক্ষুধা। তবে ক্ষুধা নিবারণের সঙ্গে এখন বাড়তি চিন্তা যুক্ত হয়েছে গরমের অস্বস্তি। কারণ অসুস্থ হলেই খরচা হবে বাড়তি টাকা।

নিলুফা আক্তার বলেন, ‘এখানে গরম বেশি। খুব একটা থাকায় যায় না। রাতে কারেন্ট গেলে বাইরে বসে থাকা লাগে।’

অন্যদিকে সাততলা বস্তির খুপড়ি ঘরে তিনবছর হলো সংসার পেতেছেন জীবন আহমেদ। বাইরের গরমের তাপ সহ্য না হওয়ায় আধাবেলা কাজ করে ঘরে ফিরেছেন। সঙ্গে এনেছেন সর্বসাকুল্যে ৮০ টাকার বাজার। তা দিয়েই চলবে ঘরের চার সদস্যের দু’বেলার খাবার। মাস শেষে ঘর ভাড়া গুনতে হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু গরমে কাজ কমেছে ফলে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তারও।

জীবন আহমেদ বলেন,’বর্তমান বাজারে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এর ভেতর রুম ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া হতো আছেই। খুব সমস্রায় আছি গরমের কারণে।’

এই গরমে বস্তি এলাকায় যে সংকটগুলো নিত্যদিনের সঙ্গী তা হলো বিশুদ্ধ খাবার পানি অভাব, পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকা, অপ্রতুল পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। তাছাড়া পাতলা টিনের ছাউনির নিচে একই ঘরে গাদাগাদি করে ৫ থেকে ৭ জন মানুষ বসবাস করায় গরমের তাপ অনুভব হয় আরও বেশি। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসে কোনোরকমে মাথাগুজে থাকা এই মানুষগুলো বলছে বস্তিজীবনে স্বস্তিতে নেই তারা।

তবে অন্য সবকিছুর মধ্যে তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া। রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত এখানকার অধিকাংশ মানুষেরই রয়েছে শুধু ফার্মেসী নির্ভরতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ঘটছে র্দীঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। এতে শ্রম দেওয়ার সক্ষমতা কমছে ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম. এইচ. চৌধুরী লেলিন বলেন, ‘একদিকে গরমের কারণে ক্লান্ত। তারসাথে এই রোগগুলোতে যাা আক্রান্ত হয় তারা কিন্তু কাজে আসতে পারে না। শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়। তাদের পরিবারে যারা আছে, তাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়। আমাদের প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী কিন্তু অপচিকিৎসার শিকার হয়।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ‌‌জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ আর শুধু ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ৯ লাখ বস্তিবাসীর বসবাস। এদিকে নগরের বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা নগরপিতারা বলছেন, মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তিবাসীরা কিন্তু বেশি কষ্টে থাকে। কারণ তাদের ছাদগুলো টিনের। তাপ এর জন্য আরও বেড়ে যায়। এজন্য ভাসানটেক, কড়াইল বিভিন্ন বস্তিতে তাপ বেশি হচ্ছে।’

ঘিঞ্জি এই পরিবেশে ঠাঁই নেওয়া বস্তিবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রত্যাশা থাকে নগরপিতাদের কাছে। সরকারের দেওয়া আবাসন আর কর্মপরিবেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন এই বস্তিবাসীর মনে ফিরবে স্বস্তি তেমনি অর্থনীতির চাকা হবে আরও গতিশীল।

নিউজটি শেয়ার করুন

শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রভাব শ্রম অর্থনীতিতে

আপডেট সময় : ১২:৪৬:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

জীবিকার খোঁজে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আয়-রোজগার সামান্য। শেষমেশ ঠাঁই হয় ঘিঞ্জিবস্তি এলাকায়। এবারের তীব্র গরম তাদের জীবনে তৈরি করেছে আরও সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বস্তির বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মপরিবেশ। প্রভাব পড়ছে শ্রম অর্থনীতিতে।

কড়াইল বস্তির এক সরু গলির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে নিলুফা আক্তার। দুপুরে রান্নার সময় গড়িয়ে গেলেও তার অপেক্ষা রিকশাচালক স্বামীর জন্য। কাজ শেষে বাজার নিয়ে ঘরে এলেই জুটবে আহার, মিটবে ক্ষুধা। তবে ক্ষুধা নিবারণের সঙ্গে এখন বাড়তি চিন্তা যুক্ত হয়েছে গরমের অস্বস্তি। কারণ অসুস্থ হলেই খরচা হবে বাড়তি টাকা।

নিলুফা আক্তার বলেন, ‘এখানে গরম বেশি। খুব একটা থাকায় যায় না। রাতে কারেন্ট গেলে বাইরে বসে থাকা লাগে।’

অন্যদিকে সাততলা বস্তির খুপড়ি ঘরে তিনবছর হলো সংসার পেতেছেন জীবন আহমেদ। বাইরের গরমের তাপ সহ্য না হওয়ায় আধাবেলা কাজ করে ঘরে ফিরেছেন। সঙ্গে এনেছেন সর্বসাকুল্যে ৮০ টাকার বাজার। তা দিয়েই চলবে ঘরের চার সদস্যের দু’বেলার খাবার। মাস শেষে ঘর ভাড়া গুনতে হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু গরমে কাজ কমেছে ফলে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তারও।

জীবন আহমেদ বলেন,’বর্তমান বাজারে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এর ভেতর রুম ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া হতো আছেই। খুব সমস্রায় আছি গরমের কারণে।’

এই গরমে বস্তি এলাকায় যে সংকটগুলো নিত্যদিনের সঙ্গী তা হলো বিশুদ্ধ খাবার পানি অভাব, পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকা, অপ্রতুল পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। তাছাড়া পাতলা টিনের ছাউনির নিচে একই ঘরে গাদাগাদি করে ৫ থেকে ৭ জন মানুষ বসবাস করায় গরমের তাপ অনুভব হয় আরও বেশি। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসে কোনোরকমে মাথাগুজে থাকা এই মানুষগুলো বলছে বস্তিজীবনে স্বস্তিতে নেই তারা।

তবে অন্য সবকিছুর মধ্যে তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া। রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত এখানকার অধিকাংশ মানুষেরই রয়েছে শুধু ফার্মেসী নির্ভরতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ঘটছে র্দীঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। এতে শ্রম দেওয়ার সক্ষমতা কমছে ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম. এইচ. চৌধুরী লেলিন বলেন, ‘একদিকে গরমের কারণে ক্লান্ত। তারসাথে এই রোগগুলোতে যাা আক্রান্ত হয় তারা কিন্তু কাজে আসতে পারে না। শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়। তাদের পরিবারে যারা আছে, তাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়। আমাদের প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী কিন্তু অপচিকিৎসার শিকার হয়।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ‌‌জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ আর শুধু ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ৯ লাখ বস্তিবাসীর বসবাস। এদিকে নগরের বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা নগরপিতারা বলছেন, মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তিবাসীরা কিন্তু বেশি কষ্টে থাকে। কারণ তাদের ছাদগুলো টিনের। তাপ এর জন্য আরও বেড়ে যায়। এজন্য ভাসানটেক, কড়াইল বিভিন্ন বস্তিতে তাপ বেশি হচ্ছে।’

ঘিঞ্জি এই পরিবেশে ঠাঁই নেওয়া বস্তিবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রত্যাশা থাকে নগরপিতাদের কাছে। সরকারের দেওয়া আবাসন আর কর্মপরিবেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন এই বস্তিবাসীর মনে ফিরবে স্বস্তি তেমনি অর্থনীতির চাকা হবে আরও গতিশীল।