বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বিশ্বে তৈরি করবে অর্থনৈতিক ঝুঁকি
- আপডেট সময় : ১২:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
- / ৩৯৪ বার পড়া হয়েছে
তীব্র দাবদাহের কবলে পড়েছে পৃথিবীর দক্ষিণ আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামের প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৩ দশকে এই তাপদাহ স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বিশ্বে তৈরি করবে চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে না আনলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
পৃথিবীতে তাপ এতো বাড়ছে, যেন একটু একটু করে পৃথিবীর কাছে চলে আসছে সূর্য। চরম সত্য হলো, দুর্বল হচ্ছে সূর্যের তীব্রতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষার কবজ ওজোন স্তর। কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণে আর স্থিতিশীল থাকছে না ওজোন স্তর। যে কারণে বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণায়ন। প্রতিবছরই রেকর্ড ভাঙছে তাপদাহ। জীবন আর অর্থনীতিকে আপাতত চালিয়ে নিতে পারলেও ভবিষ্যতে আসছে কঠিন সময়। এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
১৮৫০ সালের পর ২০২৩ সালকে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৪০ বছর আগের তাপপ্রবাহের চেয়ে এখনকার তাপপ্রবাহে উষ্ণতা অনেক বেশি আর দীর্ঘস্থায়ী। ২০২৪ সালেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই তাপমাত্রার ভয়াবহতার প্রভাব পড়ছে। খরায় বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের উৎপাদন। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকায় লাখ লাখ একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রা আর পানি সংকটে। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে এরমধ্যেই পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো শীতল রাখতে দরকার পড়ছে বাড়তি পানি, কোথাও কোথাও হচ্ছে ব্ল্যাকআউট। বিদ্যুৎ না থাকায় শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চলছে না।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামের প্রতিবেদন বলছে, ২০৬০ সাল নাগাদ এই তাপপ্রবাহ তৈরি করতে পারে চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি। অতিরিক্ত তাপে নষ্ট হবে ফসল, ব্যাহত হবে শিল্প কারখানার কাজ। গরমে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে বিশ্ববাজারে তৈরি হবে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি, জ্বালানির সরবরাহ। সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই সংস্থার আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার খরচের চেয়ে ৬ গুণ বাড়বে পরিবেশ বিপর্যয়ের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি।
বিশ্ব যদি এখনই স্থিতিশীল উন্নয়নের পথ বেছে নেয়, এরপরও ২৫ শতাংশ বাড়বে তাপপ্রবাহের দিন। ২০৬০ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ৪ লাখ কোটি ডলার। আর পরিবেশ বিপর্যয় বর্তমান অবস্থায় চলতে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৫০০ শতাংশ বা ২৫ লাখ কোটি ডলার, দাবদাহের দিন বেড়ে যাবে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আর লাতিন আমেরিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক বেশি।
তাপপ্রবাহে দাবানল সৃষ্টি হয়ে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। মার্চে কোপেরনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছিলো, ১৯৪০ সালের পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে উষ্ণ বছর। তবে মার্কিন ন্যাশনাল ওশেনিক এটমোস্ফেরিক এডমিনিস্ট্রেশন বলছে, এপ্রিল থেকে জুনের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা তৈরি করতে যাচ্ছে নতুন রেকর্ড। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিভিন্ন স্থানে দাবানল সৃষ্টি হয়ে লাখ লাখ হেক্টর এলাকা পুড় গেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, ব্রাজিলে।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার পরিসংখ্যান বলছে, দাবানলে বছরে ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে যুক্ত হচ্ছে, যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে উষ্ণায়ন। সিমেন্ট আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড। এক সপ্তাহ আগে নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনলেও ২০৪৫ সাল নাগাদ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি হবে ৩৮ লাখ কোটি ডলার। কৃষিকাজ ও শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত, শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা কমায় মানুষের আয় কমে যাবে ১৯ শতাংশ।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, মানুষের কারণে সৃষ্টি হওয়া দাবদাহে ১৯৯২ থেকে ২০১৩ সালে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ৫ লাখ থেকে প্রায় ৩০ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত। পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ বলছে, ২০৪৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের আর্থিক ক্ষতি পৌঁছাবে বছরে ১৯ থেকে ৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ নিলে খরচ হবে ৬ লাখ কোটি ডলার।