ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ১১:০৫:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
- / ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে, সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান এফেয়ার্স ব্যুরোর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তা ও সফররত দলের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার চিঠিতে দু’দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’কে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’
এ সময় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে নির্মীয়মাণ ৪০টি আইটি ভিলেজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ডোনাল্ড লু-কে অনুরোধ জানিয়েছি, কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।
তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড লু বলেছেন আমাদের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য আগে যে ‘জিএসপি’ সুবিধা আমরা পেতাম এখন পাই না, সেটি তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটি আমরা রিভিউ করছি। সেটি নিয়ে গতকাল আইনমন্ত্রীর সাথে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘ডোনাল্ড লু জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করার জন্য তাদের ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একই সাথে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করার জন্য সহায়তা করতে চায়। ট্যাক্স ফাঁকি রোধে ট্যাক্স কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।
এলডিসি বা নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেও তাদের সহায়তা চেয়েছি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের আওতাভুক্ত। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বিভাগগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের বিচার বিভাগের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিচার বিভাগের সম্মতি আনয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের পরই সবচেয়ে বেশি ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘লু জানিয়েছেন, তিনি এ সহায়তা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করবেন।’ পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। ডেনাল্ড লু বলেছেন-‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার, সেক্রেটারি অব স্টেট মিস্টার ব্লিঙ্কেন অক্লান্তভাবে কাজ করছেন যাতে গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়’ এবং তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- ‘আমরা আশাবাদী’। আমরা বলেছি, গাজায় যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, নিরীহ শিশুদের, নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি, টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আরো ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যেন তাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা হয়।
মন্ত্রী আরও জানান, তারা নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু ইস্যুতেও সহায়তাদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে বৈঠক শেষে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। কীভাবে দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়, আমরা সে বিষয়গুলোতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে দুই দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও আস্থা নতুন করে তৈরি করতে এসেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা পরস্পর নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ছাড়াও কীভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে এবং এদেশে শ্রম আইনকে আরও উন্নত করার বিষয়েও আলোচনা করেছি।