ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যেভাবে করা হয়েছিল এমপি আনারকে খুনের পরিকল্পনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:০০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
  • / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। ঢাকায় পুলিশের নজরদারির কারণে হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।

ডিবিপ্রধান বলেন, রাজধানীর গুলশান ও বসুন্ধরার দুই বাসায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই-তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করেছে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এমপিকে হত্যা করেছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই অপরাধীরা কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পর তারা পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরাদিতে রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনিও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানে করে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন।

তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবো। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে। তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কী হবে। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন।

গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যায়। ১৩ তারিখ ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে চালক রাজার গাড়িতে করে ওই বাসায় যায়। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। আগে সেখানে ভেতরে ছিল জাহিদ, সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

হত্যার পর তার শরীর বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। হাড়-হাড্ডি থেকে শরীরের মাংস আলাদা করা হয়েছে। এরপর গ্রে কালারের লাগেজে ভরে মূল হত্যাকারী যিনি আমাদের কাছে আছেন তিনি, জাহিদ ব্রিফকেস নিয়ে বের হয়। এরপর সিয়াম পাবলিক টয়লেটের কাছে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে আসেন আরেকজন তিনি আমানুল্লাহ। ভারতীয় চালকসহ তারা গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

মূল যে হত্যাকারী তিনি বাসায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে ২/৩ জন মিলে আনারের খণ্ড বিখণ্ড শরীর কয়েকটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। তারা এমন নৃশংস কায়দায় হত্যার কাজটি সংঘটিত করেছে যাতে করে ধরা না পড়ে। সেজন্য তারা হাড়-গোড় মাংস আলাদা করেন, হলুদ মিশিয়ে দেন। যাতে করে কেউ বললেও বলতে পারে বাজার থেকে আনা। উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে, কেউ যেন কোনো দিন আনারের অস্তিত্ব খুঁজে না পায়।

১৫ মে মূল হত্যাকারী, গার্লফ্রেন্ডসহ ফিরে আসে। ১৫ মে মোস্তাফিজ ফিরে আসে বাংলাদেশে। সবাই যখন ফিরে আসে তখন মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন ভিস্তারা এয়ারলাইনসে দিল্লি হয়ে দুই ঘণ্টার ট্রানজিট নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডু চলে যান। সেখান থেকে হয়ত সে অন্য কোথায় চলে যেতে পারে।

তিনি বলেন, হত্যাকারীরা এমনভাবে লাশ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। লাশ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যেভাবে করা হয়েছিল এমপি আনারকে খুনের পরিকল্পনা?

আপডেট সময় : ১০:০০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। ঢাকায় পুলিশের নজরদারির কারণে হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।

ডিবিপ্রধান বলেন, রাজধানীর গুলশান ও বসুন্ধরার দুই বাসায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই-তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করেছে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এমপিকে হত্যা করেছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই অপরাধীরা কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পর তারা পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরাদিতে রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনিও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানে করে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন।

তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবো। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে। তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কী হবে। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন।

গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যায়। ১৩ তারিখ ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে চালক রাজার গাড়িতে করে ওই বাসায় যায়। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। আগে সেখানে ভেতরে ছিল জাহিদ, সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

হত্যার পর তার শরীর বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। হাড়-হাড্ডি থেকে শরীরের মাংস আলাদা করা হয়েছে। এরপর গ্রে কালারের লাগেজে ভরে মূল হত্যাকারী যিনি আমাদের কাছে আছেন তিনি, জাহিদ ব্রিফকেস নিয়ে বের হয়। এরপর সিয়াম পাবলিক টয়লেটের কাছে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে আসেন আরেকজন তিনি আমানুল্লাহ। ভারতীয় চালকসহ তারা গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

মূল যে হত্যাকারী তিনি বাসায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে ২/৩ জন মিলে আনারের খণ্ড বিখণ্ড শরীর কয়েকটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। তারা এমন নৃশংস কায়দায় হত্যার কাজটি সংঘটিত করেছে যাতে করে ধরা না পড়ে। সেজন্য তারা হাড়-গোড় মাংস আলাদা করেন, হলুদ মিশিয়ে দেন। যাতে করে কেউ বললেও বলতে পারে বাজার থেকে আনা। উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে, কেউ যেন কোনো দিন আনারের অস্তিত্ব খুঁজে না পায়।

১৫ মে মূল হত্যাকারী, গার্লফ্রেন্ডসহ ফিরে আসে। ১৫ মে মোস্তাফিজ ফিরে আসে বাংলাদেশে। সবাই যখন ফিরে আসে তখন মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন ভিস্তারা এয়ারলাইনসে দিল্লি হয়ে দুই ঘণ্টার ট্রানজিট নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডু চলে যান। সেখান থেকে হয়ত সে অন্য কোথায় চলে যেতে পারে।

তিনি বলেন, হত্যাকারীরা এমনভাবে লাশ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। লাশ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে।