ঢাকা ১১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪
  • / ৩৮৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কখনো তীব্র তাপপ্রবাহে অতীষ্ঠ জীবন। আবার কখনো ঘুর্ণিঝড়ে এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন জনপদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। তাই বৈরিতাকে সঙ্গী করেই পথ চলতে হয় দিন মাস বছর।

দূষণ বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা হুমকির মুখে বিপন্ন পরিবেশ ও জীবন। তবে পরিবেশগত সংকট যত, তা মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ততটাই অপ্রতুল। জলবায়ু ও পরিবেশবিদরা বলছেন, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু অর্থায়নের কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি।

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বাড়ছে বাংলাদেশে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে বাড়ছে তাপমাত্রা, কোমলতা হারাচ্ছে প্রকৃতি। বাড়ছে আকস্মিক বন্যা, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা পরিবেশগত সংকট।

ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু অভিবাসনের ঝুঁকি সূচকে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স’র তথ্যমতে, বৈশ্বিত সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে মাত্র তিনটি দেশ।

আইপিসিসি’র একটি গবেষণায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসী হবেন। এছাড়া দেশের ১৭ শতাংশ ভূমি এবং ৩০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ। তবে তা মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে যে বরাদ্দ তা কি পর্যাপ্ত?

বিগত বাজেট পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২৩ কোটি। আর সবশেষ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জলবায়ু খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

দুর্যোগের পরিমাণ বাড়তে থাকলেও বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বরাদ্দকে অপ্রতুল বলছেন তারা। তাদের পরামর্শ, পরিবেশের সুরক্ষা ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাড়াতে হবে তহবিল।

পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ থেকে ২০ গুণ। আর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২ গুণ। এটা ছাড়াও যে মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে জনসম্পৃক্ততা আছে সেগুলোতে তেমন একটা বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে না।’

জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নের কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি। বলছেন, টেকসই অগ্রগতির পথে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট বৃদ্ধি করে তার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোরও তাগিদ তাদের।

জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ জাকির হোসেন খান বলেন, ‘কোন এলাকায় কোন ধরনের ঝুঁকি আছে এবং কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা পাবে সেটা সুনির্দিষ্ট সূচকের ভিত্তিতে নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু এমন কোনো কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

প্রকৃতিকে কব্জা করার চেষ্টা নয়, বরং মৈত্রী ও বন্ধুতার মধ্যদিয়ে নির্মল হবে পরিবেশ ও জীবন। আর তাই বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্যকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সঠিক পদক্ষেপের তাগিদ পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০১:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

কখনো তীব্র তাপপ্রবাহে অতীষ্ঠ জীবন। আবার কখনো ঘুর্ণিঝড়ে এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন জনপদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। তাই বৈরিতাকে সঙ্গী করেই পথ চলতে হয় দিন মাস বছর।

দূষণ বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা হুমকির মুখে বিপন্ন পরিবেশ ও জীবন। তবে পরিবেশগত সংকট যত, তা মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ততটাই অপ্রতুল। জলবায়ু ও পরিবেশবিদরা বলছেন, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু অর্থায়নের কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি।

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বাড়ছে বাংলাদেশে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে বাড়ছে তাপমাত্রা, কোমলতা হারাচ্ছে প্রকৃতি। বাড়ছে আকস্মিক বন্যা, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা পরিবেশগত সংকট।

ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু অভিবাসনের ঝুঁকি সূচকে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স’র তথ্যমতে, বৈশ্বিত সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে মাত্র তিনটি দেশ।

আইপিসিসি’র একটি গবেষণায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসী হবেন। এছাড়া দেশের ১৭ শতাংশ ভূমি এবং ৩০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ। তবে তা মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে যে বরাদ্দ তা কি পর্যাপ্ত?

বিগত বাজেট পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২৩ কোটি। আর সবশেষ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জলবায়ু খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

দুর্যোগের পরিমাণ বাড়তে থাকলেও বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বরাদ্দকে অপ্রতুল বলছেন তারা। তাদের পরামর্শ, পরিবেশের সুরক্ষা ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাড়াতে হবে তহবিল।

পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ থেকে ২০ গুণ। আর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২ গুণ। এটা ছাড়াও যে মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে জনসম্পৃক্ততা আছে সেগুলোতে তেমন একটা বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে না।’

জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নের কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি। বলছেন, টেকসই অগ্রগতির পথে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট বৃদ্ধি করে তার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোরও তাগিদ তাদের।

জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ জাকির হোসেন খান বলেন, ‘কোন এলাকায় কোন ধরনের ঝুঁকি আছে এবং কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা পাবে সেটা সুনির্দিষ্ট সূচকের ভিত্তিতে নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু এমন কোনো কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

প্রকৃতিকে কব্জা করার চেষ্টা নয়, বরং মৈত্রী ও বন্ধুতার মধ্যদিয়ে নির্মল হবে পরিবেশ ও জীবন। আর তাই বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্যকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সঠিক পদক্ষেপের তাগিদ পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের।