০৯:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দের তাগিদ

যাদের শ্রম ও ঘাম দেশের বড় বাজেটের যোগান দেয়, মূল্যস্ফীতির চাপে প্রায় চিড়ে চ্যাপ্টা হবার দশা সেই দিনমজুর-শ্রমজীবীদের। বাজেটের জটিল হিসাব নিকাশ না বুঝলেও নীরবে-নিভৃতে অর্থনীতিকে মজবুত করছে যারা, তাদের দুর্বল রেখে স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি অপ্রত্যাশিত। তাই এবারের বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

মানুষের নিরাপদ আবাস গড়তে গিয়ে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তায় এখনও অমনোযোগী বগুড়ার গন্ডগ্রামের রাশেদুল ইসলাম মিঠু। বাড়ি বিক্রি করে বড় মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর এখন দুই মেয়ের বিয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ।

মাসিক ১৪ হাজার টাকা আয়ে বৃদ্ধ মা, তিন মেয়ে, স্ত্রী আর নিজের খরচ মেটাতে গিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকাই ঘাটতি থাকে তার। সেই ঘাটতি পূরণে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরেছে চার এনজিওর ঋণ। পুষ্টিকর খাবার বা ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের মতো আর্থিক নিরাপত্তা মিঠুর মতো শ্রমিকদের কাছে দুঃস্বপ্ন।

মিঠু বলেন, ‘দু’দিন কাজ হলে আবার দু’দিন কাজ হয় না। তখন ধার দেনা করে সংসার চালানো লাগে। এভাবেই কিস্তি বেশি নেয়া হয়ে গেছে।’

হাত না চললে যার পেট চলে না, তার জন্য দুর্ঘটনা যে অভিশাপ সেই দুঃখের গল্প বলছিলেন পরিবহন শ্রমিক ফজলুর রহমান। করতেন প্রথম সারির একটি পত্রিকা পরিবহনের কাজ। পত্রিকা পৌঁছাতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই পা। কানাকড়িও সাহায্য মেলেনি কর্মস্থল থেকে। চিকিৎসার জন্য বিক্রি করতে হয়েছে আড়াই বিঘা জমি। চার সন্তান নিয়ে কষ্টকর জীবন যাপন এখন যেন তার নিয়তি।

ফজলুর রহমান বলেন, ‘পরিবহন সেক্টর থেকে এক্সিডেন্ট হয়ে কেউ মারা যাচ্ছে, আবার কেউ পঙ্গু হয়ে যায়। তাদের তো একটা পরিবার আছে, তারা কি করে খাবে। আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য আদালা করে কিছু বরাদ্দ রাখা দরকার।’

করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারির পর যুদ্ধের দামামা অশান্ত করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। সমাজের চোখে যারা সচ্ছল তারা কি মুক্ত মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে- তাই জানতে বাজারে এক শিক্ষকের সঙ্গী এখন টেলিভিশন।

তিন সদস্যের পরিবারের জন্য চাল-ডাল, লবন-তেলসহ অন্যসব পণ্য বাদে সপ্তাহের কাঁচা তরিতরকারি, মাছ আর প্রয়োজনীয় টুকটাক কেনাকাটায় তার খরচ দেড় হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, পোশাক, বিদ্যুৎসহ যাবতীয় সাংসারিক খরচ মেটাতে প্রথম শ্রেণির এই কর্মকর্তাকেও পা ফেলতে হয় হিসাব করে। তাই আয়-ব্যয় বিবেচনায় আসছে বাজেটে সাধারণের জন্য বিশেষ ভাবনার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘একেবারেই দিন এনে দিন খায় বা করোনা, যুদ্ধের কারণে যাদের আয় ব্যাহত হয়েছে, তাদের প্রকৃত আয় বাড়ানোর দিকে যদি সরকার এই বাজেটে নজর দেয় তাহলে তারা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে।’

গত বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক পরিবারের মাসিক গড় আয় সাড়ে ৩২ হাজার টাকা, যার বিপরীতে ব্যয় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালাতে ঋণের ওপর নির্ভরশীল দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ।

বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দের তাগিদ

আপডেট : ০১:৩৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

যাদের শ্রম ও ঘাম দেশের বড় বাজেটের যোগান দেয়, মূল্যস্ফীতির চাপে প্রায় চিড়ে চ্যাপ্টা হবার দশা সেই দিনমজুর-শ্রমজীবীদের। বাজেটের জটিল হিসাব নিকাশ না বুঝলেও নীরবে-নিভৃতে অর্থনীতিকে মজবুত করছে যারা, তাদের দুর্বল রেখে স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি অপ্রত্যাশিত। তাই এবারের বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

মানুষের নিরাপদ আবাস গড়তে গিয়ে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তায় এখনও অমনোযোগী বগুড়ার গন্ডগ্রামের রাশেদুল ইসলাম মিঠু। বাড়ি বিক্রি করে বড় মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর এখন দুই মেয়ের বিয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ।

মাসিক ১৪ হাজার টাকা আয়ে বৃদ্ধ মা, তিন মেয়ে, স্ত্রী আর নিজের খরচ মেটাতে গিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকাই ঘাটতি থাকে তার। সেই ঘাটতি পূরণে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরেছে চার এনজিওর ঋণ। পুষ্টিকর খাবার বা ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের মতো আর্থিক নিরাপত্তা মিঠুর মতো শ্রমিকদের কাছে দুঃস্বপ্ন।

মিঠু বলেন, ‘দু’দিন কাজ হলে আবার দু’দিন কাজ হয় না। তখন ধার দেনা করে সংসার চালানো লাগে। এভাবেই কিস্তি বেশি নেয়া হয়ে গেছে।’

হাত না চললে যার পেট চলে না, তার জন্য দুর্ঘটনা যে অভিশাপ সেই দুঃখের গল্প বলছিলেন পরিবহন শ্রমিক ফজলুর রহমান। করতেন প্রথম সারির একটি পত্রিকা পরিবহনের কাজ। পত্রিকা পৌঁছাতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই পা। কানাকড়িও সাহায্য মেলেনি কর্মস্থল থেকে। চিকিৎসার জন্য বিক্রি করতে হয়েছে আড়াই বিঘা জমি। চার সন্তান নিয়ে কষ্টকর জীবন যাপন এখন যেন তার নিয়তি।

ফজলুর রহমান বলেন, ‘পরিবহন সেক্টর থেকে এক্সিডেন্ট হয়ে কেউ মারা যাচ্ছে, আবার কেউ পঙ্গু হয়ে যায়। তাদের তো একটা পরিবার আছে, তারা কি করে খাবে। আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য আদালা করে কিছু বরাদ্দ রাখা দরকার।’

করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারির পর যুদ্ধের দামামা অশান্ত করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। সমাজের চোখে যারা সচ্ছল তারা কি মুক্ত মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে- তাই জানতে বাজারে এক শিক্ষকের সঙ্গী এখন টেলিভিশন।

তিন সদস্যের পরিবারের জন্য চাল-ডাল, লবন-তেলসহ অন্যসব পণ্য বাদে সপ্তাহের কাঁচা তরিতরকারি, মাছ আর প্রয়োজনীয় টুকটাক কেনাকাটায় তার খরচ দেড় হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, পোশাক, বিদ্যুৎসহ যাবতীয় সাংসারিক খরচ মেটাতে প্রথম শ্রেণির এই কর্মকর্তাকেও পা ফেলতে হয় হিসাব করে। তাই আয়-ব্যয় বিবেচনায় আসছে বাজেটে সাধারণের জন্য বিশেষ ভাবনার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘একেবারেই দিন এনে দিন খায় বা করোনা, যুদ্ধের কারণে যাদের আয় ব্যাহত হয়েছে, তাদের প্রকৃত আয় বাড়ানোর দিকে যদি সরকার এই বাজেটে নজর দেয় তাহলে তারা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে।’

গত বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক পরিবারের মাসিক গড় আয় সাড়ে ৩২ হাজার টাকা, যার বিপরীতে ব্যয় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালাতে ঋণের ওপর নির্ভরশীল দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ।