ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বাজাটে টেলিকম খাতে খরচ বাড়বে গ্রাহকের

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
  • / ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাজেটে টেলিকম খাতে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়লে ১০০ টাকার বিপরীতে জনগণকে গুণতে হবে প্রায় ৩৯ টাকা। আর এ বছর আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতের ২৭ ধরনের সেবা প্রথমবারের মতো করের আওতায় আসছে। দেশে এসব খাতের ব্যবসা এখনও শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়নি বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাই করমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।

সরকার যে কয়টি খাত থেকে আয় করে তার অন্যতম টেলিকম খাত। সরকারের রাজস্ব আয়ের মাত্র ৫ শতাংশ এখান থেকে এলেও জিডিপিতে এর অবদান ১ শতাংশ।

এক হিসেবে দেখা যায়, ১০০ টাকার বিপরীতে গ্রাহককে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ দিতে হয় প্রায় ৩৪ টাকা, আর ৩৯ থেকে ৪৪ টাকা দিতে হয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে। সবমিলে সরকারকে দিতে হয় ৭২ থেকে ৭৮ টাকা। নতুন করে এ বছর আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়লে খরচ আরো বাড়বে। এতে গ্রাহক ভ্যাটের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।

টেলিকম কোম্পানিগুলো বলছে, বাজেটে নতুন করা আরোপে তাদের আয় যেমন কমে তেমনি নতুন বিনিয়োগেও তারা হিমশিম খান। নতুন করে ভ্যাট আরও বাড়লে প্রভাব পড়বে টেলিকম খাতে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমাদের কনজ্যুমার ট্যাক্স যেটা ধরা করা হচ্ছে সেটা অনেক বেশি। এটা আমাদের এফোর্ট অ্যাবিলিটি কমিয়ে দিচ্ছে। এখানে ট্যাক্স কমিয়ে দিলে কনজামশন যদি বাড়ে তাহলে এর চেয়ে বেশি গ্রোথ পাওয়া যাবে।’

টেলিকম খাতে প্রতিবছর যে হারে কর আরোপ হচ্ছে, সেই করের বোঝা গিয়ে পড়ছে জনগণের ওপর। এবং নতুন করে বড় হওয়া আইসিটি সেক্টরে যদি কর আরোপ করা হয়, তাহলে ছোট ব্যবসায়ীরাও করের বোঝায় পড়ছেন। তবে আইসিটি সেক্টরে নতুন যে ব্যবসা চালু হয়েছে, সেটার ক্ষেত্রে যদি আরও বেশি সশয় দেয়া যায় তাহলে এ ব্যবসা আরও বড় হবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।’

এই যেমন বিডি কলিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ কর্মী কাজ করেন। যাদের অধিকাংশই কাজ করেন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইনে। কিন্তু এসব কাজের উপর এখন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপ না হলেও নতুন বাজেটে ২৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ হতে পারে।

তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, গার্মেন্টস শিল্পের মতো এ খাতকে বড় হতে দিলে একসময় এর সুবিধা পাবে সরকার। পাশাপাশি এমন সিদ্ধান্তে বৈধ পথে অর্থ আনতে অনুৎসাহিত হতে পারেন ফ্রি ল্যান্সাররা।

বিডি কলিং আইটি লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আগামী ১০ বছর যেন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি করমুক্ত থাকে। এর ফলে আমাদের গ্রোথটা চলমান থাকতো। তারপর অবশ্যই আমরা ট্যাক্স দিতে চাই। সরকার যখন এমন রেস্ট্রিকশন দেবে তখন অনেকেই এ ডলারটা বাংলাদেশে আনবে না।’

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, করের আওতা না বাড়ায় রাজস্ব আহরণের মূল চাপ পড়ে টেলিকম খাতের উপর। তাই সেবা না বাড়িয়ে টেলিকমে ভ্যাট বাড়ানো হবে অযৌক্তিক। পাশাপাশি আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতে ভ্যাট নির্ধারণের আগে খাতগুলো কীভাবে বড় হবে তার রোড ম্যাপ তৈরি করাই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট টার্গেট করে এগোতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করার লক্ষ্য থাকতে হবে। রাজস্ব বাড়াতে মাথায় রাখতে হবে যে কিছু খাতে কর অব্যাহতি দিতে হবে আর কিছু খাতে কর অব্যাহতি দেয়া যাবে না।’

দেশে ও বিদেশে আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতের ৩৪০ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি বাজার ১৮০ কোটি ডলারের। এ খাতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আইসিটি খাতে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি এবং ২০৩১ সাল নাগাদ আরও ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাজাটে টেলিকম খাতে খরচ বাড়বে গ্রাহকের

আপডেট সময় : ০১:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

বাজেটে টেলিকম খাতে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়লে ১০০ টাকার বিপরীতে জনগণকে গুণতে হবে প্রায় ৩৯ টাকা। আর এ বছর আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতের ২৭ ধরনের সেবা প্রথমবারের মতো করের আওতায় আসছে। দেশে এসব খাতের ব্যবসা এখনও শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়নি বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাই করমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।

সরকার যে কয়টি খাত থেকে আয় করে তার অন্যতম টেলিকম খাত। সরকারের রাজস্ব আয়ের মাত্র ৫ শতাংশ এখান থেকে এলেও জিডিপিতে এর অবদান ১ শতাংশ।

এক হিসেবে দেখা যায়, ১০০ টাকার বিপরীতে গ্রাহককে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ দিতে হয় প্রায় ৩৪ টাকা, আর ৩৯ থেকে ৪৪ টাকা দিতে হয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে। সবমিলে সরকারকে দিতে হয় ৭২ থেকে ৭৮ টাকা। নতুন করে এ বছর আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়লে খরচ আরো বাড়বে। এতে গ্রাহক ভ্যাটের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।

টেলিকম কোম্পানিগুলো বলছে, বাজেটে নতুন করা আরোপে তাদের আয় যেমন কমে তেমনি নতুন বিনিয়োগেও তারা হিমশিম খান। নতুন করে ভ্যাট আরও বাড়লে প্রভাব পড়বে টেলিকম খাতে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমাদের কনজ্যুমার ট্যাক্স যেটা ধরা করা হচ্ছে সেটা অনেক বেশি। এটা আমাদের এফোর্ট অ্যাবিলিটি কমিয়ে দিচ্ছে। এখানে ট্যাক্স কমিয়ে দিলে কনজামশন যদি বাড়ে তাহলে এর চেয়ে বেশি গ্রোথ পাওয়া যাবে।’

টেলিকম খাতে প্রতিবছর যে হারে কর আরোপ হচ্ছে, সেই করের বোঝা গিয়ে পড়ছে জনগণের ওপর। এবং নতুন করে বড় হওয়া আইসিটি সেক্টরে যদি কর আরোপ করা হয়, তাহলে ছোট ব্যবসায়ীরাও করের বোঝায় পড়ছেন। তবে আইসিটি সেক্টরে নতুন যে ব্যবসা চালু হয়েছে, সেটার ক্ষেত্রে যদি আরও বেশি সশয় দেয়া যায় তাহলে এ ব্যবসা আরও বড় হবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।’

এই যেমন বিডি কলিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ কর্মী কাজ করেন। যাদের অধিকাংশই কাজ করেন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইনে। কিন্তু এসব কাজের উপর এখন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপ না হলেও নতুন বাজেটে ২৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ হতে পারে।

তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, গার্মেন্টস শিল্পের মতো এ খাতকে বড় হতে দিলে একসময় এর সুবিধা পাবে সরকার। পাশাপাশি এমন সিদ্ধান্তে বৈধ পথে অর্থ আনতে অনুৎসাহিত হতে পারেন ফ্রি ল্যান্সাররা।

বিডি কলিং আইটি লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আগামী ১০ বছর যেন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি করমুক্ত থাকে। এর ফলে আমাদের গ্রোথটা চলমান থাকতো। তারপর অবশ্যই আমরা ট্যাক্স দিতে চাই। সরকার যখন এমন রেস্ট্রিকশন দেবে তখন অনেকেই এ ডলারটা বাংলাদেশে আনবে না।’

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, করের আওতা না বাড়ায় রাজস্ব আহরণের মূল চাপ পড়ে টেলিকম খাতের উপর। তাই সেবা না বাড়িয়ে টেলিকমে ভ্যাট বাড়ানো হবে অযৌক্তিক। পাশাপাশি আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতে ভ্যাট নির্ধারণের আগে খাতগুলো কীভাবে বড় হবে তার রোড ম্যাপ তৈরি করাই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট টার্গেট করে এগোতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করার লক্ষ্য থাকতে হবে। রাজস্ব বাড়াতে মাথায় রাখতে হবে যে কিছু খাতে কর অব্যাহতি দিতে হবে আর কিছু খাতে কর অব্যাহতি দেয়া যাবে না।’

দেশে ও বিদেশে আইটি, আইসিটি এবং আইটিইএস খাতের ৩৪০ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি বাজার ১৮০ কোটি ডলারের। এ খাতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আইসিটি খাতে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি এবং ২০৩১ সাল নাগাদ আরও ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।