হাটে কদর কমেছে অতি মোটাতাজা ও বড় গরুর
- আপডেট সময় : ১১:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
- / ৩৯৪ বার পড়া হয়েছে
কোরবানির হাটে কদর কমেছে অতি মোটাতাজা ও বড় আকৃতির গরুর। এর কারণ হিসেবে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করাকে দায়ী করছেন ব্যাপারীরা। এদিকে খামারে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় না বলে দাবি করেছে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা এসব প্রাণীর মাংস খেলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রাজধানীর হাটে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এখন টিভির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এমন দৃশ্য। গত কয়েক বছর ধরে এ কারণেই আকারে ছোট বা মাঝারি দেশি গরুর কদর বেড়েছে কোরবানির হাটে। ক্রেতারাও মনে করে বড় গরু মানেই কৃত্রিমভাবে মোটা করা হয়েছে।
একজন ক্রেতা বলেন, ‘গরুকে ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করালাম যে কী খাওয়াচ্ছেন। বলে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসা হয়েছে, এটা ব্যথার ওষুধ। একটু নজর রাখলেই দেখা যায় বড় গরুগুলোকে ইনজেকশন দেয়া হয়, ছোট গরুগুলোর ক্ষেত্রে আবার এ হার কম।’
এমন অবস্থায় অনেক খামারিই বিপাকে পড়েছেন। এই যেমন কুষ্টিয়া থেকে রাজধানীর বছিলা হাটে নিয়ে আসা কালো মানিক সবার দৃষ্টি কাড়লেও, কপালে চিন্তার ভাঁজ খামারি রমজান আলীর। রমজানের যত্নের যেন শেষ নেই কালো রঙের সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়ায় ষাঁড় গরুটির।
রমজান আলী বলেন, ‘যারা বড় ফার্ম দেয় তারা এ ইনজেকশন ব্যবহার করে। বিভিন্ন রকমের মেডিসিনও দেয়। কিন্তু আমরা শখ করে বাড়িতে পেলে থাকি, সেজন্য আমরা মেডিসিন ব্যবহার করি না।’
রমজানের মতো অনেক খামারি এখন বড় গরু এনে বিপাকে পড়েছেন। এজন্য একশ্রেণির খামারির অতি লোভকে দায়ী করছেন ব্যাপারীরা।
এদিকে খামারে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় না বলে দাবি করছেন এক খামারির। কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকা পশুর মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ খামার থেকে আসে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ‘যারা কম কম বোঝে বা না বুঝে এ পথ অবলম্বন করে। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করলে গরু অনেক কষ্ট পায়।’
চিকিৎসকরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা এসব প্রাণীর মাংস খেলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিএসএমএমইউয়ের সহযোগী অধ্যাপক যা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, ‘সবসময় স্টেরয়েড এক্সপোজড পশুর মাংস খেতে থাকলে এর প্রভাব মানব শরীরের পড়বে। মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, কোরবানির হাটে রুগ্ণ পশু শনাক্তে তৎপর রয়েছেন তারা। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘মানুষ যখন বুঝতে পেরেছে, তখন থেকে এ ধরনের গরু কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক খামারির গরু মারা যাওয়াতে তারাও এটা থেকে দূরে সরে আসছে। ক্রেতার সুবিধার জন্য প্রতিটি বাজারে আমরা মেডিকেল টিম করে দিয়েছি।’
কোরবানি কবুল হওয়ার অন্যত্যম শর্ত হলো প্রাণীর বয়স, সুস্থ বা নিরোগ হওয়া। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ বছর সারাদেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে সংখ্যায় সাড়ে চার লাখ বেশি।