ঢাকা ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঘর কিংবা হোটেলে কোথাও স্বস্তি নেই ভোক্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৪৩২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিত্যপণ্যের চড়া দামের প্রভাব পড়েছে খাবারের হোটেলে। বেশিরভাগ খাবারের দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। কোথাও কোথাও দাম না বাড়ালেও কমানো হচ্ছে খাবারের পরিমাণ। সব মিলিয়ে ঘর কিংবা হোটেল কোথাও স্বস্তি নেই ভোক্তাদের। মালিকরা বলছেন, অস্থির পণ্য বাজারের হোটেলে ক্রেতা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

বাজারদরের ঊর্ধ্বগতির সাথে পাল্লা দিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। জীবিকার তাগিদে অনেককেই রাস্তার সস্তা হোটেলে খেতে হয়। কিন্তু সেই সস্তার হোটেল আর সস্তার নেই। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর সব খাবারের দাম।

পাঁচ টাকার পরোটা দশ টাকা কিংবা ২০ টাকার নান রুটি হয়ে গেছে ২৫ টাকা। যে সব হোটেল মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন না, তারা কমিয়ে দিয়েছে খাবারের পরিমাণ। পুরি-সিঙ্গারা বা সমুচার মতো হালকা খাবারেও বাড়তি দাম। পাঁচ টাকার সিঙ্গারা হয়েছে দশ টাকা। ১০ টাকার কিমাপুরি ২৫ টাকা।

বিশেষত রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। আর এই অভিযোগ স্বীকার করে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, খাবারের দাম বাড়াতে তারা বাধ্য হয়েছেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ কমাতে ভালো মানের হোটেল ছেড়ে ফুটপাতের খাবারের দোকানের দিকে ছুটছেন ভোক্তারা। আর যারা খাচ্ছেন, তারাও ভাজি-ভর্তাসহ কম দামের খাবারের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে ছিন্নমূল বেশিরভাগ মানুষ ফুটপাতের খাবার খাচ্ছে।

রাজধানীর সদরঘাট, ঢাকা মেডিক্যাল, আজিমপুর, আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের অনেক স্থানে খাবারের দোকান রয়েছে। আবার অনেকে ঘুরে ঘুরে খাবার বিক্রি করছেন। এ সব দোকানে মানুষ ভিড় করে খাবার খাচ্ছেন। যারা খাবার খাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার খোলা রেস্তোরাঁর মালিক সাজ্জাদ জানান, সকালের নাশতার ৫ টাকার পরটা এখন ১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সবজি আগে ১০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা। ডিমের তরকারির দাম ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৫০ টাকা। আর পাঙ্গাস মাছের দামও ৭০ টাকা।

একই চিত্র বড় খাবারের দোকানেও। সেখানে খাবারের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে পরিমাণ। এ অবস্থায়, শখ করে রেস্তোরাঁয় যাওয়া কমিয়েছেন অনেকে। তবে হোটেল মালিকদের দোষ না দিয়ে ভোক্তাদের চাওয়া, নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানা হোক।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় বড় রেস্তোরাঁয় খেতে আসা এক ক্রেতা জানান, আগে তিনি মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেতেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কিন্তু এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকার নিচে খাওয়া যায় না।

আরেক ক্রেতার অভিযোগ, ২০ টাকার খাবার এখন ৪০ টাকা। মাসিক বেতন ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার হলে কিভাবে তিনি তাঁর চাহিদা মেটাবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় কমেছে বিক্রি। আগে ক্রেতারা একাধিক পদের খাবার খেলেও এখন এক তরকারিতেই প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসানকে রেস্তোরাঁর খাবারের দামের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, রেস্তোরাঁর খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে রেস্তোরাঁয় খেতে আসা ক্রেতার পরিমাণও কমেছে ৩০ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের প্রতি বাজারদর স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

হোটেল মালিকরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে তারাও খুশিমনে খাবার কিনতে পারছেন না, আর ক্রেতারাও খুশি মনে কাঙ্ক্ষিত দামে চাহিদা মেটাতে পারছেন না।

দেশে ছোট-বড় রেস্তোরাঁ প্রায় ৬০ হাজার। যার বেশির ভাগই ব্যবসা চালাতে বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি মালিক সমিতির।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঘর কিংবা হোটেলে কোথাও স্বস্তি নেই ভোক্তাদের

আপডেট সময় : ০৮:০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিত্যপণ্যের চড়া দামের প্রভাব পড়েছে খাবারের হোটেলে। বেশিরভাগ খাবারের দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। কোথাও কোথাও দাম না বাড়ালেও কমানো হচ্ছে খাবারের পরিমাণ। সব মিলিয়ে ঘর কিংবা হোটেল কোথাও স্বস্তি নেই ভোক্তাদের। মালিকরা বলছেন, অস্থির পণ্য বাজারের হোটেলে ক্রেতা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

বাজারদরের ঊর্ধ্বগতির সাথে পাল্লা দিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। জীবিকার তাগিদে অনেককেই রাস্তার সস্তা হোটেলে খেতে হয়। কিন্তু সেই সস্তার হোটেল আর সস্তার নেই। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর সব খাবারের দাম।

পাঁচ টাকার পরোটা দশ টাকা কিংবা ২০ টাকার নান রুটি হয়ে গেছে ২৫ টাকা। যে সব হোটেল মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন না, তারা কমিয়ে দিয়েছে খাবারের পরিমাণ। পুরি-সিঙ্গারা বা সমুচার মতো হালকা খাবারেও বাড়তি দাম। পাঁচ টাকার সিঙ্গারা হয়েছে দশ টাকা। ১০ টাকার কিমাপুরি ২৫ টাকা।

বিশেষত রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। আর এই অভিযোগ স্বীকার করে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, খাবারের দাম বাড়াতে তারা বাধ্য হয়েছেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ কমাতে ভালো মানের হোটেল ছেড়ে ফুটপাতের খাবারের দোকানের দিকে ছুটছেন ভোক্তারা। আর যারা খাচ্ছেন, তারাও ভাজি-ভর্তাসহ কম দামের খাবারের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে ছিন্নমূল বেশিরভাগ মানুষ ফুটপাতের খাবার খাচ্ছে।

রাজধানীর সদরঘাট, ঢাকা মেডিক্যাল, আজিমপুর, আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের অনেক স্থানে খাবারের দোকান রয়েছে। আবার অনেকে ঘুরে ঘুরে খাবার বিক্রি করছেন। এ সব দোকানে মানুষ ভিড় করে খাবার খাচ্ছেন। যারা খাবার খাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার খোলা রেস্তোরাঁর মালিক সাজ্জাদ জানান, সকালের নাশতার ৫ টাকার পরটা এখন ১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সবজি আগে ১০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা। ডিমের তরকারির দাম ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৫০ টাকা। আর পাঙ্গাস মাছের দামও ৭০ টাকা।

একই চিত্র বড় খাবারের দোকানেও। সেখানে খাবারের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে পরিমাণ। এ অবস্থায়, শখ করে রেস্তোরাঁয় যাওয়া কমিয়েছেন অনেকে। তবে হোটেল মালিকদের দোষ না দিয়ে ভোক্তাদের চাওয়া, নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানা হোক।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় বড় রেস্তোরাঁয় খেতে আসা এক ক্রেতা জানান, আগে তিনি মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেতেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কিন্তু এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকার নিচে খাওয়া যায় না।

আরেক ক্রেতার অভিযোগ, ২০ টাকার খাবার এখন ৪০ টাকা। মাসিক বেতন ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার হলে কিভাবে তিনি তাঁর চাহিদা মেটাবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় কমেছে বিক্রি। আগে ক্রেতারা একাধিক পদের খাবার খেলেও এখন এক তরকারিতেই প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসানকে রেস্তোরাঁর খাবারের দামের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, রেস্তোরাঁর খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে রেস্তোরাঁয় খেতে আসা ক্রেতার পরিমাণও কমেছে ৩০ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের প্রতি বাজারদর স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

হোটেল মালিকরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে তারাও খুশিমনে খাবার কিনতে পারছেন না, আর ক্রেতারাও খুশি মনে কাঙ্ক্ষিত দামে চাহিদা মেটাতে পারছেন না।

দেশে ছোট-বড় রেস্তোরাঁ প্রায় ৬০ হাজার। যার বেশির ভাগই ব্যবসা চালাতে বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি মালিক সমিতির।