০৯:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শতাধিক ফ্ল্যাট ও আবাসিক হোটেলের মালিক সাবেক ডিবি প্রধান হারুন

নামে বেনামে সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের নামে রাজধানীতে রয়েছে শতাধিক ফ্ল্যাট। পুলিশ সদরের রিপোর্ট বলছে, অন্তত ১৮টি স্থাবর সম্পত্তির মালিক এই হারুন অর রশিদ। এর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মার্কেট ও আবাসিক ভবন। অভিযোগ রয়েছে, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কৃষক পরিবারের এ পুলিশ কর্মকতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে লেকপাড়ের ৮ তলা ভবনে থাকতেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। ৩ আগস্টও এখানে ছিলেন তিনি। পুরো ভবনটিতে চাইনিজদের ভাড়া দিয়েছিলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এখন কোনো ভাড়াটিয়া নেই। সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওনারা টপ ফ্লোরে থাকেন। বিল্ডিংয়ের দুই ফ্লোর, দুইটা ফ্লোর আছে, উনারা এক ফ্লোর করে নিছেন। শেষ দিন তারা পৌনে ১২টার দিকে বের হন।’ এর পাশেই আরেকটি প্লট দখল করে আবাসিক হোটেল গড়ে তোলেন হারুন। পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, তাঁর পরিচালনাধীন প্রাইম কর্পোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি চালাত তাঁর কর্মচারী গাজীপুরের কাপাসিয়ার জাহাঙ্গীর হোসেন। ওই ভবনের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জানি হারুন সাহেব ওই বাসায় থাকেন। কারণ ওইখানে পুলিশ থাকত সবসময়।’

হারুনের উত্তরা, নিকুঞ্জ, বনানী ও মিরপুর এলাকার সকল প্রতিষ্ঠান দখল ও ভাড়া উঠত জাহাঙ্গীর ও হান্নানের নামে। উত্তরা রবীন্দ্র স্মরণী এলাকার ৪১ নম্বর প্লটটিও দখলের অভিযোগ আছে হারুনের নামে। এ প্লটটিতে বর্তমানে গাড়ির শো রুম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর ভাড়া প্রতি স্কয়ারফিট মাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ওই শো রুমের নথিপত্র দেখতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এইটা (কাগজ হাতে নিয়ে বলেন) আমার অফিস পারমিশন না দিলে তো আমি দিতে পারব না।’

ভাড়া উত্তোলনকারী জাহাঙ্গীরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরা ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘উনাকে আমি চানি না। কীভাবে চিনব আমি!’ অফিসের ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শো রুমের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের অফিস অপারেশন ডিপার্টমেন্ট জানে। এইটা আমাদের বিষয় না।’

বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরাতে হারুন ও জাহাঙ্গিরের নামে স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে অন্তত ১৮টি। এর মধ্যে আছে ৫ নম্বর সেক্টরে ৬ নম্বর রোডে প্রাইম কর্পোরেশনের গোডাউন। ৬ নম্বর সেক্টরে ৮ তলা ভবন, ৫ নম্বর সেক্টরে ৬ তলা ভবন। ৬ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর রোডে নির্মাণাধীন ৮ তলা ভবন। ১৪ নম্বর সেক্টরে ৯ শতকের প্লট। সোনারগাঁ জনপথ মোড়ে ১০ কাঠার প্লট। বসুন্ধরা আবাসিকে জে ব্লকে ৬ তলা বাড়ি। পুলিশ স্টাফ কলেজে পাশেও ফ্ল্যাট আছে তাঁর। এ সবই করেছেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তাকে আনলিমিটেড, আনঅ্যাকাউন্টেবল, জবাদিহিবিহীন ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছিল। তাঁর পদায়ের ফলে তিনি যে ক্ষমতা তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান তিনি হয়েছেন। এ দিয়ে তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের যে অন্যতম খুঁটি বা স্তম্ভ যতগুলো ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি (হারুন)।’

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হোসেনপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হারুন অর রশিদের বাবা, চাচা, ফুফাসহ সবাই কৃষিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলে তিনি ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।

যুদ্ধ ও সংঘাতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শতাধিক ফ্ল্যাট ও আবাসিক হোটেলের মালিক সাবেক ডিবি প্রধান হারুন

আপডেট : ০২:১০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

নামে বেনামে সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের নামে রাজধানীতে রয়েছে শতাধিক ফ্ল্যাট। পুলিশ সদরের রিপোর্ট বলছে, অন্তত ১৮টি স্থাবর সম্পত্তির মালিক এই হারুন অর রশিদ। এর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মার্কেট ও আবাসিক ভবন। অভিযোগ রয়েছে, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কৃষক পরিবারের এ পুলিশ কর্মকতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে লেকপাড়ের ৮ তলা ভবনে থাকতেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। ৩ আগস্টও এখানে ছিলেন তিনি। পুরো ভবনটিতে চাইনিজদের ভাড়া দিয়েছিলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এখন কোনো ভাড়াটিয়া নেই। সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওনারা টপ ফ্লোরে থাকেন। বিল্ডিংয়ের দুই ফ্লোর, দুইটা ফ্লোর আছে, উনারা এক ফ্লোর করে নিছেন। শেষ দিন তারা পৌনে ১২টার দিকে বের হন।’ এর পাশেই আরেকটি প্লট দখল করে আবাসিক হোটেল গড়ে তোলেন হারুন। পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, তাঁর পরিচালনাধীন প্রাইম কর্পোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি চালাত তাঁর কর্মচারী গাজীপুরের কাপাসিয়ার জাহাঙ্গীর হোসেন। ওই ভবনের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জানি হারুন সাহেব ওই বাসায় থাকেন। কারণ ওইখানে পুলিশ থাকত সবসময়।’

হারুনের উত্তরা, নিকুঞ্জ, বনানী ও মিরপুর এলাকার সকল প্রতিষ্ঠান দখল ও ভাড়া উঠত জাহাঙ্গীর ও হান্নানের নামে। উত্তরা রবীন্দ্র স্মরণী এলাকার ৪১ নম্বর প্লটটিও দখলের অভিযোগ আছে হারুনের নামে। এ প্লটটিতে বর্তমানে গাড়ির শো রুম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর ভাড়া প্রতি স্কয়ারফিট মাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ওই শো রুমের নথিপত্র দেখতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এইটা (কাগজ হাতে নিয়ে বলেন) আমার অফিস পারমিশন না দিলে তো আমি দিতে পারব না।’

ভাড়া উত্তোলনকারী জাহাঙ্গীরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরা ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘উনাকে আমি চানি না। কীভাবে চিনব আমি!’ অফিসের ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শো রুমের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের অফিস অপারেশন ডিপার্টমেন্ট জানে। এইটা আমাদের বিষয় না।’

বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরাতে হারুন ও জাহাঙ্গিরের নামে স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে অন্তত ১৮টি। এর মধ্যে আছে ৫ নম্বর সেক্টরে ৬ নম্বর রোডে প্রাইম কর্পোরেশনের গোডাউন। ৬ নম্বর সেক্টরে ৮ তলা ভবন, ৫ নম্বর সেক্টরে ৬ তলা ভবন। ৬ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর রোডে নির্মাণাধীন ৮ তলা ভবন। ১৪ নম্বর সেক্টরে ৯ শতকের প্লট। সোনারগাঁ জনপথ মোড়ে ১০ কাঠার প্লট। বসুন্ধরা আবাসিকে জে ব্লকে ৬ তলা বাড়ি। পুলিশ স্টাফ কলেজে পাশেও ফ্ল্যাট আছে তাঁর। এ সবই করেছেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তাকে আনলিমিটেড, আনঅ্যাকাউন্টেবল, জবাদিহিবিহীন ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছিল। তাঁর পদায়ের ফলে তিনি যে ক্ষমতা তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান তিনি হয়েছেন। এ দিয়ে তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের যে অন্যতম খুঁটি বা স্তম্ভ যতগুলো ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি (হারুন)।’

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হোসেনপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হারুন অর রশিদের বাবা, চাচা, ফুফাসহ সবাই কৃষিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলে তিনি ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।