০৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে গুমের সংস্কৃতি’

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১২:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪
  • ১৯ দেখেছেন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া অনেকেরই সন্ধান মেলেনি আজও। যারা ফিরেছেন তারা বয়ে বেড়াচ্ছেন দুঃসহ স্মৃতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করায় আশায় বুক বেঁধেছে গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবার। স্বজনরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে গুমের সংস্কৃতি।

অনেক চড়াই উতরাই পার করে জীবনের পড়ন্ত বেলায় রাশিদা বেগমের কান্নার্ত চোখের একটাই প্রার্থনা, ছেলে ঘরে ফিরুক, একটি বারের জন্য হলেও মা বলে ডাকুক।

রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের তো খারাপ কিছু জানি না আমি। আমার ছেলের একটাই দোষ, সেটা হচ্ছে রাজনীতি। আমার ছেলে কী বেঁচে আছে, না নাই সেটাই জানতে চাই। আমি আমার ছেলে সন্ধান চাই। প্রতিনিয়তই আমার মন বলে যে আমার সন্তান আসবে।’

২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনকে। সেই থেকেই অপেক্ষা তার মা রাশিদা বেগমের।

শুধু মা’ই না সুজনের অপেক্ষায় স্ত্রী তানজিলা আক্তার ও দুই সন্তান। ১০ বছরে বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনের না ফেরার বেদনা। বিরোধী মতের বলেই কি বিপন্ন হতে হলো তাদের? প্রশ্ন ছোড়েন তানজিলা।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বলে, ঈদের সময় সবাই বাবার সাথে মসজিদে যায়, আমি তো যেতে পারি না। মেয়েটা তো মানসিক রোগীর মতো হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো এটাই চলছে। বিএনপি’র রাজনীতি করলে, ওদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলছে তাদেরই তো উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের আর কোনো খবর নেই। তাদের গুম করা হয়েছে। এই গুমের সংস্কৃতি যেকোনোভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে।’

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে একই সময় নিখোঁজ হয় রাজধানীর সবুজবাগের মাহবুব হাসান সুজন ও কাজী ফরহাদ। সুজনকে যখন গুম করা হয় তখন তার সাথেই ছিলেন ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা কাজী ফরহাদ। পরিবার দু’টির অভিযোগ বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় তাদের।

গুম হয়ে যাওয়া ভাইয়ের খোঁজে নামেন বোন শিলা। ঘুরেছেন ক্ষমতাসীনদের দ্বারে, দ্বারে। তবে, ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। তবুও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাইকে ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন বোন।

শিলা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যাওয়া হয়েছে। সেসব জায়গায় তো আমাদের মতো মানুষ যাওয়া অনেক টাফ। আর আমি একজন নারী, আমি কতই বা কী আর জানি। তাদের দরজার কাছে পর্যন্ত দাঁড়ানো যায়নি। তারা রাজনীতি করতো সেজন্য গুম করা হয়েছে। আমার ভাইকে আমরা ফিরে চাই। আর কিছু চাই না আমরা।’

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া এমন ছয় শতাধিক পরিবার তাদের স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় আছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করার পাশাপাশি দেশিয় আইন সংস্কারের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কোনো নাগরিককে যেন সরকার বিরোধিতা করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করা হচ্ছে, ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের বাইরে কাজ করা হচ্ছে এসব বলে গুম করতে না পারে, তার জন্য এই কনভেনশনটা আমরা স্বাক্ষর করেছি। এবং এটার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আমরা গ্রহণ করবো। এই গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক কনভেনশন সই করার পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনও গঠন করেছে সরকার। তাই দীর্ঘদিনের গুম খুনের অবসান হবে বলছেন পরিবারগুলো।

বিশ্বমঞ্চে মাহফুজকে বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করালেন ড. ইউনূস

‘যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে গুমের সংস্কৃতি’

আপডেট : ১২:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া অনেকেরই সন্ধান মেলেনি আজও। যারা ফিরেছেন তারা বয়ে বেড়াচ্ছেন দুঃসহ স্মৃতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করায় আশায় বুক বেঁধেছে গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবার। স্বজনরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে গুমের সংস্কৃতি।

অনেক চড়াই উতরাই পার করে জীবনের পড়ন্ত বেলায় রাশিদা বেগমের কান্নার্ত চোখের একটাই প্রার্থনা, ছেলে ঘরে ফিরুক, একটি বারের জন্য হলেও মা বলে ডাকুক।

রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের তো খারাপ কিছু জানি না আমি। আমার ছেলের একটাই দোষ, সেটা হচ্ছে রাজনীতি। আমার ছেলে কী বেঁচে আছে, না নাই সেটাই জানতে চাই। আমি আমার ছেলে সন্ধান চাই। প্রতিনিয়তই আমার মন বলে যে আমার সন্তান আসবে।’

২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনকে। সেই থেকেই অপেক্ষা তার মা রাশিদা বেগমের।

শুধু মা’ই না সুজনের অপেক্ষায় স্ত্রী তানজিলা আক্তার ও দুই সন্তান। ১০ বছরে বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনের না ফেরার বেদনা। বিরোধী মতের বলেই কি বিপন্ন হতে হলো তাদের? প্রশ্ন ছোড়েন তানজিলা।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বলে, ঈদের সময় সবাই বাবার সাথে মসজিদে যায়, আমি তো যেতে পারি না। মেয়েটা তো মানসিক রোগীর মতো হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো এটাই চলছে। বিএনপি’র রাজনীতি করলে, ওদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলছে তাদেরই তো উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের আর কোনো খবর নেই। তাদের গুম করা হয়েছে। এই গুমের সংস্কৃতি যেকোনোভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে।’

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে একই সময় নিখোঁজ হয় রাজধানীর সবুজবাগের মাহবুব হাসান সুজন ও কাজী ফরহাদ। সুজনকে যখন গুম করা হয় তখন তার সাথেই ছিলেন ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা কাজী ফরহাদ। পরিবার দু’টির অভিযোগ বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় তাদের।

গুম হয়ে যাওয়া ভাইয়ের খোঁজে নামেন বোন শিলা। ঘুরেছেন ক্ষমতাসীনদের দ্বারে, দ্বারে। তবে, ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। তবুও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাইকে ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন বোন।

শিলা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যাওয়া হয়েছে। সেসব জায়গায় তো আমাদের মতো মানুষ যাওয়া অনেক টাফ। আর আমি একজন নারী, আমি কতই বা কী আর জানি। তাদের দরজার কাছে পর্যন্ত দাঁড়ানো যায়নি। তারা রাজনীতি করতো সেজন্য গুম করা হয়েছে। আমার ভাইকে আমরা ফিরে চাই। আর কিছু চাই না আমরা।’

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া এমন ছয় শতাধিক পরিবার তাদের স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় আছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করার পাশাপাশি দেশিয় আইন সংস্কারের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কোনো নাগরিককে যেন সরকার বিরোধিতা করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করা হচ্ছে, ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের বাইরে কাজ করা হচ্ছে এসব বলে গুম করতে না পারে, তার জন্য এই কনভেনশনটা আমরা স্বাক্ষর করেছি। এবং এটার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আমরা গ্রহণ করবো। এই গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক কনভেনশন সই করার পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনও গঠন করেছে সরকার। তাই দীর্ঘদিনের গুম খুনের অবসান হবে বলছেন পরিবারগুলো।