শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ: আল জাজিরা
- আপডেট সময় : ০৯:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আল জাজিরা জানায়, ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে প্রতিবেশী ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইসিটি। আইসিটির প্রধান কৌঁসুলি জানান, আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে তৎকালীন সরকার পরিচালিত ভয়াবহ সহিংসতার জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার পরিচালিত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে টানা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানের কারণে ঢাকা‑দিল্লি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, টানা ১৫ বছর বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিক্ষোভের সময় হওয়া সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য তাঁর বিচার চায় জনগণ। যেহেতু মূল অপরাধী পালিয়েছে, আমরা তাঁকে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করছি।’
তাজুল জানান, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি ২০১৩ সালে সই হয়েছে। সে সময় শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের মূল অভিযুক্ত যেহেতু তিনি, সেহেতু আমরা তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইনি পথে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার আইসিটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতেই আইসিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদের গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, আটকসহ বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় জুলাইজুড়ে চলা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘের প্রাথমিক হিসাবমতে, এই সময়ে ছয় শতাধিক মানুষ মারা যায়।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পটপরিবর্তনের পর শেখ হাসিনাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। ঢাকা তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জনপরিসরে আলোচনা চলছে।
তবে ভারতের সাথে থাকা বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো পক্ষ চাইলে অপরাধী প্রত্যর্পণের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে, যদি তার কাছে মনে হয়, আনীত অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন এটা স্পষ্ট করেছে যে, পলাতক নেতাকে বিচারের আওতায় আনতে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হবে।
অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও গত সপ্তাহে দেশে ফেরানোর আগ পর্যন্ত ভারতে পলাতক থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ থাকার কথা বলেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে ফেরত আনার আগ পর্যন্ত ভারত যদি তাঁকে রাখতে চায়, তবে শর্ত থাকবে যে, তিনি যেন চুপ থাকেন।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ভীষণ চাপে রয়েছে। বাংলাদেশের জনপরিসরে ভারত‑বিরোধী অবস্থান দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশে হাসিনার বিচার হতে হবে।
এমন নানামুখী চাপের মুখে এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় ভারত বেশ সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়েছে। কারণ, ঢাকা‑দিল্লি সম্পর্ক দিন দিন তিক্ত হচ্ছে।